ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ ঠেকানোর কৃতিত্ব দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শান্তিতে নোবেল দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আসিম মুনির। এমনটাই দাবি করেছে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র আনা কেলি।
বুধবার (১৮ জুন) রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আসিম মুনিরের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে আসিম মুনির ট্রাম্পের ভূমিকাকে ‘পারমাণবিক যুদ্ধ এড়াতে সহায়ক’ হিসেবে উল্লেখ করে তাকে শান্তির নোবেলের জন্য মনোনয়নের আহ্বান জানান।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কেলি বলেন, গত মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল, তা পারমাণবিক সংঘাতে রূপ নিতে পারত। সেই পরিস্থিতি প্রশমনে ট্রাম্পের ‘অবদানকে’ সম্মান জানিয়ে জেনারেল মুনির তাকে শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তবে এই দাবি সামনে আসার পরও ভারত বারবার বলে এসেছে, দিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যকার সাম্প্রতিক উত্তেজনা প্রশমনে যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো তৃতীয় পক্ষের কোনও ভূমিকা ছিল না।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর যেসব সামরিক পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, তা পুরোপুরি ভারতের নিজস্ব কূটনৈতিক ও প্রতিরক্ষা নীতির অংশ ছিল।
ভারতের দাবি, ১০ মে পাকিস্তানের ডিরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশন্স (ডিজিএমও) ভারতীয় ডিজিএমও-র সঙ্গে যোগাযোগের আগ্রহ জানান। এর আগে ভারত পাকিস্তানের একাধিক বিমানঘাঁটিতে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, যার মধ্যে ছিল ইসলামাবাদের নূর খান (চকলালা) বিমানঘাঁটি। ওই দিনই দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে মৌখিক সমঝোতা হয়।
এর মধ্যেই গত বুধবার ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে ৩৫ মিনিটের এক আলাপে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সাফ জানিয়ে দেন, ওই আলোচনায় ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য চুক্তি কিংবা ভারত-পাকিস্তান বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতার বিষয়টি আলোচনায় আসেনি। আলোচনার বিষয় ছিল ‘অপারেশন সিঁদুর’।
তবু ট্রাম্প আবারো দাবি করেছেন, আমি পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধ থামিয়েছি। আমি পাকিস্তানকে ভালোবাসি। আমি মনে করি মোদি একজন দারুণ নেতা। গতরাতে তার সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে যাচ্ছি। আমি যুদ্ধ থামিয়েছি।
এর আগে রোববারও ট্রাম্প বলেন, ইরান ও ইসরায়েল চুক্তিতে পৌঁছাবে, ঠিক যেভাবে আমি ভারত ও পাকিস্তানকে চুক্তিতে নিয়ে এসেছিলাম। সেই সময় যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যকেই কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে দুই নেতাকে যুক্তিযুক্ত আলোচনায় আনার ব্যবস্থা করি।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই দাবিগুলো রাজনৈতিক প্রচারণার অংশ এবং অনেক ক্ষেত্রেই বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। তবে এমন সময় এই বিবৃতি এল, যখন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনী উত্তাপ বাড়ছে এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে ট্রাম্প নিজের ‘শান্তি স্থাপনকারী’ ভাবমূর্তি তুলে ধরতে চাইছেন।
আপনার মতামত লিখুন :