বাংলাদেশে বিগত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন-দশম, একাদশ ও দ্বাদশ-ভোটারদের অংশগ্রহণ নিয়ে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ তথ্যমতে, ওই নির্বাচনগুলোতে অন্তত ২০ লাখের বেশি মৃত ব্যক্তি ভোটার তালিকায় থেকে ভোট দিয়েছেন! এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছেন বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসিরউদ্দিন।
তিনি এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আমাদের ধারণার বাইরে ছিল মৃত ভোটারদের সংখ্যা। এটা ২০ লাখেরও বেশি। এই মন্তব্যের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের মধ্যে দেখা দিয়েছে নতুন প্রত্যাশা।
নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, নবম সংসদ-পরবর্তী দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রায় ১২ কোটির বেশি ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। এর মধ্যে সাড়ে ৪ কোটির বেশি নতুন ভোটার ছিলেন, যাদের নাম তালিকায় থাকলেও তারা কোনো নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাননি।
তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০০৮ সালের পর থেকে দেশে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছেন। কিন্তু তারা ভোট দেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন রাজনৈতিক বৈরিতার কারণে।
বিএনপি ও জামায়াতসহ বিরোধী দলবিহীন দশম (২০১৪) ও দ্বাদশ (২০২4) সংসদ নির্বাচন ভোটারবিহীন বলে অভিযোগ রয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ওই নির্বাচন দুটিতে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৫ শতাংশের নিচে। অথচ নির্বাচন কমিশন দেখিয়েছে ৪০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে। সাবেক ইসি সচিব জাহাংগীর আলমও দ্বাদশ নির্বাচন পরবর্তী এক বক্তব্যে বলেন, “৫ শতাংশের বেশি ভোট পড়েনি।
একাদশ সংসদ (২০১৮) ছিল আরেকটি বিতর্কিত নির্বাচন। ভোটগ্রহণের আগের রাতেই ব্যালট বাক্স ভর্তি হওয়ার অভিযোগ ওঠে। সকালবেলা ভোট দিতে যাওয়া অনেক ভোটারকে জানানো হয়, তাদের ভোট আগেই হয়ে গেছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট কথিত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক পরিবেশে পরিবর্তন আসে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি) হালনাগাদ ভোটার তালিকার উদ্যোগ নেয়। তারা দীর্ঘদিন পর আবারো বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ শুরু করে।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪ মার্চ পর্যন্ত হালনাগাদ কর্মসূচিতে ৬০ লাখ নাগরিক ফরম পূরণ করেন। ২৩ মার্চ পর্যন্ত প্রায় ৫০ লাখের বেশি নাগরিক নিবন্ধিত হয়েছেন, যাদের মধ্যে নতুন ভোটার ১২ লাখ ৮৮ হাজার এবং বাদ পড়া পুনর্নিবন্ধিত ভোটার ৩৫ লাখ ৯৪ হাজার।
সিইসি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আমরা নির্ভুল ভোটার তালিকা তৈরির পথে রয়েছি। তরুণ ও পুরোনো-সবাই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।
নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে নতুন প্রজন্মের প্রায় সাড়ে ৪ কোটি ভোটার বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠবে। তারা শুধুমাত্র সংখ্যায় বড় নন, বরং তারা সচেতন, তথ্যপ্রযুক্তি-জ্ঞানসম্পন্ন এবং পরিবর্তনে আগ্রহী।
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগামী নির্বাচন হবে উৎসবমুখর ও অংশগ্রহণমূলক। মৃত ভোটারদের বাদ দিয়ে, নতুনদের তালিকাভুক্ত করে একটি নির্ভুল ভোটার তালিকা তৈরির কাজ চলছে।
স্থানীয় সংস্কার কমিশনের আহ্বায়ক ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ একটি গণমাধ্যমকে বলেন, বিগত তিনটি নির্বাচন ছিল প্রহসনের। তবে এবার যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তাতে করে বলা যায়-মানুষ এবার ভোট কেন্দ্রে যাবে। একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রত্যক্ষ করার সম্ভাবনা আছে।
আপনার মতামত লিখুন :