সাম্প্রতিক সময়ে দেশে বজ্রপাতজনিত দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে জনমনে প্রচুর ভ্রান্ত ধারণা থাকায়, অনেকেই ঝুঁকি এড়াতে সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হন। অনেকের ধারণাঘরের ভেতরে থাকলেই বজ্রপাতের সময় পুরোপুরি নিরাপদ থাকা যায়। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিষয়টি এতটা সহজ নয়।
ঘরে থেকেও ঝুঁকিতে কেন?
বিশেষজ্ঞদের মতে, বজ্রপাতের সময় ঘরের মধ্যে থেকেও কিছু নির্দিষ্ট কাজ প্রাণঘাতী হতে পারে। যেমন গোসল করা, থালা-বাসন ধোয়া, রান্না করা কিংবা পানি ব্যবহারের যেকোনো কাজ। কারণ, বজ্রপাত কোনো ভবনে আঘাত করলে সেই বিদ্যুৎ ধাতব পাইপ বা বৈদ্যুতিক লাইনের মাধ্যমে পানির লাইনে পৌঁছাতে পারে। এমনকি প্লাস্টিক পাইপ ব্যবহৃত হলেও, যদি নিকটবর্তী বৈদ্যুতিক সংযোগ থাকে, তবে তা থেকেও বিপদ ঘটতে পারে।
বজ্রপাতের সময় যেসব কাজ একেবারে করবেন না, গোসল করা বা বাথটাবে থাকা, থালা-বাসন ধোয়া বা রান্না করা, টিভি, কম্পিউটার বা চার্জে থাকা যন্ত্র ব্যবহার করা, তারযুক্ত ফোন (ল্যান্ডফোন) ব্যবহার করা, জানালা বা দরজার পাশে দাঁড়ানো, কংক্রিট দেয়ালে হেলান দেওয়া বা গাছের নিচে আশ্রয় নেওয়া, পুকুর, নদী বা সমুদ্রের আশপাশে অবস্থান করা।
বজ্রপাতের সময় নিরাপদ থাকার উপায়: ঝড়ের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ঘরের ভেতরে আশ্রয় নিন। ঘরের বাইরে থাকলে গাড়ির ভিতরে আশ্রয় নিতে পারেন জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন। শেষ বজ্রপাতের শব্দ শোনার অন্তত ৩০ মিনিট পর পর্যন্ত ঘরে থাকুন। বাইরে থাকলে ধাতব বস্তু ও গাছ থেকে দূরে সরে যান।
আশ্রয় নেওয়ার মতো জায়গা না থাকলে: পায়ের পাতাগুলো একসঙ্গে রেখে, কান ঢেকে, মাথা নিচু করে বলের মতো বসে থাকুন।
কেউ বজ্রপাতে আক্রান্ত হলে করণীয়
আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনুন। দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করুন। যদি ব্যক্তি নিঃশ্বাস না নেয় বা হার্টবিট না থাকে, তবে CPR (কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন) শুরু করুন এবং চিকিৎসক আসা পর্যন্ত চালিয়ে যান।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বজ্রপাতের সময় সচেতনতা ও কিছু পূর্বপ্রস্তুতির মাধ্যমে অধিকাংশ দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। প্রকৃতির এই ভয়াবহ বিপদের মুখে আতঙ্ক নয় সঠিক তথ্য, সতর্কতা ও দ্রুত প্রতিক্রিয়াই হতে পারে জীবনের রক্ষাকবচ।
আপনার মতামত লিখুন :