শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মো. ইসহাক ফারুকী

প্রকাশিত: অক্টোবর ৮, ২০২৪, ১০:০১ পিএম

এএসডির গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ

গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুদের জন্য আইনের বাস্তবায়ন জরুরি

মো. ইসহাক ফারুকী

প্রকাশিত: অক্টোবর ৮, ২০২৪, ১০:০১ পিএম

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হল বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট এএসডি আয়োজিত এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠান। ঢাকা শহরে গৃহকাজে নিয়োজিত শিশুদের বর্তমান পরিস্থিতি কী? কেমন চলছে তাদের জীবন? কী কী সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে নাকি পাচ্ছে না? অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. তরিকুল ইসলাম। মো. সরফুদ্দিন আহমেদের গবেষণা ও ইউ কে এম ফারহানা সুলতানার প্রতিবেদন উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক এস এম এনামুল হক, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারি মহাব্যবস্থাপক ডা. বিশ্বজিৎ রায়, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উপপরিচালক এম রবিউল ইসলাম, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহকারি সচিব মোসা. সালমা আক্তার, ইউনিসেফের চাইল্ড প্রটেকশন অফিসার ফাতেমা খাইরুন্নাহার, এএসডির সভাপতি ড. আলতাফ হোসেন, নির্বাহী পরিচালক এম এ করিম।

প্রতিবেদনে উঠে আসে গৃহকাজে নিয়োজিত শিশুরা করছে ভারি কাজ। নেই সময়ের সীমাবদ্ধতা, ৭ বছর বয়স থেকেই বাড়ির কাজ করে, বিনোদনের সুযোগ নেই বললেই চলে, পায় না ভালো খাবার, শীতে পায় না কম্বল, শিকার মারধর আর যৌন নির্যাতনের। ঢাকা শহরের গৃহকাজে নিয়োজিত শিশুদের বর্তমান ঝুঁকি নির্ধারণ, নিয়োজিত হওয়ার মূল কারণ, আইন ও নীতিতে বিদ্যমান ফাঁকগুলো খুজে বের করা এবং সম্ভাব্য সমাধানের পথ খুজতে এই গবেষণাটি করা হয়েছে।

ঢাকার দুটি সিটি কর্পোরেশনের ১২টি থানার মধ্যে স্যাম্পল হিসেবে ৩৫২ জন শিশু গৃহকর্মীর ওপর গবেষণা করা হয়। তার মধ্যে ২০৯ জন শিশু বাসাবাড়িতে পূর্ণকালীন বা ফুল টাইম এবং ১৪৩ জন খন্ডকালীন বা পার্ট টাইম হিসেবে কাজ করে। গৃহকাজে যুক্ত হওয়ার কারণ হিসেবে ৪৭.৭৬ শতাংশ শিশু পরিবারকে সহায়তার জন্য, ২২.৯৭ শতাংশ শিশুর পরিবার লেখাপড়ার ভার গ্রহণ করতে না পারার, ১৭.০৮ শতাংশ পরিবারের ঋণ শোধে দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়টি দেখা গেছে। এ ছাড়া গ্রামে বসবাস নিরাপদ নয়, উন্নত জীবনের জন্য ঢাকা আসা, অভিভাবক নেই, পরিবার সন্তানের লেখাপড়ার বিষয়ে আগ্রহী নয়- এই বিষয়গুলোও উঠে এসেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে গৃহকাজে ৩২.১ শতাংশ শিশু ৮-৯ ঘন্টা, ১৭.৯ শতাংশ ১০-১১ ঘন্টা, ৯.৩৭ শতাংশ ১২ ঘন্টা বা তারচেয়ে বেশি। কর্মক্ষেত্রে ঝুঁকির ধরণ হিসেবে দেখা গেছে ৩১.৪৫ শতাংশ শিশুর উপর অতিরিক্ত কাজের চাপ আছে। সামর্থের বাইরে কাজ করছে ২৯.৯৬ শতাংশ শিশু। তা ছাড়া শারীরিক নির্যাতন, স্বাস্থ্য ঝুঁকি, দরজা তালাবন্ধ করে রাখা, বিপজ্জনক পরিবেশে কাজ করার বিষয়গুলো উঠে এসেছে।

