বিচার বিভাগ কেবল ঐতিহ্যের স্বস্তিতে টিকে থাকতে পারে না। এটিকে সময়ের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক হতে হয়। আর সময়ের সঙ্গে বিচার বিভাগকে প্রাসঙ্গিক থাকতে হলে তাকে সংস্কার করতে হয় বলে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
শনিবার (৮ নভেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ৭৫ বছর পূর্তি (হীরক জয়ন্তী) ও পুনর্মিলনী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, ইতিহাসের গভীর বোধ ছাড়া কোনো সংস্কারক প্রজ্ঞাবান হতে পারেন না, আর কোনো বিচারক তার সভ্যতার শিকড় না বুঝে আইনের যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে পারেন না।
তিনি বলেন, আইন হলো কোনো জাতির নৈতিক ইতিহাস, যা ন্যায়ের ভাষায় লেখা হয়; আর ইতিহাস হলো— কেন সমাজকে আরো ভালো হতে হবে, তারই অনুসন্ধান।
প্রধান বিচারপতি বলেন, সংস্কারের মূল লক্ষ্য প্রশাসনিক নয়, বরং নৈতিক; যাতে প্রতিষ্ঠান ক্ষমতাকে নয়, মানুষকে সেবা দেয়; কর্তৃত্ব বৈধতার সঙ্গে যুক্ত হয় এবং বিচার বিভাগ জনগণের আস্থার নৈতিক অভিভাবকে পরিণত হয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিচারব্যবস্থার সঙ্গে অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। যার মধ্যে রয়েছে— ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, মিশর, ফিলিস্তিন ও থাইল্যান্ড। এই সংযোগের উদ্দেশ্য হলো— আইনের পাশাপাশি ইতিহাস ও দর্শনের আন্তঃবিষয়ক জ্ঞানচর্চার মাধ্যমে বিশ্বজনীন মূল্যবোধকে প্রতিষ্ঠা করা।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আজকের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের হীরক জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানটি কেবল একাডেমিক উদযাপন নয়, এটি প্রতিষ্ঠানের নৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক প্রভাবের পুনঃপ্রতিষ্ঠা। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ বারবার প্রমাণ করেছে— ইতিহাস আমাদের মূল্যায়ন করে অর্জনে নয়, বরং প্রচেষ্টার সততা ও নিষ্ঠার মানদণ্ডে। এই বার্তাই বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ভবিষ্যতের মূলভিত্তি মর্মে তিনি উল্লেখ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস, ঐতিহ্য, বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক ইতিহাসে এর অবদান এবং জ্ঞানচর্চার মানবিক মূল্যবোধের ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বিভাগটির সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাবেক শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে ভবিষ্যতের সাফল্যের জন্য আন্তরিক শুভ কামনা জানান।
অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান।
এতে সভাপতিত্ব করেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক মো. আতাউর রহমান বিশ্বাস।
উপস্থিত ছিলেন শিক্ষকবৃন্দ, এই বিভাগের বর্তমান ও সাবেক (এলামনাই) শিক্ষার্থীবৃন্দ এবং আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ।


