আগামী নভেম্বর ও ডিসেম্বরের আগে বাংলাদেশের সামনে আর টেস্ট সিরিজ নেই। ভবিষ্যৎ ক্রিকেট সূচি অনুযায়ী, চলতি বছরের শেষের দিকে বাংলাদেশ সফরে আসবে আয়ারল্যান্ড ক্রিকেট দল। এই সফরে দুটি টেস্ট, তিনটি ওয়ানডে ও তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের সিরিজ খেলার কথা তাদের। আয়ারল্যান্ড সিরিজের পর আগামী বছরের মার্চে আইসিসি বিশ^ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ হিসেবে পাকিস্তান সফরে গিয়ে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ড ও পাকিস্তান সিরিজের আগে যদি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) অন্য কোনো দেশের বিপক্ষে সিরিজ আয়োজন করার সুযোগ করে দিতে পারে টাইগারদের, তাহলে টেস্ট ক্রিকেটে কিছুটা আগেভাগেই মাঠে ফিরবেন ক্রিকেটাররা। তবে বর্তমানে বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট দলের অধিনায়কের পদটি শূন্য। কারণ, গত জুনে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই টেস্ট সিরিজ খেলার পর অধিনায়কের দায়িত্ব স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তার জায়গায় এখন টেস্ট দলের জন্য নতুন অধিনায়ক খুঁজছে বিসিবি।
টেস্ট দলের অধিনায়কের আলোচনার অগ্রভাগে রয়েছে তাইজুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজ ও লিটন কুমারের নাম। ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মিরাজ আর টি-টোয়েন্টি দলের নেতৃত্বে আছেন লিটন। যেহেতু তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটে তিন অধিনায়কের যুগে আবার ফিরে গেছে বাংলাদেশ, সে ক্ষেত্রে টেস্ট দলের অধিনায়ক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে দলের সিনিয়র ক্রিকেটার তাইজুল ইসলামেরই বেশি। যদিও এরই মধ্যে টেস্ট দলের অধিনায়ক হওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তাইজুল। কিন্তু এই অভিজ্ঞ স্পিনারের কোনো পর্যায়ের ক্রিকেটে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা নেই। অবশ্য সুযোগ পেলে দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত বলে সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন তিনি। বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়কের দায়িত্ব প্রসঙ্গে তাইজুল বলেন, ‘আমি মনে করি, অধিনায়ককে সময় দেওয়া উচিত। আমরা যদি অধিনায়কের ওপর বিশ^াস রাখি, তাহলে দল ভালো খেলবে। (যদি নেতৃত্ব দেওয়া হয়) আমি এটা করতে পারব না, তা তো নয়; কারণ আমার অভিজ্ঞতা আছে এবং এমন কিছু নেই যে আমি করতে পারব না।’ তিনি আর বলেন, ‘এর মানে এই নয় যে, আমি এর জন্য (অধিনায়কত্ব) লোভী। এটা লাভজনক কোনো বিষয় নয়। অধিনায়কের একটা চিন্তা থাকা উচিত যে, দুই বছর পর সে তার দলকে কোথায় দেখতে চায়। যাকে অধিনায়কত্ব দেওয়া হবে, তার মধ্যে সেই চিন্তাটা আছে কি না, সেটা টিম ম্যানেজম্যান্ট এবং দলের কর্তাদের মাথায় রাখা উচিত।’ যদি টেস্ট দলের সুযোগ আসে, তাহলে অধিনায়কের দায়িত্ব নেবেন কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে তাইজুল বলেন, ‘যদি সুযোগ আসে, কেন নয়? আমার মতে, প্রত্যেক অধিনায়কের একটি দৃষ্টিভঙ্গি থাকে, তিনি দলকে কোন অবস্থানে দেখতে চান। আমি কেমন দল চাই এবং দুই বছর পর দলকে কোথায় দেখতে চাই, সেই লক্ষ্যটা ঠিক করা গুরুত্বপূর্ণ।’
এদিকে, বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক অন্তত দুই বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন সাবেক অধিনায়ক ও নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন। তিনি জানান, ‘প্রথম কথা হচ্ছে, আমি যাকে অধিনায়কত্ব দেব, তাকে অন্তত দুই বছরের জন্য দেব। সুতরাং যাকেই দিই, সেটা একটু চিন্তা-ভাবনা করে দেব। অধিনায়কত্ব কিন্তু পরীক্ষার জায়গা নয়। অধিনায়ক হওয়ার পর একটু লম্বা সময় পেলে সে দলটাকে নিয়ে পরিকল্পনা করতে পারবে। দলের সবার জানা দরকার, সে আমাদের অধিনায়ক। অল্প সময়ের জন্য যাকেই অধিনায়কত্ব দিই, সেটা ভালো হবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘অধিনায়ক হওয়ার দৌড়ে আমাদের বেশ কয়েকজনই আছে। মিরাজ একজন, লিটন একজন, তাইজুলও নিয়মিত টেস্ট খেলে। আমার মনে হয়, যাকেই অধিনায়কত্ব দিই, খুব বেশি পার্থক্য হবে না। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, যে-ই অধিনায়কত্ব পাবে, তাকে যেন লম্বা সময়ের জন্য দেওয়া হয়। চিন্তা-ভাবনাটা যেন এমন থাকে। এমন না যে কাউকে আনলাম, তারপর দেখলামÑ ভালো না করলে আবার পরিবর্তন করে দিলাম। আমরা যেন এভাবে না ভাবি।’ টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ এখনো বড় দল হয়ে ওঠেনি। বেশির ভাগ ম্যাচেই হতাশার গল্প রচিত হয়। তাই এই ফরম্যাটের ক্রিকেটে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করাটা খুবই চ্যালেঞ্জিং। টেস্টে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল অধিনায়কের নাজমুল হোসেন শান্ত। তার নেতৃত্বে ১৪টি ম্যাচ খেলে ৪টি জয় ও ১টি ড্র করেছে বাংলাদেশ। বাকি ৯টি ম্যাচে হারের রেকর্ড। তার পরেরই অবস্থানে আছেন সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশ দলকে ১৯টি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে ৪টি জয় এনে দেন তিনি। বাকি ১৫টি ম্যাচে হারের রেকর্ড। এ ছাড়া মুশফিকুর রহিমের অধিনায়কত্বে ৩৪টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ৭টি জয় ও ৯টি ম্যাচ ড্র হয়েছে। বাকি ১৮টি ম্যাচেই হেরেছে টাইগাররা।