শোবিজের উজ্জ্বল আলো ঝলমলে পর্দার পেছনে এক অন্ধকার অভিজ্ঞতার কথা জানালেন কিংবদন্তি অভিনেত্রী ডলি জহুর। দীর্ঘ অভিনয়জীবনে সিনেমা ও নাটকে অসংখ্য মায়ের চরিত্রে অভিনয় করলেও কখনও ‘নায়িকা’ না হওয়াতেই যেন তার প্রাপ্য সম্মান বা পারিশ্রমিক ঠিকমতো জোটেনি—এই হতাশা এখনো তার গলায় প্রতিধ্বনিত হয়।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ডলি জহুর জানান, ইন্ডাস্ট্রি থেকে আজও তার ৩৪ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। এই অর্থ তিনি চেয়েছিলেন যখন তার স্বামী ক্যানসারে আক্রান্ত, অথচ কেউই এগিয়ে আসেননি।

ডলি বলেন, ‘পারিশ্রমিক তো আর হিরো-হিরোইনদের মতো পাই না। মা’র অভিনয় করে যা পাই, সে টাকাও ঠিকমতো পাইনি।’
অভিনেত্রীর দাবি, সিনেমা রিলিজের পরও তার পুরো পারিশ্রমিক না দিয়ে প্রযোজক-পরিচালকরা মুখ ফিরিয়ে নেন।
এক পরিচালককে বলেছিলেন, ‘আমার স্বামীকে নিয়ে ব্যাংককে যাব চিকিৎসার জন্য, একটু আমার টাকা দেন।’ কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি।
উল্টো যাদের কাছে টাকা পাওয়ার কথা, তাদের একজনকে টাকা আদায়ের দায়িত্ব দিলে সেই মানুষটিও টাকা দেননি, বরং যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।

নিজের অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে ডলি জহুর বলেন, ‘ছবি রিলিজ হয়ে গেছে, টাকা পাইনি। এক পরিচালকের কাছ থেকে পাওনা টাকা আদায় করতে আরেক পরিচালকের কাছে সাহায্য চেয়েছি। আমি কিন্তু সে পরিচালকের কাছেও টাকা পাই। কিন্তু সে আমার ফোন তো ধরেইনি, যোগাযোগও করেনি।’
সবচেয়ে কষ্টের স্মৃতির কথা মনে করে বলেন, ‘ইন্ডাস্ট্রি থেকে এক কড়ি পয়সাও সাহায্য পাইনি। কেউ কখনও বলেনি, এমন সমস্যায় অন্তত ১০ হাজার টাকা ডলিকে গিয়ে দিয়ে আসি।’
২০১১ সালের পর সিনেমা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেও তার দাবি, আজও কেউ সেই পাওনা মেটাননি। ‘যখন একেবারে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যায়, অসহায় হয়ে পড়ি, বুঝতে পারি আর পারব না, তখন ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে একজনের ওপর সবকিছু ছেড়ে দিই’, বলেন ডলি জহুর।

এরপর যুক্ত করেন, ‘আমি কাউকে কখনও বদ দোয়া করি না। কিন্তু টাকাটা যদি আমার হকের, এর একটা বিচার হবেই।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন নাট্যচক্র ও বাংলা থিয়েটার থেকে অভিনয় শুরু করেন ডলি জহুর। পরবর্তীতে টেলিভিশন এবং সিনেমা দুই পর্দাতেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।
২০২১ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন। বর্তমানে তিনি টেলিভিশনের কাজেই সীমিত থাকলেও পারিশ্রমিক নিয়ে পুরোনো এই যন্ত্রণার স্মৃতি এখনো তাকে পিছু ছাড়ে না।
আপনার মতামত লিখুন :