ডিজিটাল যুগে আমাদের ব্যক্তিগত বার্তালাপ সুরক্ষিত রাখা একান্ত প্রয়োজন। সেই লক্ষ্যেই ফেসবুক (বিশেষত মেসেঞ্জার) নিয়ে এসেছে ‘এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন (End-to-End Encryption)’ সুবিধা।
অনেকের কাছেই এই প্রযুক্তি নতুন, কেউ আবার বুঝে উঠতে পারেন না- এটি কেন দরকার বা এর সুবিধা-অসুবিধা কী। চলুন, এক নজরে জেনে নেওয়া যাক এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন সম্পর্কে বিস্তারিত।
এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন কী?
এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন- হলো এমন একটি নিরাপত্তা প্রযুক্তি, যেখানে আপনি এবং আপনার সঙ্গে কথোপকথনে থাকা ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ- এমনকি ফেসবুক নিজেও- আপনার মেসেজ পড়তে পারে না। এটি বার্তাগুলোকে এনক্রিপ্ট (শব্দগুলো ঘোলাটে করে ফেলা) করে ফেলে এবং শুধুমাত্র গ্রাহকের ডিভাইসে তা ডিকোড হয়।
সহজ ভাষায় আপনি যা পাঠাচ্ছেন, তা একমাত্র প্রাপকই পড়তে পারবেন। মাঝপথে কেউ চাইলেও কিছু বুঝতে পারবে না।
ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন কীভাবে কাজ করে?
ফেসবুক মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে ফেসবুক মেসেঞ্জারে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সক্রিয় থাকে না (সব ব্যবহারকারীর ক্ষেত্রে)। আপনাকে নিজে এটি চালু করতে হয়।
কীভাবে ফেসবুক মেসেঞ্জারে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন চালু করবেন?
প্রথমে মোবাইলে ‘Messenger’ অ্যাপটি খুলুন। যে চ্যাটে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন চালু করতে চান, তার প্রোফাইল আইকনে ক্লিক করুন।

নিচে স্ক্রল করে ‘Go to secret conversation’ বা ‘Use end-to-end encryption’ অপশনটি খুঁজে বের করুন। এবং চালু করে দিন।
এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন চ্যাট যেভাবে শুরু করবেন?
ম্যাসেঞ্জার (Messenger) অ্যাপে নতুন মেসেজ লেখার অপশন চাপুন ➜ Secret বা Encrypted chat নির্বাচন করুন ➜ প্রাপক নির্বাচন করে মেসেজ শুরু করুন।
এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন বন্ধ করার নিয়ম
প্রথমে Messenger অ্যাপ খুলুন। এরপর উপরের ডান কোণ থেকে Settings (⚙️) এ যান। Privacy & Safety সেকশন সিলেক্ট করুন।

পরে End-to-End Encryption এ ট্যাপ করুন। এবং "Turn Off Encryption" অপশনটি বেছে নিন। এবং কনফার্ম করুন।
এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশনের সুবিধা কী?
১, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা: কোনো হ্যাকার বা সরকার- কেউ বার্তার ভিতরে উঁকি দিতে পারবে না।
২, ফেসবুকও মেসেজ দেখতে পাবে না: এমনকি Meta নিজেও জানবে না আপনি কী বলছেন।

৩, নিরাপদ ডিভাইস-টু-ডিভাইস যোগাযোগ: এটি মূলত আপনার এবং প্রাপকের মোবাইলেই মেসেজ ডিকোড করে- মাঝখানে কারো হস্তক্ষেপ হয় না।
৪, স্ক্রিনশট এলার্ট (কিছু ক্ষেত্রে): যদি কেউ স্ক্রিনশট নেয়, আপনি জানতে পারেন।
এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশনের অসুবিধা কী?
ব্যাকআপ সমস্যা: এনক্রিপ্টেড মেসেজ গুগল ড্রাইভ বা আইক্লাউডে সাধারণভাবে ব্যাকআপ নেওয়া যায় না।
মেসেজ পুনরুদ্ধার কঠিন: যদি ফোন হারিয়ে যায়, এনক্রিপ্টেড বার্তাগুলো পুনরুদ্ধার করা কঠিন।
সন্দেহজনক ব্যবহারকারীর আশ্রয়: এনক্রিপশন প্রযুক্তি অনেক সময় অপরাধীরা তাদের মেসেজ গোপন রাখতে ব্যবহার করে—যা নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জ।
ফেসবুক কেন এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন চালু করল?
গোপনীয়তা সচেতনতা বাড়ছে। ইউরোপ ও আমেরিকায় প্রাইভেসি আইন কঠোর হচ্ছে।
ফেসবুকের বিরুদ্ধে আগেও ব্যক্তিগত তথ্য অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। তাই বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতেই মেটা এই প্রযুক্তিকে গুরুত্ব দিচ্ছে।
কোন কোন অ্যাপে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন ব্যবহার হয়?
১, WhatsApp (স্বয়ংক্রিয়ভাবে সক্রিয়)
২, Signal

৩, Telegram (সিক্রেট চ্যাটে)
৪, Messenger (ম্যানুয়ালি চালু করতে হয়)
এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন কী আদৌ জরুরী?
বর্তমান সময়ে গোপনীয়তা কেবল একটি ‘অধিকার’ নয়, বরং এটি একটি ‘দায়িত্ব’। নিজের কথোপকথন নিরাপদ রাখতে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন চালু রাখা সময়ের দাবি। যদিও এটি কিছু সীমাবদ্ধতা নিয়ে আসে, তবে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
আপনি কি আপনার ফেসবুক মেসেজে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন চালু করেছেন? এখনই যাচাই করুন- কারণ গোপন কথোপকথন, গোপনই থাকা উচিত।
আপনার মতামত লিখুন :