তেজপাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

রান্নার স্বাদ ও ঘ্রাণের পাশাপাশি স্বাস্থ্যেও নানা উপকার, সতর্কতা জেনে নিন

তেজপাতা আমাদের দেশে রান্নার অন্যতম পরিচিত মসলা। সাধারণত ভাত, তরকারি, মাংস কিংবা বিভিন্ন রান্নায় সুগন্ধ বাড়াতে ব্যবহৃত হয় এই পাতাটি। তবে শুধু স্বাদ বা ঘ্রাণ বাড়াতেই নয়, তেজপাতার রয়েছে অনেক ভেষজ ও ঔষধি গুণ। আবার অতিরিক্ত বা ভুলভাবে ব্যবহারে হতে পারে কিছু ক্ষতিও।

তেজপাতার উপকারিতা

হজমশক্তি বাড়ায়

তেজপাতা হজমের জন্য খুবই উপকারী। এটি পেটে গ্যাস, অম্বল, বদহজমের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। তেজপাতা চা বা পানিতে সিদ্ধ করে খেলে পেটের সমস্যা সহজে দূর হয়।

সর্দি-কাশিতে উপকারী

তেজপাতায় থাকা প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপ্টিক উপাদান ঠান্ডা-জ্বর, সর্দি-কাশি দূর করতে সাহায্য করে। অনেকে তেজপাতা পানিতে ফুটিয়ে সেই ভাপ নেন বা পান করেন।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক

গবেষণায় দেখা গেছে, তেজপাতা রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে কিছুটা সহায়ক ভূমিকা রাখে। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিয়মিত ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় এটি ব্যবহার করা উচিত নয়।

হার্টের জন্য ভালো

তেজপাতায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং হার্টের রোগের ঝুঁকি কমায়।

ত্বকের যত্নে উপকারী

তেজপাতায় থাকা জীবাণুনাশক উপাদান ত্বকের ব্রণ ও ফুসকুড়ি প্রতিরোধে সাহায্য করে। অনেকেই তেজপাতার পানি দিয়ে ত্বক ধুয়ে থাকেন।

ব্যথা ও প্রদাহ কমায়

তেজপাতার নির্যাস বা তেল পেশী ব্যথা বা অল্প ফুলে যাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করলে আরাম পাওয়া যায়।

তেজপাতার অপকারিতা

অতিরিক্ত খেলে হজমে সমস্যা

তেজপাতা বেশি খেলে বা বড় আকারে খেলে তা হজমে সমস্যা করতে পারে, বিশেষ করে পুরো পাতা চিবিয়ে খাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে।

গর্ভবতীদের জন্য সতর্কতা

গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে তেজপাতার অতিরিক্ত ব্যবহার ক্ষতিকর হতে পারে, কারণ এটি জরায়ু সংকোচনের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

অ্যালার্জি হতে পারে

তেজপাতার গন্ধ বা সরাসরি ব্যবহার কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ত্বকে অ্যালার্জি বা র‍্যাশের কারণ হতে পারে।

ওষুধের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া

ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের নিয়মিত ওষুধের সঙ্গে তেজপাতার অতিরিক্ত ব্যবহার কখনও কখনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে।

কীভাবে নিরাপদে ব্যবহার করবেন?

রান্নায় স্বাদ ও ঘ্রাণের জন্য ২-৩টি তেজপাতা ব্যবহার করুন।
তেজপাতা চা বা পানিতে ফুটিয়ে পান করতে পারেন, তবে দিনে ১-২ বার যথেষ্ট।
বড় আকারের তেজপাতা কখনোই সরাসরি খাওয়া উচিত নয়।
কোনো গুরুতর অসুস্থতার ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অতিরিক্ত ব্যবহার করা উচিত নয়।

তেজপাতা রান্নায় শুধু স্বাদ বাড়ায় না, বরং হজম, সর্দি-কাশি, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণসহ শরীরের নানা উপকারে আসে। তবে অতিরিক্ত বা ভুলভাবে ব্যবহারে হজমের সমস্যা, অ্যালার্জি কিংবা অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও হতে পারে। তাই সচেতনভাবে ও পরিমিত পরিমাণে তেজপাতা ব্যবহার করলেই এর প্রকৃত উপকারিতা পাওয়া সম্ভব।