ঢাকা শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

শিক্ষকদের জন্য বিশেষ ভাতার সুপারিশ

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৫, ০৯:০০ এএম
টাকা । ছবি- সংগৃহীত

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী ও গবেষকদের জন্য নতুন বেতন কাঠামোতে বিশেষ ভাতার সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় পে কমিশন।

মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) কমিশনের দ্বিতীয় সভায় সর্বসম্মতভাবে এ সিদ্ধান্ত হয়।

কমিশনের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এসব পেশায় মেধাবীদের আগ্রহ কমে যাওয়ায় দক্ষতার ঘাটতি তৈরি হচ্ছে এবং উদ্ভাবনেও দেশ পিছিয়ে পড়ছে। এজন্য বিশেষ ইনসেনটিভ হিসেবে ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হচ্ছে। গবেষণায় যুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরাও এ সুবিধা পাবেন।

তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনী ও বিচার বিভাগের আলাদা বেতন কাঠামো থাকলেও তারা অতিরিক্ত ভাতা পান। সে বিবেচনায় চিকিৎসা, প্রকৌশল, গবেষণা ও উদ্ভাবন খাতে মেধাবীদের ধরে রাখতে এ প্রণোদনা দেওয়া জরুরি।

তিনি আরও বলেন, ‘সশস্ত্র বাহিনী ও বিচার বিভাগের বিচারকদের বেতন কাঠামো আলাদা হলেও তা জাতীয় বেতন কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা অতিরিক্ত ভাতা পান। সে বিবেচনায় চিকিৎসা, প্রকৌশল, গবেষণা ও উদ্ভাবনী পেশায় মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে এ বিশেষ ভাতার সুপারিশ করা হচ্ছে।’

কমিশনের ওই সদস্য জানান, তাদের প্রতিবেদনে সরকারি ও বেসরকারি খাতের মধ্যে বেতন-ভাতা ও কর আরোপের বৈষম্য দূর করার চেষ্টা থাকবে। সরকারি চাকরিজীবীদের অনেক ভাতা ও আয় করমুক্ত থাকলেও বেসরকারি খাতে কর্মরতদের ক্ষেত্রে এসব ভাতার উপর কর আরোপিত হয়। এ বৈষম্য দূর করার জন্যই সরকারের কাছে সুপারিশ করবে কমিশন।

তিনি আরও জানান, নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণের ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের মতামতও নেওয়া হবে। নির্দিষ্ট প্রশ্নমালা তৈরি করে জরিপ পদ্ধতিতে এসব মতামত সংগ্রহ করা হবে।

তিনি বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা থাকলেও তা নাও হতে পারে। তবে ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের আগেই আমরা প্রতিবেদন জমা দেবো। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের কাছেই এই প্রতিবেদন যাবে।

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণে গত ২৪ জুলাই সরকার জাতীয় পে কমিশন গঠন করে। সাবেক অর্থসচিব ও পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খানের নেতৃত্বে গঠিত এ কমিশনকে ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

কমিশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন বেতন কাঠামো প্রণয়নে সামষ্টিক অর্থনৈতিক তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের উপর জোর দিচ্ছে কমিশন। এ জন্য ভবিষ্যৎ সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রস্তুতের দায়িত্ব অর্থ মন্ত্রণালয়কে দেওয়া হয়েছে। চলতি সেপ্টেম্বরের মধ্যেই প্রতিবেদনটি কমিশনের হাতে আসবে।

এছাড়া সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানের বর্তমান ও অনুমোদিত জনবল, বেতন-ভাতা, পেনশন এবং রাজস্ব আহরণ পরিস্থিতি সম্পর্কিত তথ্য চেয়ে মন্ত্রণালয়গুলোকে চিঠি দিয়েছে কমিশন।

বর্তমানে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের পে স্কেল অনুসারে প্রায় ১৫ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী বেতন-ভাতা পান। সামরিক বাহিনী, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যুক্ত করলে মোট সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ২৪ লাখ।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে মহার্ঘ ভাতা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি থেকে তা চালুর জন্য কমিটি কাজ শুরু করলেও সমালোচনার মুখে সরকার পিছিয়ে যায়। পরবর্তীতে চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ১০ শতাংশ বিশেষ সুবিধা ঘোষণা করে অর্থ মন্ত্রণালয়।

২০২৫-২৬ অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতায় বরাদ্দ করা হয়েছে ৮৪ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা। এর আগে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ ছিল ৮২ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা।