দই শুধু সুস্বাদু একটি খাবারই নয়, বরং এটি অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দইয়ে থাকে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি-১২, এবং উপকারী ব্যাকটেরিয়া, যা হজম শক্তি বাড়ানো থেকে শুরু করে দাঁত, হাড় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত বা ভুলভাবে দই খেলে কিছু অপকারিতাও হতে পারে।
দই খাওয়ার উপকারিতা
হজমশক্তি বাড়ায়
দইয়ে থাকা প্রোবায়োটিক বা উপকারী ব্যাকটেরিয়া হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এটি পেটের সমস্যা, গ্যাস, অম্বল ও কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
দইয়ে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়া দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি ঠান্ডা, ফ্লু এবং সংক্রমণের ঝুঁকি কমায়।
দাঁত ও হাড় মজবুত করে
দইয়ে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস থাকে, যা দাঁত ও হাড় মজবুত করতে কার্যকর। নিয়মিত দই খেলে হাড় ক্ষয় ও দাঁতের সমস্যা দূর হতে পারে।
ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য বাড়ায়
দই ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে এবং ব্রণ বা র্যাশ কমাতে সাহায্য করে। অনেকে দই দিয়ে ঘরোয়া ফেসপ্যাক তৈরি করে ব্যবহার করেন। এছাড়া দই চুলের খুশকি দূর করতেও উপকারী।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
দই প্রোটিন ও ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে, ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী
চিনি ছাড়া সাধারণ টক দই রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করতে পারে।
গরমে দেহ ঠান্ডা রাখে
গরমের দিনে দই দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে এবং পানিশূন্যতা দূর করে।
দই খাওয়ার অপকারিতা
অতিরিক্ত খেলে হজমে সমস্যা
অতিরিক্ত দই খেলে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে গ্যাস, পেট ফাঁপা বা পেট খারাপের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ঠান্ডা-কাশির সমস্যা বাড়াতে পারে
যাদের ঠান্ডা-কাশির প্রবণতা বেশি, তারা রাতে বা ঠান্ডা অবস্থায় দই খেলে সমস্যা বাড়তে পারে।
চিনি মেশানো দই স্বাস্থ্যকর নয়
বাজারের প্যাকেটজাত মিষ্টি দই বা ফ্লেভারড দইয়ে অতিরিক্ত চিনি ও কৃত্রিম উপাদান থাকে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
অ্যালার্জির ঝুঁকি
যাদের ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স বা দুগ্ধজাত পণ্যে অ্যালার্জি আছে, তাদের জন্য দই খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
কীভাবে নিরাপদে খাওয়া উচিত?
দুপুরে বা বিকেলে দই খাওয়া সবচেয়ে ভালো।
রাতে ঠান্ডা অবস্থায় বা ফ্রিজ থেকে বের করে সরাসরি দই খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
টক দই বা ঘরের তৈরি দই সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর।
বেশি পরিমাণে দই খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
শিশুদের দই খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
দই অত্যন্ত পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর একটি খাবার, যা হজমশক্তি বাড়ায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে, দাঁত-হাড় মজবুত রাখে এবং ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী। তবে ভুলভাবে বা অতিরিক্ত খেলে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। তাই নিয়ম মেনে ও পরিমিত পরিমাণে দই খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে এর সর্বোচ্চ উপকারিতা পাওয়া সম্ভব।
আপনার মতামত লিখুন :