২০.৭৮ শতাংশ শিশুর শুনতে হয় গালাগালি। ১৮.২৫ শতাংশ শিশু অর্থনৈতিক শোষণের শিকার। ১৩.৩২ শতাংশ শিশু বেশিক্ষণ কাজের ফলে মানসিক চাপে ভুগছে। সাপ্তাহিক ছুটি নেই ১২.১৩ শতাংশ শিশুর। ১.৭ শতাংশ শিশুর যৌন নির্যাতনের ফলে মানসিক ও শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া রয়েছে মারধর, ভালো খাবার না পাওয়া, ঘুমানোর ভালো জায়গা না থাকা, পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না দেওয়া, খেলাধূলা ও বিনোদনের সুযোগ না দেওয়ার বিষয়গুলোও উঠে আসে। 

গবেষণায় দেখা যায় ৮৭.৭৯ শতাংশ শিশু শিক্ষার সুযোগ পায় না। অসুস্থ হলে ফার্মেসী থেকে ওষুধ এনে খাওয়ানো হয় ৮২.৪৬ শতাংশ শিশুদের। আর ৩৪.৩৪ শতাংশ শিশুকে নেওয়া হয় সরকারি হাসপাতালে। অন্যদিকে ২০.১১ শতাংশ শিশুর ঘুমানোর বিছানা নাই, ১৮.৮৬ শতাংশ শিশুর ঘুমানোর ঘরে জানালা নেই; গরমের মধ্যে ফ্যান নেই; ১৫.২ শতাংশ শিশুর; শীতকালে কম্বল পায় না ১৩.৯৯ শতাংশ শিশু; মশারী নেই ১৩.১৪ শতাংশ শিশুর, ডাইনিং বা ড্রইং রুমে ঘুমায় ১১.৭৬ শতাংশ শিশু, এতে ৬.১ শতাংশ শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। অবিশ্বাস্য হলে সত্য, ১৩.৩৫ শতাংশ শিশু এক বেলা খাবার পায়। অন্যদিকে ৩৬.০৪ শতাংশ শিশু জানে না তাদের অধিকার সম্পর্কে।

এএসডি বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরেছে। বিদ্যমান আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন ও সংশোধন এবং প্রয়োজনে নতুন আইন প্রণয়ন করা; গৃহকাজকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা, জনসচেতনতা সৃষ্টিতে সবার অংশগ্রহণে প্রচারণা কর্মসূচী গ্রহণ ও বাস্তবায়ন; গণমাধ্যমের অংশগ্রহণ এবং মিডিয়া গ্রুপ গঠন করে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে চাপ সৃষ্টি; অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করা; সাধারন শিক্ষার পাশাপাশি বাজার উপযোগী দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান এবং শালীন ও ভদ্র কাজে নিয়োজিত করা; নির্যাতন ও সহিংসতার শিকার শিশুদের স্বাস্থ্য এবং আইনি সেবায় উদ্ধার ও সার্ভিস কেন্দ্র স্থাপন করা; শক্তিশালী অ্যাডভোকেসির জন্য সমমনা এনজিও এবং নেটওয়ার্কগুলোর সাথে যৌথ উদ্যোগ নেওয়া।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত উন্নয়ন সংগঠক ও সাংবাদিকরা বিভিন্ন মতামত প্রকাশ করেন। সেখানে তারা তুলে ধরেন ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমের তালিকায় ৪৪তম হিসেবে গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুশ্রম অন্তর্ভূক্তি, শিশুদের জন্য পৃথক দপ্তর, আইনের বাস্তবায়ন, শিশুরা শ্রমিক হিসেবে ঢাকায় এলে থানা থেকে অনুমোদন, সব ক্ষেত্রের সঙ্গে সমন্বয়, ক্যাম্পেইন পরিচালনা, শ্রম আইন সংস্কার, সরকারের সেফটিনেট প্রকল্পের বাস্তবায়ন, কন্যাশিশুর সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ, মোবাইল ফোনের অপব্যবহার রোধ, আইনের পরিমার্জন, সচেতন সমাজ সৃষ্টি, শিশু শ্রম বিষয়ক সঠিক তথ্য-উপাত্ত নিশ্চিতকরণ, বারবার শিশুর কাছে গিয়ে সঠিক তথ্য খুঁজে বের করা, গণমাধ্যমের সাথে এনজিওর সমন্বয় থাকতে হবে।

