শনিবার, ১০ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


হাসান আরিফ

প্রকাশিত: মে ১০, ২০২৫, ০৫:২৩ এএম

আইএমএফের ঋণ কর্মসূচি

সমঝোতা না হলে আটকে যাবে দাতা সংস্থার ৩ বিলিয়ন ডলার

হাসান আরিফ

প্রকাশিত: মে ১০, ২০২৫, ০৫:২৩ এএম

সমঝোতা না হলে আটকে যাবে দাতা সংস্থার ৩ বিলিয়ন ডলার

ছবি-সংগৃহীত

বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ কর্মসূচি থেকে বের হয়ে গেলে আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে পাইপলাইনে থাকা প্রায় ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে যাবে। 

এতে দেশ বড় ধরনের আর্থিক ধাক্কায় পড়বে, যা সাময়িকভাবে সামাল দেওয়া সম্ভব হলেও দীর্ঘ মেয়াদে ঝুঁকি সামাল দেওয়া সম্ভব না-ও হতে পারে। তা ছাড়া পরবর্তীতে আপৎকালীন বা বাজেট সহায়তায় ফের ঋণের জন্য আইএমএফের স্মরণাপন্ন হলে আরও কঠিন থেকে কঠিনতর শর্তের জালে আটকা পড়তে হবে বাংলাদেশকে।

এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, আইএমএফের ঋণ কর্মসূচি নিয়ে এখনই বলা যাচ্ছে না। এর জন্য আরও কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে আইএমএফ ঋণ কর্মসূচি থেকে বের হয়ে গেলে আপাতত তেমন কোনো সমস্যা হবে না। 

কারণ বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৬ বিলিয়ন ডলার আছে। আর আইএমএফের হিসাবে এই মজুত ২০ থেকে ২১ বিলিয়ন ডলার। ফলে এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ঋণ কর্মসূচিতে না থাকলে কোনো সমস্যা হবে না। তবে ভবিষ্যতে আবার ঋণের প্রয়োজন হলে সমস্যা হতে পারে। বিষয়টা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আইএমএফ ঋণ কর্মসূচি থেকে বের হয়ে গেলে অন্যান্য আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থার ঋণ কর্মসূচিও আটকে যেতে পারে। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের ৫০০ মিলিয়ন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ৫০০ মিলিয়ন, এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) ৪০০ মিলিয়ন, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) ২৫০ মিলিয়ন এবং যে আইএমএফের সঙ্গে ঝামেলা চলছে, তাদের এক বিলিয়নের ওপরে অর্থ পাইপলাইনে রয়েছে।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আইএমএফের পক্ষে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনায় একাধিক ভারতীয় রয়েছেন। ওই ব্যক্তিরাই মূলত শর্ত নিয়ে বেশি কঠোর অবস্থান নিয়েছেন, যাতে বাংলাদেশ হয় শর্ত পালন করতে বাধ্য হয় বা এই ঋণ কর্মসূচি থেকে বের হয়ে যায়। কিন্তু পর্যালোচনা কমিটির অন্য প্রতিনিধিরা অতটা কঠোরতা দেখাচ্ছেন না। বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নজরেও এসেছে বলে জানা গেছে। 

আইএমএফের ঋণ কর্মসূচি থেকে বাংলাদেশ সরে দাঁড়াবে কি না, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে। ইতিমধ্যে ঋণের চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড় পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগামী মাসে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ একসঙ্গে পাওয়ার কথা আছে। কিন্তু আইএমএফের সঙ্গে শর্ত পালন নিয়ে দর-কষাকষি চলছে। গত মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার অনলাইন মিটিং করেছেন বাংলাদেশ ও আইএমএফ প্রতিনিধিরা। বাংলাদেশের পক্ষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর নেতৃত্ব দেন। 

তিনি বলেন, কোনো সমঝোতা হয়নি; আরও আলোচনা চলবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো বলছে, আইএমএফের বিভিন্ন শর্ত নিয়ে দর-কষাকষি চললেও মূলত একটি শর্তের ওপর চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থছাড় নির্ভর করছে। সেটি হলো বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার পুরোপুরি উন্মুক্ত করে দেওয়া। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আইএমএফ এই শর্ত থেকে কিছুটা সরে এলেও বাংলাদেশ নিজ অবস্থান থেকে সরতে চাইছে না। বাংলাদেশে এখনো অনেকটা বেঁধে দেওয়া মুদ্রা বিনিময়হার কার্যকর আছে এবং এভাবেই আরও সময় রাখতে চায়, যাতে কমতে থাকা মূল্যস্ফীতি আর না বাড়তে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংক গত ডিসেম্বর মাসে ডলারের নির্দিষ্ট দাম ধরে আড়াই শতাংশ পর্যন্ত ওঠানামার একটি সীমা বেঁধে দেয়। তখন বলা হয়, ১২৩ টাকা পর্যন্ত ডলার লেনদেন করা যাবে। এখন ১২২ থেকে ১২৩ টাকা দরে ডলার বেচাকেনা করছে ব্যাংকগুলো।

শুরুতে আইএমএফ বিদেশি মুদ্রার বিনিময়হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার অবস্থানে ছিল, যা বাজারই নির্ধারণ করবে ডলারসহ বিদেশি মুদ্রার দাম কত হবে। কিন্তু এখন অবস্থান কিছুটা পরিবর্তন করে নমনীয় হয়ে বলছে ডলারের নির্দিষ্ট দাম ধরে আড়াই শতাংশ পর্যন্ত ওঠানামার যে সীমা রয়েছে, সেই সীমা আরও বাড়িয়ে দিতে। বাংলাদেশ তাতে রাজি নয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মতে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে মুদ্রা বিনিময়হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া কঠিন। পুরোপুরি বাজারনির্ভর বিনিময়হার ব্যবস্থা চালু হলে যেকোনো সময় অর্থনীতিতে বড় আঘাত আসতে পারে।

