শনিবার, ০৩ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


শাওন সোলায়মান

প্রকাশিত: মে ৩, ২০২৫, ১২:২০ এএম

এমএফএসে রির্চাজে বছরে গচ্চা ১২০০ কোটি টাকা

শাওন সোলায়মান

প্রকাশিত: মে ৩, ২০২৫, ১২:২০ এএম

এমএফএসে রির্চাজে বছরে গচ্চা ১২০০ কোটি টাকা

ছবি : রূপালী বাংলাদেশ

তৃতীয় পক্ষের অ্যাপের মাধ্যমে মোবাইল ইন্টারনেট প্যাকেজ ক্রয় ও রিচার্জে গ্রাহকের অতিরিক্ত হাজার কোটি টাকা খরচের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরের (এমএনও) নিজস্ব অ্যাপ এবং থার্ড পার্টি বা তৃতীয় পক্ষের অ্যাপের মধ্যে ইন্টারনেট প্যাকেজ মূল্যের বৈষম্যের কারণে গ্রাহককে বছরে বাড়তি গুনতে হতে পারে ১ হাজার ২৬১ কোটি টাকা। তবে মূল্যের এই বৈষম্যের বিষয়ে এমএনও এবং থার্ড পার্টি অ্যাপ তথা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্ল্যাটফর্মগুলো দায় নিতে নারাজ। এমন প্রেক্ষাপটে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করতে যাচ্ছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ।


ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এক পরামর্শকের প্রণীত সমীক্ষা বিশ্লেষণে দেখা যায়, বেসরকারি মোবাইল অপারেটর ‘এয়ারটেল’-এর গ্রাহকরা ‘মাই এয়ারটেল’ অ্যাপের মাধ্যমে ৩০ দিন মেয়াদি ৪৫ গিগাবাইট (জিবি) ইন্টারনেট কিনতে পারেন ৪৯৭ টাকায়। কিন্তু এই একই প্যাকেজ এমএফএস প্রতিষ্ঠান ‘বিকাশ’-এ কিনতে গ্রাহকের খরচ হয় ৫৯৮ টাকা। অর্থাৎ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি অনুমোদিত মূল্যের তুলনায় গ্রাহকের অতিরিক্ত ২০ শতাংশ অর্থ খরচ হবে বিকাশে এই প্যাকেজটি কিনতে। প্রতিবছর কমপক্ষে ৫ শতাংশ মোবাইল ব্যবহারকারী এই প্যাকেজ কিনলে গ্রাহকদের মোট অতিরিক্ত খরচ হবে ২২৪ কোটি টাকা।

একইভাবে ৭ দিন মেয়াদে ২০ জিবি ইন্টারনেটের প্যাকেজ বিকাশের মাধ্যমে গ্রাহকদের কিনতে খরচ হবে ১৯৮ টাকা। অথচ এই প্যাকেজটির একই দামে মাই এয়ারটেল অ্যাপে কিনলে পাওয়া যাবে ২৫ জিবি। অর্থাৎ তৃতীয় পক্ষের অ্যাপে কেনার কারণে গ্রাহকদের বিটিআরসি অনুমোদিত প্যাকেজ মূল্যের চেয়ে ৮০ শতাংশ বেশি খরচ করতে হবে। এই প্যাকেজ বাবদ বছরে গ্রাহকদের গচ্চা যেতে পারে ৩৫৫ কোটি টাকা। অন্যদিকে, ৭ দিন মেয়াদে ৪০ জিবি ইন্টারনেট মাই এয়ারটেল অ্যাপে কেনা যায় ২২৮ টাকায়। কিন্তু এটি বিকাশ অ্যাপে কিনলে পাওয়া যাবে ৩৫ জিবি। অর্থাৎ এখানে গ্রাহকদের ৭০ শতাংশ বেশি অর্থ গচ্চার আশঙ্কা দেখা দেয়।

এক বছরে এই প্যাকেজ থেকে গ্রাহকদের অতিরিক্ত খরচ হতে পারে ৩৫৫ কোটি টাকা। একইভাবে, ৭ দিন মেয়াদি ১০ জিবি এবং ৩ দিন মেয়াদি ৫ জিবি ইন্টারনেট বিকাশে কিনতে গ্রাহকদের যথাক্রমে ৫৮ এবং ৫৫ শতাংশ বেশি অর্থ ব্যয় হবে। এক বছরে যার মূল্য যথাক্রমে ২১৮ এবং ১০৯ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে প্যাকেজ মূল্যের এমন হেরফেরে গ্রাহকদের পকেট থেকে বছরে অতিরিক্ত ১ হাজার ২৬১ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকে এমএনও এবং এমএফএসদের।


প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বিষয়টি ব্যাখ্যা করে রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের পক্ষে মন্ত্রণালয়ের একজন পরামর্শক এই সমীক্ষা করেছেন। এতে দেখা যায়, দুটো প্যাকেজের মধ্যে (এমএফএস এবং এমএনও) এমন বৈষম্য থাকে, তাহলে প্যাকেজের সর্বনিন্ম মূল্য বা বিটিআরসি নির্ধারিত ভিত্তিমূল্যের তুলনায় সর্বোচ্চ ১২০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত আদায় হতে পারে। বিভিন্ন প্যাকেজের মধ্যে ফি-বৈষম্য নিয়ে ক্রমাগত অভিযোগ পাই। সেই বৈষম্য দেখতে গিয়ে এই উপাত্ত আবিষ্কার করি।

বাংলাদেশের মানুষের ডিজিটাল লিটারেসি কম। অনেক মানুষ পেমেন্টের বিষয়ে ডিজিটাল লিটারেসি রাখে না। ডিজিটাল লিটারেসির এই অক্ষমতাকে ব্যবহার করে একই ডেটা বান্ডেলের যে পার্থক্য, সেটাকে অনৈতিক মনে করি। এই পার্থক্য চলতে থাকলে, ১২০০ কোটি টাকার মতো অতিরিক্ত আদায় হতে পারে। কিন্তু এর আগেই যদি সমস্যার সমাধান করতে পারি, তাহলে গ্রাহকদের ক্ষতি হবে না। তাই মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, একই কোম্পানির একই ডেটা বান্ডেলÑ বিভিন্ন জায়গায় এত বৈষম্য থাকতে পারবে না।

২০১৬ সালে মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর রবির সাথে একীভ‚ত হয় এয়ারটেল। প্যাকেজের এমন বৈষম্যের বিষয়ে জানতে চাইলে রবি আজিয়াটা লিমিটেডের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম লিখিত বক্তব্যে জানান,     ‘নিয়ম মেনেই রবি আজিয়াটা প্যাকেজ পূর্বানুমোদন নিয়ে বাজারে গ্রাহক পর্যায়ে প্রদান করছে। সেখানে ডেটা এবং ডেটা-সংশ্লিষ্ট প্যাকেজ সম্পর্কিত নির্দেশিকা-২০২৪ অনুসারে প্যাকেজে মূল ইন্টারনেট ভলিউমের সঙ্গে বিভিন্ন চ্যানেলে ভিন্ন ভিন্ন বোনাস দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ১৯৮ টাকায় ৭ দিনে ২০ জিবি ডেটা অফার করা হয়েছে।

এর মধ্যে মূলত ৩.৫ জিবি মূল ডেটা প্যাক আর বাকিটা বোনাস। এ ক্ষেত্রে ডিজিটাল ইনক্লুশান বাড়াতে বিকাশ অ্যাপে সাড়ে ১৬.৫ জিবি বোনাস দিয়ে, ২০ জিবির পাশাপাশি নিজেদের অ্যাপে গ্রাহক আকর্ষণ করতে আরও ৫ জিবি বেশি বোনাস দিয়ে ২৫ জিবির প্যাকেজ সাজানো হয়েছে। নিজেদের অ্যাপের প্রচার করতেই এই প্রমোশনাল অফার। এতে জালিয়াতি তো নয়ই, বরং গ্রাহককে অতিরিক্ত ডেটা উপহার দেওয়া হয়েছে।

বিশেষ সহকারী ফয়েজ তৈয়্যবের বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে লিখিত বক্তব্যে রবির পক্ষ থেকে সাহেদ আলম আরও বলেন, ‘নিয়ন্ত্রক নীতিমালা সম্পর্কে সঠিক ধারণার অভাবে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। নিশ্চিতভাবে বলতে চাই, আমাদের সব ট্যারিফ বিটিআরসি অনুমোদিত সীমার মধ্যে রয়েছে এবং মোবাইল অ্যাপ, এমএফএস এবং ওয়েব পোর্টালে আলাদা বোনাস অফারও নিয়ম মেনে করা হয়েছে। এ বিষয়ে ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে প্রয়োজনীয় যেকোনো তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা করব।’

অন্যদিকে দেশের শীর্ষ এমএফএস বিকাশের করপোরেট কমিউনিকেশনস ও জনসংযোগ বিভাগের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, বিকাশের প্ল্যাটফর্মে মোবাইল রিচার্জ সংক্রান্ত সব প্যাকেজ এবং প্যাকেজের মূল্য সংশ্লিষ্ট টেলিকম সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নির্ধারিত। পেমেন্ট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিকাশ কেবল এ ক্ষেত্রে গ্রাহকের জন্য পেমেন্ট করার সুবিধা দিয়ে থাকে। উল্লেখ্য, বিকাশ অ্যাপের মোবাইল রিচার্জ স্ক্রিনে সুনির্দিষ্ট করে বলা আছে, ‘অফারের বিস্তারিত বা কোনো নির্দিষ্ট অফার পাবেন কি না, সেটা জানতে সংশ্লিষ্ট মোবাইল অপারেটরের সাথে যোগাযোগ করুন।’
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!