নারায়ণগঞ্জ বাংলাদেশের একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী জেলা। শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অবস্থিত এই জেলাটি একসময় বাংলার অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত ছিল। পাট শিল্পের জন্য বিখ্যাত এই জেলাটির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের গভীরতা অপরিসীম।
এই এলাকার মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও শতবর্ষী জমিদার বাড়ি। প্রাচীন জমিদার বাড়িগুলোর মধ্যে যে কয়েকটি বাড়ি এখনো কালের সাক্ষী হয়ে টিকে আছে তার মধ্যে মুড়াপাড়া জমিদার বাড়িটি অন্যতম।
মুড়াপাড়া রাজবাড়ি বাংলাদেশের একটি গুরত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে স্বীকৃত। এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও স্থাপত্যশৈলীর কারণে এটিকে একটি জাতীয় ঐতিহ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই কারণেই এটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার মুড়াপাড়া গ্রামে অবস্থিত এই রাজবাড়িটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহাসিক নিদর্শন। শতাব্দী প্রাচীন এই বাড়িটি বাবু রামরতন ব্যানার্জি ১৮৮৯ সালে ভিত্তি ও কাঠামো তৈরি করেছিলেন। বিশাল আয়তনের এই বাড়িটি অত্যন্ত সুন্দর ও কারুকাজে সজ্জিত।
এই জমিদার বাড়িটির নির্মাণের সঠিক সময় নির্ধারণ করা যায়নি। তবে, স্থানীয় জনশ্রুতি অনুযায়ী, এই বাড়িটির ইতিহাস কয়েক শতাব্দী প্রাচীন। বিভিন্ন সময়ে এ জমিদার বাড়িটি কয়েকজন জমিদার কর্তৃক সংস্কার ও সম্প্রসারণ করা হয়েছিল।
স্থানীয়রা একে মঠেরঘাট জমিদার বাড়ি বলেও অভিহিত করে। বাবু রামরতন ব্যানার্জি এই অঞ্চলে মুড়াপাড়া জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং এই বাড়িটি নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে তার বংশধররা এই বাড়িটির বিস্তার ও সংস্কার করেছেন।
১৮৮৯ সালে জমিদার প্রতাপচন্দ্র ব্যানার্জি এই ভবনের পেছনের অংশ সম্প্রসারণ করেন। রাজবাড়িটি তার স্থাপত্যশৈলীর জন্য বিখ্যাত। বাড়ির সামনে দিয়ে শীতলক্ষ্যা নদী বয়ে গেছে। মুড়াপাড়া রাজবাড়িটি তার সুদৃশ্য স্থাপত্যশৈলীর জন্য বিখ্যাত।
দুই তালা এই জমিদার বাড়িটিতে আছে ৯৫টি কক্ষ, ২টি পুকুর, বেশকিছু নাচঘর, আস্তাবল, মন্দির, ভান্ডার, কাচারি ঘর, বিশাল বাগান। মন্দিরের ওপরের চূড়াটি প্রায় ৩০ ফুট উঁচু। মূল প্রাসাদে প্রবেশ পথে রয়েছে বেশ বড় একটি ফটক। বাড়ির পাশে একটি বিশাল বড় আম বাগানও রয়েছে। আম গাছগুলো বেশ পুরাতন এবং সারিবদ্ধভাবে সাজানো অসাধারণ দৃষ্টিনন্দন।
প্রধান সড়কের পাশে আছে দুইটি পুরোনো মঠ, রাস্তা থেকে মঠগুলো জানান দেয় বাবু রামরতন ব্যানার্জির আধিপত্য এবং তার বিশালত্ব । সামনের পুকুরটি বেশ বড় এবং পেছনেরটি একটু ছোট। চাইলে পানিতে নেমে গোসলও করতে পারেন এবং অনেকেই তা করেন পুকুরের পানি বেশ পরিষ্কার।
কথিত আছে রাজবাড়ি থেকে নাকি গোপন একটি সুড়ঙ্গ বের হয়ে দূরে চলে গেছে। তবে সুড়ঙ্গের পথ আপাদত বন্ধ আছে সে তথ্য অষ্পষ্ট। তবে প্রাচীন স্থাপনার সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে আরও কিছু নতুন স্থাপনা একটি শহিদ মিনার, ইনডোর স্টেডিয়াম, স্কুল ইত্যাদি। সামনের মাঠ বেশ বড়।
চাইলে খেলাধুলা করতে পারেন। এই রাজবাড়িটির বর্তমান অবস্থার কথা বলতে গেলে বর্তমানে মুড়াপাড়া ডিগ্রি কলেজ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যদিও কালের গতিতে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবুও এই রাজবাড়িটি তার মূল সৌন্দর্য ধরে রেখেছে আজও।
রাজবাড়িটি ঐতিহাসিক স্থাপত্যেপ্রেমীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান। প্রতিদিনই অনেক পর্যটক এখানে ভ্রমণে আসেন। ঢাকা শহর থেকে মাত্র ১৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হওয়ায় এই স্থানটি দর্শনার্থীদের কাছে বেশ প্রিয়।
এখানে আসতে হলে রাজধানী ঢাকার সায়েদাবাদ, গুলিস্তান অথবা যাত্রাবাড়ী থেকে ঢাকা সিলেট মহাসড়ক ধরে মেঘলা, গ্লোরী, আসিয়ান পরিবহন অথবা নরসিংদী বা ভৈরবগামী যে কোনো বাসে চেপে রূপসী বা ভুলতা গাউছিয়া বাসস্ট্যান্ডে নামতে হবে।
তারপর রিকশা বা সিএনজিতে মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি। ভাড়া নেবে ২০-৫০ টাকা অথবা কুড়িল বিশ্বরোড হয়ে ৩০০ ফিট রাস্তা ধরে বিআরটিসি বাসে ভুলতা গাউছিয়া ভাড়া এসিতে ৬০ টাকা নন এসিতে ৪০ টাকা, তারপর সিএনজি অটো রিকশা রাজবাড়ি যেতে ২০-৫০ টাকা।
মুড়াপাড়া রাজবাড়ি বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির একটি গুরত্বপূর্ণ অংশ। এই বাড়িটি আমাদেরকে অতীতের কথা মনে করিয়ে দেয় এবং আমাদের ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে উৎসাহিত করে।
আপনার মতামত লিখুন :