জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা টানা পঞ্চম দিনের মতো বন্ধ রয়েছে। চিকিৎসক ও কর্মচারীদের নিরাপত্তা-সংকটের কারণে এ অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে প্রতিদিন শত শত রোগীকে বিনা চিকিৎসায় ফিরে যেতে হচ্ছে। ফলে জনসাধারণের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।
গত ২৯ মে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে’ আহত কয়েকজন রোগী বিষপানের চেষ্টা করলে উত্তেজনা শুরু হয়। এরপর ২৭ মে একজন আত্মহত্যার চেষ্টা করলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ে। সর্বশেষ ২৮ মে কর্মচারী, আহত রোগী ও তাদের স্বজনদের মধ্যে সংঘর্ষের পর হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়ে।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. জানে আলম বলেন, ‘নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসক ও কর্মীরা কাজে ফিরবেন না। আমরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।’
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন গড়ে ১২০০ থেকে ১৫০০ রোগী এখানে বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা নিয়ে থাকেন। বর্তমানে রোগীদের বড় অংশই ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। কেউ কেউ দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে এসেও সেবা না পেয়ে হতাশ হচ্ছেন।
আজিমপুর থেকে আসা রোগী আজিজ মিয়া বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না পেলে আমরা কোথায় যাব? প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা করানো আমাদের পক্ষে সম্ভব না।’
মোহাম্মদপুর থেকে আসা এক প্রবীণ রোগী জানান, ‘সকাল ৮টা থেকে হাসপাতালের গেট বন্ধ। সাড়ে ১১টায় এসেও জানলাম, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ। কোথায় যাব আমরা?’
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শনিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত রোগীদের আশপাশের হাসপাতালের চক্ষু বিভাগ থেকে সেবা নিতে বলা হয়েছে।
বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছেন প্রায় ৫০ জন ‘জুলাই যোদ্ধা’। আত্মহত্যার চেষ্টাকারীদের কয়েকজনকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ও সিএমএইচে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, পরিস্থিতি অনুকূলে না আসায় চিকিৎসা কার্যক্রম চালু করা যাচ্ছে না।
হাসপাতালের একাধিক সূত্র জানায়, কিছু আহত রোগীর অভিযোগ- তাদের যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। ২৫ মে চারজন বিষপান করলে প্রথম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ২৭ মে এক যুবক পরিচালকের কক্ষে নিজের শরীরে আগুন ধরানোর চেষ্টা করেন। এর জের ধরে ২৮ মে ত্রিমুখী সংঘর্ষে রূপ নেয় পরিস্থিতি।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে শুক্রবার একাধিক পক্ষের বৈঠক হলেও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি। আহতদের স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত থাকলেও সেবা চালু হয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ছাড়া চিকিৎসাসেবা চালু সম্ভব নয়।