রবিবার, ০৬ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ফিচার ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ৬, ২০২৫, ০৭:৫০ পিএম

সেকালে কেমন ছিল বাংলা অঞ্চলের মহররম

ফিচার ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ৬, ২০২৫, ০৭:৫০ পিএম

মহরম উপলক্ষে রাজধানীতে বের হয় তাজিয়া মিছিল।  ছবি- সংগৃহীত

মহরম উপলক্ষে রাজধানীতে বের হয় তাজিয়া মিছিল। ছবি- সংগৃহীত

আজ ১০ মহররম, পবিত্র আশুরা। বিশ্ব মুসলিমের ন্যায় বাংলাদেশেও এই দিনটি ধর্মীয় ভাবগম্ভীরতা ও শোকাবহ পরিবেশে পালিত হচ্ছে। তবে ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, মহররম শুধু শোকের দিনই নয়, বাংলার জনজীবনে এটি ছিল একসময় অন্যতম সর্বজনীন উৎসব- যেখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ অংশগ্রহণ করত। কারবালার মর্মন্তুদ ঘটনার স্মরণে গড়ে ওঠা এই উৎসব একসময় হয়ে উঠেছিল শোক, ঐক্য, দান ও সামাজিক সংহতির মিলনমেলা।

মোঘল আমলে মহররমের সূচনা

বাংলায় মহররম উদ্‌যাপনের ইতিহাস খুঁজলে যেতে হয় সপ্তদশ শতকে। মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব ১৬৬৫ সালে নদীপথে বাংলা সফরে এসে রাজশাহীর শাহ মখদুম (র.)–এর মাজারে যাত্রাবিরতি করেন। সেখানে মাজারের খাদেমদের অনুরোধ করেন তার ইতিহাস লেখার জন্য। ফারসি ভাষায় রচিত সেই গ্রন্থে মহররম উপলক্ষে মাজারে মাতম, আলোকসজ্জা, মর্সিয়া পাঠ, নহবত ও দান-খয়রাতের বিবরণ পাওয়া যায়। পরে এই বইটি বাংলায় ‘হযরত শাহ মখদুম রূপোশ (রহ.)-এর জীবনেতিহাস’ নামে অনূদিত হয়।

সেই সময় নারীদের জন্য আলাদা মাতম আয়োজন ছিল, যেখানে পুরুষদের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকত প্রচলিত কালো পোশাক, সেকালে শোকের প্রতীক হিসেবে সবুজ রং ব্যবহৃত হতো।

ব্রিটিশ আমলে মহররম

ব্রিটিশ আমলেও বাংলায় মহররম এক বিশেষ সামাজিক উৎসবে পরিণত হয়েছিল। ঢাকার তৎকালীন সিভিল সার্জন জেমস টেলর তার ‘ঢাকার ভূ-প্রকৃতি’ (১৮৪০) গ্রন্থে ঢাকার প্রধান ধর্মীয় উৎসব হিসেবে মহররমের কথা উল্লেখ করেন।

একইভাবে আইনজীবী হৃদয়নাথ মজুমদার তার আত্মজীবনীতে ঢাকার সবচেয়ে বড় উৎসব হিসেবে মহররমের কথা লিখেছেন- ঈদ বা দুর্গাপূজার নাম না নিয়ে।

ঢাকায় ঊনবিংশ শতাব্দীর একটি মহরম মিছিল।

পুরান ঢাকার মহররম

পুরান ঢাকার হোসেনি দালান মহররম উদ্‌যাপনের কেন্দ্রবিন্দু। অধ্যাপক আহমদ হাসান দানী ও হাকিম আহসানসহ বিভিন্ন উর্দু পত্রিকার বিবরণ অনুযায়ী, মহররমের প্রথম তিন দিন মোমবাতি প্রজ্বালন, চতুর্থ দিনে মর্সিয়া পাঠ, পঞ্চম-ষষ্ঠ দিনে ভিস্তিদের লাঠিখেলা, সপ্তম দিনে মিছিল, অষ্টমে নারীদের মাতম, নবমে রঙিন তাজিয়ার মিছিল এবং দশম দিনে আজিমপুরের হুসাইনাবাদে সমাবেশ- এসবই ছিল ঢাকাবাসীর দীর্ঘদিনের উৎসব-পরম্পরা।

