কনটেন্ট ক্রিয়েটরসহ সাধারণ মানুষের জন্য আয়ের একটি বড় উৎস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক। কিন্তু বিভিন্ন কারণে অনেকে সেখানে মনিটাইজেশন সুবিধা পাচ্ছেন না। এ থেকে প্রতিভাবান ক্রিয়েটররা তাদের উপযুক্ত পারিশ্রমিক বঞ্চিত হচ্ছেন।
যেসব কারণে মনিটাইজেশন পাওয়া যায় না
আমাদের দেশের হাজার হাজার মানুষ ফেসবুকে কনটেন্ট তৈরি করে অর্থ উপার্জন করতে চায়। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ তা করতে পারে না। এর কারণ হিসেবে মেটা নিজেরাই সম্প্রতি (এপ্রিল, ২০২৫) জানিয়েছে, স্প্যামি কনটেন্ট, অ্যালগরিদমের জটিলতা, ফেক এনগেজমেন্ট এবং কপিরাইট ইস্যু- এ চারটি ফেসবুক মনিটাইজেশনের প্রধান বাধা। যারা সত্যিই ভালো কনটেন্ট তৈরি করতে চান, তাদের এই বিষয়গুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
স্প্যামি কনটেন্ট ও অ্যালগরিদম ম্যানিপুলেশন
ফেসবুক সম্প্রতি ঘোষণা করেছে, কিছু অ্যাকাউন্ট মনিটাইজেশনের সুবিধা নিতে গিয়ে দীর্ঘ, অপ্রাসঙ্গিক ক্যাপশন, অতিরিক্ত হ্যাশট্যাগ এবং ফেক এনগেজমেন্ট ব্যবহার করে। এর ফলে স্প্যামি কনটেন্ট ফিডে ভরাট হয়ে যায়, যা আসল ক্রিয়েটরদের কনটেন্টকে পিছিয়ে দেয়।
আশার কথা হলো, ফেসবুক এখন এমন অ্যাকাউন্টগুলোর রিচ কমিয়ে দিয়ে তাদের মনিটাইজেশনের অযোগ্য ঘোষণা করছে। তারা জানিয়েছে, গত বছর তারা স্ক্রিপ্টেড ফলোয়ার, ফেক পেজ এবং ‘কো-অর্ডিনেটেড ফেক এনগেজমেন্ট’-এ জড়িত ১০০ মিলিয়নের বেশি অ্যাকাউন্ট অপসারণ করেছে।
অর্থাৎ, দীর্ঘ ও অপ্রাসঙ্গিক ক্যাপশন, অতিরিক্ত হ্যাশট্যাগ এবং ফেক এনগেজমেন্ট ব্যবহারের ফলে ভবিষ্যতে মনিটাইজেশন পাওয়া যাবে না।
নকল অ্যাকাউন্ট ও পরিচয় চুরি
অনেক ক্রিয়েটরের নাম ও কনটেন্ট চুরি হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ, কোনো রকম ক্রেডিট না দিয়ে অন্যরা তাদের তৈরি করা জনপ্রিয় কনটেন্ট ব্যবহার করছেন নিজেদের পেজ বা অ্যাকাউন্টে, মূল পেজ বা অ্যাকাউন্টের ব্র্যান্ড নাম নকল করে। ফেসবুকের তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালে ২৩ মিলিয়ন নকল প্রোফাইল ডিলিট করা হয়েছে। এই ছদ্মবেশী অ্যাকাউন্ট ও পেজগুলোর জন্য মূল ক্রিয়েটররা মনিটাইজেশন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
ফেসবুক এই চুরি ঠেকাতে মডারেশন অ্যাসিস্ট টুলে নতুন ফিচার যোগ করেছে, যা নকল আইডি থেকে মন্তব্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে সরিয়ে ফেলবে বা হাইড করবে। ক্রিয়েটররা এখন মন্তব্যের ঘর থেকে এ ধরনের প্রতারকদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করতে পারবেন।
অর্থাৎ, অন্যের কনটেন্ট নিয়ে নিজের নামে চালানো বা জনপ্রিয় কোনো পেজ কিংবা অ্যাকাউন্টের নাম ব্যবহার করে পেজ খুললেও আর মনিটাইজেশন পাওয়া যাবে না। উপরন্তু, মূল পেজ বা কনটেন্টের মালিক রিপোর্ট করলে নকল পেজ সরিয়ে নেবে ফেসবুক।
কপিরাইট ও কনটেন্টের পুনর্ব্যবহার
অনেকে ক্রিয়েটরদের অনুমতি ছাড়া সেগুলো ব্যবহার করে। এতে মূল ক্রিয়েটরদের আয়ে বাধা তৈরি হয়। এ সমস্যা সমাধানে ফেসবুক রাইটস ম্যানেজার টুল আপগ্রেড করেছে। এতে কনটেন্টের মূল ক্রিয়েটররা অননুমোদিত ব্যবহার ট্র্যাক করতে পারেন। এ ছাড়া ফেসবুক তাদের মনিটাইজেশন গাইডলাইন আরও কঠোর করেছে। সেখানে শুধু প্রকৃত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্যই অ্যাড রেভিনিউ রাখা আছে।
মনিটাইজেশনের বাধা কাটিয়ে উঠতে যা করবেন
নিজস্ব মজাদার কনটেন্ট তৈরি করুন।
অন্যের জনপ্রিয় কনটেন্ট চুরি না করে নিজস্ব চিন্তাভাবনা থেকে নতুন ও মজাদার কনটেন্ট তৈরি করুন।
অতিরিক্ত হ্যাশট্যাগ, ক্লিকবেইট টাইটেল এড়িয়ে চলুন।
দর্শকদের সঙ্গে গুণগত সংযোগ বাড়ান।
নকল অ্যাকাউন্ট থেকে সতর্ক থাকুন
টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু করুন।
নিয়মিত গুগল সার্চ করে দেখুন, কেউ আপনার কনটেন্ট চুরি করছে কি না।
ফেসবুকের মনিটাইজেশন টুলস ব্যবহার করুন
রাইটস ম্যানেজার দিয়ে কনটেন্ট নিরাপদ করুন।
সমস্যা হলে ফেসবুকের ক্রিয়েটর সাপোর্ট টিমের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
ফেসবুক কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য আয়ের একটি সম্ভাবনাময় প্ল্যাটফর্ম। কিন্তু স্প্যাম, নকল অ্যাকাউন্ট এবং কপিরাইট ইস্যুর কারণে অনেকে সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ফেসবুকের নতুন পলিসি এবং টুলস (যেমন রাইটস ম্যানেজার, মডারেশন অ্যাসিস্ট) এই সমস্যা কমাতে সাহায্য করছে। ফেসবুক ক্রিয়েটরদেরও সচেতন হয়ে অরিজিনাল কনটেন্ট তৈরি এবং তাদের গাইডলাইন অনুসরণ করতে উৎসাহিত করেছে।
আপনার মতামত লিখুন :