আজ ১৬ জুলাই। ঠিক এক বছর আগে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মিছিলে পুলিশের গুলিতে শহিদ হয়েছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। এ দিন তার রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। আর ব্যথায় কেঁপে উঠেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সহপাঠীদের হৃদয়।
সেদিনের স্মৃতি আজও ভুলতে পারেননি অনেকেই। সে সময় উপস্থিত থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক উমর ফারুক বলেন, ‘১৬ জুলাইয়ের সেদিনের মুহূর্ত এখনো চোখে ভাসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের লাশের পাশে তাদের সহপাঠীদের আর্তনাদ—এটা ভুলবার মতো নয়। এই স্মৃতি আরও বহু বছর চোখে ভাসবে।’
সে সময় মিছিলের নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থী ফারিদ ইসলাম বলেন, ‘এমন মুহূর্ত যেন আর কখনোই না আসে। সহপাঠীকে হারানোর শোক আমাদের এখনো অনেক পীড়া দেয়।’
সেদিনের স্মৃতিচারণ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও পুলিশের গুলিতে আহত হওয়া শিক্ষার্থী তৌহিদুর ইসলাম তুহিন বলেন, ‘এটি এমন একটি তারিখ, যা আমি কখনোই ভুলতে পারব না। সেই বিভীষিকাময় দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো শিউরে উঠে গা। চোখের কোণে অজান্তেই জমে যায় অশ্রু।’
তিনি আরও বলেন, ‘চোখের সামনে ভেসে উঠে আবু সাঈদের মুখখানা, আরও ভেসে উঠে শত শত ছাত্রের আত্মচিৎকার, রংপুর মেডিকেলের ৬ নম্বর ওয়ার্ড, আমার রক্তে ভেজা শার্ট, প্রশাসনের অমানবিক পাশবিকতা।’
২০২৪ সালের ১৬ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের অংশ হিসেবে বেরোবি শিক্ষার্থীরা রংপুর শহরে মিছিল বের করেন। শহরের লালবাগ, খামার মোড় পেরিয়ে বেলা ১২টায় চারতলা মোড়ে এসে যুক্ত হয় কারমাইকেল কলেজসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মিছিল। শিক্ষার্থীদের মিছিল যখন শক্তি নিয়ে এগোচ্ছিল, তখন নগরের পার্কের মোড়ে গিয়ে পুলিশের ব্যারিকেডে আটকা পড়ে।
সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ী, দুপুর ২টা ১২ মিনিটে পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এরপরও আবু সাঈদ পিছু না হটে দুই হাত প্রশস্ত করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পুলিশের ১৪.২ মিটার দূর থেকে ছোড়া শটগানের গুলি আঘাত করে তার বুকে, পেটে ও মুখে। রক্তাক্ত আবু সাঈদ রাস্তার ডিভাইডারের পাশে পড়ে যান।
সহপাঠীরা তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে সেখানেই আবু সাঈদকে মৃত ঘোষণা করা হয়। লাশ নিয়েই শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়মুখী মিছিল করে। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে তারা এগিয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত পুলিশের হাতেই চলে যায় আবু সাঈদের মরদেহ।