তাজিয়া নয়, লাঠিখেলা—বাংলার মুহুররমের অনন্য এক রূপ।

বাংলাজুড়ে মহররম

মহররম শুধু ঢাকাতেই নয়, ছড়িয়ে ছিল পুরো বাংলায়। দেখা যেত দেশজুড়ে মহররমের আয়োজন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: কবি আল মাহমুদ তার স্মৃতিচারণে লিখেছেন- মহররম মানেই ছিল লাঠিখেলার ধুম। ঢোলের তালে গ্রাম্য যুবকদের লাঠিখেলা হয়ে উঠত কারবালার স্মৃতির প্রতীক।

চট্টগ্রাম: মহররমের দিনে ‘চুয়া খেলা’ নামের বারুদের খেলায় মেতে উঠত চট্টগ্রামের মানুষ। বাঁশের চোঙে বারুদ ভরে প্রতিযোগিতামূলকভাবে তা নিক্ষেপ করা হতো। ভয়ংকর হলেও জনপ্রিয় ছিল খেলাটি, যা আজ বিলুপ্তপ্রায়।

বরিশাল: কবি সুফিয়া কামাল তার স্মৃতিচারণে তুলে ধরেছেন- নবাববাড়ির মহররমে কোরআন তেলাওয়াত, জারি গান, পুঁথি পাঠ, খিচুড়ি ও শরবতের আয়োজন- সব মিলিয়ে যেন এক মিলনমেলা।

ময়মনসিংহ: রাজনীতিবিদ আবুল মনসুর আহমদ লিখেছেন, মহররম মানেই ছিল মেহমানদারি ও দান-খয়রাত। ধনী-গরিব সবাই মিলেমিশে পালন করত দিনটি।

ব্রিটিশ ভারতের মহররম পোস্টকার্ডগুলো তাজিয়া-মিছিলেই সীমাবদ্ধ।

কলকাতায় মহররম

কলকাতার মহররমও ছিল জমকালো ও বহুধর্মীয় অংশগ্রহণে ভরপুর। কথাশিল্পী আবু রুশদ ও জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান তাদের আত্মজীবনীতে লিখেছেন- তাজিয়া মিছিল, দুলদুল ঘোড়া, শরবত-খিচুড়ির আয়োজনের কথা। শৈশবের স্মৃতিতে মহররম ছিল রঙিন ও আবেগঘন এক উৎসব।

শিল্পীর চোখে সেকালে পুরান ঢাকার মহররম। ছবি: বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, শিল্পী: নাজমা খান মজলিস

সমাজে মহররমের ভূমিকা

কারবালার শোকের স্মৃতি নিয়ে মহররম বাংলায় কেবল শোকাবহ আয়োজনেই সীমাবদ্ধ ছিল না। বরং এটি হয়ে উঠেছিল দান, সংহতি ও সংস্কৃতির উৎসব। সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণ, গরিবদের দান ও ধর্মীয় মিলনের এ আয়োজন বাংলার সংস্কৃতিতে এক অনন্য নজির হয়ে আছে।

আজও পুরান ঢাকায় মহররম পালিত হয় আলো, মাতম, তাজিয়া মিছিল আর খিচুড়ির সুবাসে। তবে এক সময় বাংলাজুড়ে যে সর্বজনীন মহররম উদ্‌যাপন হতো, কালের স্রোতে তার অনেকটাই আজ বিলুপ্তপ্রায়। তারপরও ইতিহাসে মহররম রয়ে গেছে বাংলার সংস্কৃতির একটি ঐতিহ্যমণ্ডিত অধ্যায় হিসেবে।

Shera Lather
Link copied!