আকাশে হালকা মেঘ, গুমট আবহাওয়া। এমন এক সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেট থেকে হঠাৎ ভেসে এলো জনপ্রিয় গান- ‘আতর গোলাপ শুয়া চন্দন, সাজাইলাম ফুল-বিছানা, অভাগীর বাসরে বন্ধু কেন আইলানা’। কিছুটা এগিয়ে দেখা গেল, গান গাইছেন কাজী শফিউল কালাম ও তার বন্ধুরা। পরিচিত নাম ‘কেএসকে হৃদয়’। তিনি রাকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে প্রার্থী। গানের সুরে ও তালে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণ করে চাইছেন ভোট।
শুধু হৃদয়ই নয়, অভিনব সাজে প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে ছাত্রশিবির মনোনীত প্যানেলের সাংস্কৃতিক সম্পাদক প্রার্থী জাহিদ হাসান জোহাকেও। লুঙ্গি, গেঞ্জি, কাঁধে গামছা ও মাথায় মাথাল পরে তিনি হাজির হয়েছেন পরিবহন মার্কেটে। তিনি সুর করে বলছেন, ‘নানা রাকসু নির্বাচনে এই কথা রাইখো মনে, জোহা ভাই পাঁচ নম্বর ব্যালটে, সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে, জিতাইয়ো বিপুল ভোটে।’ নির্বাচনী প্রচারে নতুনত্ব আনতেই এমন কৌশল বেছে নিয়েছেন তিনি।
এদিকে ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের এজিএস প্রার্থী জাহীন বিশ্বাস এষা ব্যালট নম্বর ৫-এর সঙ্গে মিল রেখে বানিয়েছেন একটি বিশাল ‘পাঁচ আঙুল’ আকৃতির প্রচারপত্র। মোটা কাগজে তৈরি এই হাতে প্রতিটি আঙুলে লেখা আছে তার পাঁচটি প্রতিশ্রুতি। এটি দিয়ে তিনি শিক্ষার্থীদের কাছে সহজেই তার বার্তা পৌঁছে দিতে পারছেন।
মিডিয়া ও প্রকাশনা বিষয়ক সহকারী সম্পাদক পদে প্রার্থী মুনান হাওলাদারও প্রচারে এনেছেন সৃজনশীলতা। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এই শিক্ষার্থী তার প্রচারপত্র সাজিয়েছেন একটি দৈনিক পত্রিকার ন্যায়। প্রচারপত্রের শিরোনাম করেছেন ‘দৈনিক রাকসু’, যেখানে নিউজলেটার স্টাইলে তুলে ধরা হয়েছে তার পরিচিতি, কাজের অভিজ্ঞতা ও পরিকল্পনা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রার্থীদের প্রচারণায় দেখা গেছে অভিনবতা। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন মুখে কাপড় বেঁধে ডাকাতের মতো এগিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এগিয়ে গিয়ে তারা পকেট থেকে বের করেন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য পদপ্রার্থী হাবিব হিমেলের প্রচারপত্র। হাবিবুর রহমান ওরফে হাবিব হিমেল এই অভিনব ভিডিও দিয়ে শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেট, আমতলা, বিজ্ঞান ভবন, চারুকলা ও টুকিটাকিসহ ক্যাম্পাসের ব্যস্ত এলাকায় প্রার্থীরা এসব ব্যতিক্রমধর্মী পদ্ধতিতে প্রচারণা চালাচ্ছেন। কেউ দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি, কেউ শোনছেন শিক্ষার্থীদের মতামত, আবার কেউ তুলে ধরছেন তাদের অতীত কর্মকাণ্ড।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, দীর্ঘ ৩৫ বছর পর রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় পুরো ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন সব প্রার্থী ও ভোটার। মনে হচ্ছে ঈদের মতো আনন্দ ছড়িয়ে পড়েছে ক্যাম্পাসজুড়ে।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আফরিন সেবা বলেন, ‘আমাদের মনে শঙ্কা ছিল, রাকসু নির্বাচন হবে না। কিন্তু সব শঙ্কা দূর করে এবার নির্বাচন হচ্ছে- এতেই আমি আনন্দিত। মনে হচ্ছে ঈদের মতো কিছু একটা আসছে। আমি ভোট দেব- এই ভাবনায়ও ভালো লাগছে।’