সন্তান জন্মদানের পদ্ধতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই মানুষের মধ্যে নানা প্রশ্ন ও কৌতূহল রয়েছে। এর মধ্যে একটি প্রচলিত ধারণা হলো, সিজারিয়ান (সি-সেকশন) পদ্ধতিতে জন্ম নেওয়া শিশুরা স্বাভাবিকভাবে জন্ম নেওয়া শিশুদের তুলনায় বেশি বুদ্ধিমান হয়। কিন্তু বিজ্ঞান কি এ কথার পক্ষে কোনো প্রমাণ দিয়েছে? চলুন দেখে নেওয়া যাক বিশেষজ্ঞদের মতামত ও বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ।
সিজারিয়ান ও স্বাভাবিক প্রসবের মৌলিক পার্থক্য
স্বাভাবিক প্রসবের সময় শিশু মায়ের প্রসবপথ দিয়ে বের হয়, যা শিশুদের মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ এবং ফুসফুসের বিকাশে সহায়ক ভূমিকা রাখে। অন্যদিকে, সিজারিয়ান হলো একটি অস্ত্রোপচারের মাধ্যম, যেখানে জটিলতা, ঝুঁকি বা চিকিৎসাগত প্রয়োজনে মায়ের পেট কেটে শিশুকে বের করা হয়।
বুদ্ধিমত্তা কি প্রসবপদ্ধতির ওপর নির্ভর করে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন না। শিশুর বুদ্ধিমত্তা নির্ধারিত হয় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের মাধ্যমে, যার মধ্যে প্রসবপদ্ধতি কোনো মুখ্য ভূমিকা রাখে না। বরং নিচের বিষয়গুলো বেশি প্রভাব ফেলে:
জিনগত প্রভাব: গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুর বুদ্ধিমত্তার প্রায় ৫০-৭০% নির্ভর করে তার জেনেটিক বৈশিষ্ট্যের ওপর।
পরিবেশ ও লালনপালন: বাড়ির পরিবেশ, ভালো শিক্ষা ও যত্ন শিশুর মানসিক বিকাশে সরাসরি প্রভাব ফেলে।
পুষ্টি: গর্ভাবস্থায় মায়ের পুষ্টি ও শিশুর খাদ্যাভ্যাস মস্তিষ্কের গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সিজারিয়ান শিশুদের কিছু শারীরিক দিক
কম শারীরিক চাপ: সিজারিয়ান শিশুদের জন্মের সময় প্রসবপথে চাপ পড়ে না, ফলে ত্বকে আঘাত বা ফোলাভাবের সম্ভাবনা কমে যায়।
ইমিউন সিস্টেমে ভিন্নতা: স্বাভাবিক প্রসবের সময় শিশুর শরীরে মায়ের শরীর থেকে উপকারী ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে, যা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সিজারিয়ান শিশুদের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া অনেকাংশে অনুপস্থিত থাকতে পারে।
চিকিৎসক ও গবেষকদের মতামত
বর্তমানে কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণাতেই প্রমাণ মেলেনি যে, সিজারিয়ান শিশুদের বুদ্ধিমত্তা স্বাভাবিক প্রসবের শিশুদের চেয়ে বেশি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুর বুদ্ধিমত্তা বিকাশের মূল চাবিকাঠি হলো পুষ্টিকর খাদ্য, স্নেহপূর্ণ লালনপালন এবং মানসিক বিকাশের সহায়ক পরিবেশ।
বুদ্ধিমত্তা বাড়াতে যা করবেন
সঠিক যত্ন নিন: শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সংবেদনশীল হোন।
শেখার সুযোগ দিন: বই পড়া, খেলাধুলা ও সৃজনশীল কাজ মস্তিষ্ক সক্রিয় রাখে।
পুষ্টিকর খাদ্য দিন: দুধ, ডিম, শাকসবজি ও ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার শিশুর মস্তিষ্কের গঠনে সহায়ক।
সিজারিয়ান শিশু বেশি বুদ্ধিমান এই ধারণার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। শিশুর জন্মদানের পদ্ধতি নয়, বরং তাকে কীভাবে বড় করা হচ্ছে তা-ই তার বুদ্ধিমত্তার মূল নিয়ামক। তাই কুসংস্কার নয়, গুরুত্ব দিন ভালো পরিবেশ, সঠিক যত্ন ও শিক্ষায়।
আপনার মতামত লিখুন :