সোমবার, ৩০ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


জালালউদ্দিন সাগর, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: জুন ৩০, ২০২৫, ০২:৩০ এএম

এক ইন্সপেকশনেই বছর পার!

জালালউদ্দিন সাগর, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: জুন ৩০, ২০২৫, ০২:৩০ এএম

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

চট্টগ্রামের বেসরকারি ক্লিনিকগুলোয় হরহামেশা রোগীর দুর্ভোগ ও চিকিৎসকের অবহেলায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ এবং ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। অথচ চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় এবং স্বাস্থ্য বিভাগের তদারকির ব্যবস্থা নেই বললেই চলে।

চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন উপজেলা এবং মহানগরীতে ১ হাজারের ওপরে অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থাকলেও তার কোনো তালিকা নেই সিভিল সার্জন কার্যালয়ে।

তথ্যানুসন্ধানে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে ৩২৯টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের যে তালিকা পাওয়া গেছে, সে তালিকার হালনাগাদ হয়েছে বছর তিনেক আগে। কোনো কোনো হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ২০২২ সালে রিনিউ আবেদন করলেও ২০২৫ সালে এসেও সেসব রিনিউ করেনি খোদ সিভিল সার্জন কার্যালয়।

শুধু তাই নয়, ২০২০ সালে করা অনুমোদনের জন্য নতুন আবেদন পত্রগুলো পড়ে আছে আমলাতন্ত্রের জটিলতায়। ৪ বছর পেরিয়ে গেলেও সে আবেদনপত্র এখনো ওয়েটিং ফর ইন্সপেকশনের (পরিদর্শন) তালিকায়। স্বাস্থ্য বিভাগের এ গাফিলতির সুযোগে অনুমোদন ও রিনিউয়ের অপেক্ষা না করেই দিব্যি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে সেসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার।

তবে তথ্যানসুন্ধান বলছে, ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা ছাড়া শুধু ব্যবসা করার জন্য চট্টগ্রাম নগরী ও উপজেলায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনুমোদন ও রিনিউ কার্যক্রম আটকে রেখে অবৈধভাবে কার্যক্রম চালানোর সুযোগ করে দেয় সিভিল সার্জন কার্যালয়ের অসাধু একটি চক্র।

ওয়েটিং ফর ইন্সপেকশনের (পরিদর্শন) সুযোগ নিয়ে বছরের পর বছর অনৈতিক আর্থিক সুবিধা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে সেই চক্রের বিরুদ্ধে। যদিও চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের বর্তমান সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলমের দাবি, গত দুই মাসে (মে-জুন) ‘ওয়েটিং ফর ইন্সপেকশন’র (পরিদর্শন) তালিকায় থাকা ৫৪টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ইন্সপেকশন সম্পন্ন করেছেন তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকটি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কর্মরত কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, আগের ইন্সপেকশন (পরিদর্শন) শেষ না হলেও রিনিউ করার জন্য প্রতিবছর আবেদন করতে হয় সিভিল সার্জন কার্যালয়ে। আবেদনের সময় সরকার নির্ধারিত ফির বাইরে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ উৎকোচ হিসেবে দিতে হয়। ফলে তারা কার্যক্রম চালানোর সুযোগ পান।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ে ওয়েটিং পর ইন্সপেকশন তালিকায় ৩২৯টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নাম রয়েছে। এর মধ্যে মহানগরীতে রয়েছে ১৬৫টি এবং বিভিন্ন উপজেলায় রয়েছে ১৬৪টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার।

ইন্সপেকশন তালিকায় থাকা মহানগরীর ১৬৫টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে নগরীর পাঁচলাইশ জোনে ৫৬টি, বায়েজিদ জোনে ১১টি, কোতোয়ালি জোনে ১৪, খুলশি জোনে ৯, পাহাড়তলী জোনে ১২, হালিশহর জোনে ১০, ডবলমুরিং জোনে ১৫, বন্দর জোনে ৮, চান্দগাঁও জোনে ১৮, পতেঙ্গা জোনে ৯ এবং চকবাজার জোনে ৩টি ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার। 

উপজেলা ও মহানগরীর ৩২৯টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে গত মে ও জুন মাসে ৫৪টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ইন্সপেকশন সম্পন্ন করার দাবি করা হলেও আশ্চর্যের বিষয় হলো বছরের মধ্যভাগে এসেও নগরী ও উপজেলার প্রায় ২৭৫টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ইন্সপেকশন সম্পন্ন করেনি সিভিল সার্জন কার্যালয়।

এর মধ্যে রয়েছে মাক্স হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সিএসসিআর, মেট্রোপলিটন হাসপাতাল, সেন্ট্রাল ক্লিনিক, লায়ন্স জেনারেল হাসপাতাল, এভারগ্রিন, পপুলার ডায়াগনস্টিক, ইপিক, ইবনেসিনা, ল্যাব এইড, পার্কভিউ, মেট্রোপলিটন ডায়াগনস্টিক, সিগমা ল্যাব, পার্কভিউ, মেট্রো ডায়াগনস্টিক, সেনসিভ, বেলভিউ, এভারকেয়ার, ইমপেরিয়াল হাসপাতাল, ন্যাশনাল হাসপাতাল, ট্রিটমেন্ট হাসপাতাল, সার্জিস্কোপ হাসপাতাল, সেনসিভ, রয়াল হসপিটাল।

মেডিকেল সেন্টার, হলি হেলথ, ডেল্টা হেলথ কেয়ার, ডক্টরস ল্যাব, ল্যাব ইন. ওয়েল কেয়ার, পিয়ারলেস ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মিরর হসপিটাল, এশিয়ান স্পেশিয়ালাইজড হাসপাতাল, সেবা ডায়াগনস্টিক, সেবা হসপিটাল, মা-মনি হসপিটাল, মেরিস্টোপ ক্লিনিক, সেন্ট্রাল সিটি হসপিটাল, চিটাগাং শিশু হসপিটাল, হেলথ পয়েন্ট, ডক্টরস ক্লিনিক, পিপলস হসপিটাল, মেডিকেয়ার হসপিটাল, সেফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কেয়ার ইনভেস্টিগেশন, মাউন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মেডিকেল সেন্টারসহ আরও অনেক। 

চট্টগ্রামে ছাতার মতো গড়ে ওঠা মানহীন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি বলে দাবি করেছেন চট্টগ্রাম বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিক সমিতির সভাপতি ডা. এ কে এম ফজলুল হক। তিনি বলেন, রোগীর দুর্ভোগ কমাতে হলে স্বাস্থ্য বিভাগের তদারকি বাড়ানো জরুরি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রামে বৈধ এবং অবৈধ প্রত্যেকটি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রতিবছর ইন্সপেকশন করা জরুরি। স্বাস্থ্য বিভাগ নিয়মিত পরিদর্শন করলে ছাতার মতো গড়ে ওঠা এসব ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ হয়ে যাবে। 

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি জয়েন করার পর নগরী ও উপজেলার ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোয় নিয়মিত ইন্সপেকশন করা হচ্ছে। মে ও জুন মাসে ৫৪টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ইন্সপেকশন সম্পন্ন করা হয়েছে। আগামী এক-দুই মাসের মধ্যে ওয়েটিং ফর ইন্সপেকশন লিস্টে থাকা ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো পরিদর্শন শেষ হয়ে যাবে।’ 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধে এরই মধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ হরা হয়েছে। অনুমোদন না থাকায় গত সপ্তাহে নগরীর একটি হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। 
 

Link copied!