গবেষণা প্রতিবেদনের গুরুত্ব তুলে ধরেন বক্তারা। শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক এস এম এনামুল হক এই খাতকে আন-অর্গানাইজড হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, শিশু নির্যাতনের জরিমানা ২৫ হাজার টাকা বিষয়ে আমরা প্রস্তাবনা দিয়েছি। শুধু শিশু গৃহকর্মী নয়, আমরা গৃহপরিচারিকার বিষয়ে আলোচনা করছি। ১৮ বছরের নিচে যেন কেউ গৃহপরিচারিকা হতে না পারে, সে বিষয়েও আলোচনা চলছে।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উপপরিচালক এবং শিশু অধিকার কমিটির সদস্য সচিব এম রবিউল ইসলাম গৃহকর্মী আইন ও মানবাধিকারের বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, গৃহকর্মীদের নিয়ে আইন হওয়া উচিত। আমরা একটি খসড়া প্রস্তাবনা দিয়েছি। কিছু সুপারিশও করা হয়েছে।

শাস্তির বিধানে সংস্কার, ঝুঁকিপূর্ন কাজের তালিকায় গৃহকর্মকে স্থান দেওয়ার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সিনিয়র প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সৈয়দা মুনিরা সুলতানা বলেন, শিশু নির্যাতনে এখনও ৫ হাজার টাকা জরিমানা ধরা হয়েছে। এটা খুবই কম। এই জরিমানার পরিমাণ বাড়ানো প্রয়োজন। ঝুঁকিপূর্ণ কাজের তালিকায় শিশুশ্রমকে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।

গৃহকর্মীদের অসহায় অবস্থা তুলে ধরে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারি মহাব্যবস্থাপক ডা. বিশ্বজিৎ রায় বলেন, আমরা যখন পরিদর্শনে যাই, সেখানকার অবস্থা দেখার মতো নয়। অনেক মানবেতরভাবে তারা কাজ করে। শিশু শ্রমিকরা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় কল-কারখানায় কাজ করছে।

শিশু সুরক্ষায় সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাকে একযোগে কাজ করাকে গুরুত্ব দিয়ে ইউনিসেফের চাইল্ড প্রটেকশন অফিসার ফাতেমা খাইরুন্নাহার বলেন, আমাদের জানতে হবে স্কুলে ঝরে পড়া শিশুরা কোথায় যাচ্ছে? ফলোআপ করতে হবে। আমরা একটি শিশু বিভাগ করার জন্য কস্ট ও কাঠামোর বিষয়ে স্টাডি রিপোর্ট মন্ত্রণালয়ে দিয়েছি। একটি অধিদপ্তর প্রয়োজন। তার সাথে রেফারেল মেকানিজম দরকার। শিশুরা কোথায় সুবিধা পাবে, সেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি উপকারভোগী নির্বাচনের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। রাজনৈতিক কমিটমেন্ট থাকতে হবে।

শিশু বিষয়ক আলাদা অধিদপ্তর করার বিষয়টিকে জোর দিয়ে শিশু সুরক্ষায় সরকারের ভাবনা তুলে ধরেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহকারি সচিব মোসা. সালমা আক্তার বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে শিশু বিষয়ক অধিদপ্তর করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতেই এই দপ্তরের কাজ শুরু হবে নাকি আলাদা করা হবে- সেই বিষয়ে আলোচনা চলছে। বর্তমান উপদেষ্টা এখন যে সিদ্ধান্ত দেবেন। তার ওপর নির্ভর করছে অধিদপ্তর কীভাবে হবে?

গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুদের কাজ ঝুঁকিপূর্ণ ও তালিকায় অন্তর্ভূক্তির বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুদের কাজটি ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে।

সভাপতির বক্তব্যে এএসডির সভাপতি ড. আলতাফ হোসেন বলেন, গণতান্ত্রিক ও সমাতান্ত্রিক ভাবনা থাকতে হবে। শিশুশ্রম বন্ধে সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।

গৃহকর্মে যেন শিশুরা নিয়োজিত হতে না পারে এবং আলাদা শিশু বিষয়ক অধিদপ্তর গঠন করা হয়- প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট সবার।

আরবি/জেডআর

Shera Lather
Link copied!