২০২২ সাল থেকে বাংলাদেশে ডলারের দাম বেড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ডলারের দাম কৃত্রিমভাবে ধরে রাখায় ইউক্রেন যুদ্ধসহ বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে হঠাৎ করে ডলারের দাম বাড়তে থাকে। আড়াই বছরে মার্কিন মুদ্রার দাম এই সময়ে ৮৫ টাকা থেকে বেড়ে ১২০ টাকায় উঠেছে।

ডলারের দাম ছাড়া কৃষি, জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি কমানো, রাজস্ব খাতে সংস্কার, এসব শর্তও আছে আইএমএফের। অবশ্য এসব শর্ত ধাপে ধাপে পূরণ করছে বাংলাদেশ। মোট সাত কিস্তিতে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ পাওয়ার কথা বাংলাদেশের। ইতিমধ্যে তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে ২৩১ কোটি ডলার পাওয়া গেছে, বাকি আছে ২৩৯ কোটি ডলার।

আইএমএফ ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়ে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে গত এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে আইএমএফের মিশন শেষ হয়। তখন শর্তের বিষয়ে কোনো সমঝোতা হয়নি। পরে গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন সভায় অংশ নিতে গিয়ে বাংলাদেশের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আইএমএফের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আবার বৈঠক করেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, ওই বৈঠকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নিয়ে সমঝোতা হয়। আগে আইএমএফ লক্ষ্য দিয়েছিল, চলতি অর্থবছরের ৫ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা আদায় করতে হবে। এখন ৪ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা আদায়ের নতুন লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে, এতে বাংলাদেশ রাজি হয়।

অন্যদিকে বিনিময়হার উন্মুক্ত করার বিষয়টি অমীমাংসিত থেকে যায় ওই বৈঠকে। আইএমএফের চাওয়া হলো, বিনিময়হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া। যদি অর্থনীতিতে সমস্যা হয়, তাহলে এখন যে তিন টাকা ওঠানামার সীমা আছে, তা সাত থেকে আট টাকা করা যেতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশ চায়, বিনিময়হার বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে রিজার্ভসহ বিভিন্ন খাতে যে চাপ সৃষ্টি হবে, তা মোকাবিলায় ১০০ কোটি ডলারের স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড বা স্থিতিশীলতা রক্ষা তহবিল চায়। এভাবে বিষয়টি এখন ঝুলে আছে।

জানা গেছে, স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৩ বার আইএমএফের কাছ থেকে ছোট-বড় ঋণ নিয়েছে বাংলাদেশ। ২০১২ সালে সর্বশেষ নেওয়া বর্ধিত ঋণ-সহায়তার (ইসিএফ) ১০০ কোটি ডলার পেয়েছিল বাংলাদেশ। সব কিস্তিও পেয়েছে বাংলাদেশ।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এর আগে কোনো ঋণ কর্মসূচিই পুরোপুরি শেষ করা সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ ২০০৩ সালে দারিদ্র্যবিমোচন ও প্রবৃদ্ধি সহায়তা (পিআরজিএফ) কর্মসূচিতে ৪৯ কোটি ডলার পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাক্সিক্ষত সংস্কার না হওয়ায় তিন কিস্তি পাওয়ার পর বাকি তিন কিস্তি স্থগিত করেছিল আইএমএফ।

এ ছাড়া ১৯৯১ সালে আরেকটি ঋণ কর্মসূচির শর্ত হিসেবে অর্থনৈতিক সংস্কারে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় মাঝপথে স্থগিত হয়। পরের ১০ বছর আইএমএফের সঙ্গে কোনো ঋণ কর্মসূচিতে যায়নি বাংলাদেশ। ১৯৭৩ সালে আইএমএফের কাছে প্রথম প্রায় ৪ কোটি ডলার ঋণ নেয় বাংলাদেশ।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, আইএমএফের ঋণ স্থগিত হলে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে যে নেতিবাচক বার্তা যাবে, তাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে বাংলাদেশ আস্থা হারাতে পারে। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছে যে ২০০ থেকে ২৫০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তার আলোচনা চলছে, সেগুলো বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

তিনি বলেন, আইএমএফের ঋণ কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে ব্যাংকিং খাত, করব্যবস্থা, সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনা, বিনিময়হার নীতিসহ যেসব অর্থনৈতিক সংস্কারের কথা দীর্ঘদিন ধরে বলা হচ্ছে, কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের কারণে করা যায়নি। আইএমএফের কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে ওই সব সংস্কার করা তুলনামূলক সহজ হবে। এ ছাড়া বহির্বিশ্বে একধরনের বার্তা যাবে, বাংলাদেশের পাশে আইএমএফ আছে। নয়তো বিপরীত চিত্র দেখা দিতে পারে।

গত বৃহস্পতিবার ইতালির মিলানে এডিবির প্রেসিডেন্ট মাসাতো কান্দার সঙ্গ দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ দেশের কর প্রশাসনের আধুনিকায়নে এডিবির সম্পৃক্ততা ‘আরও গভীর’ করার প্রস্তাব দিয়েছেন। একই সঙ্গে ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা তুলে ধরে কিছু ক্ষেত্রে এডিবির সম্পৃক্ততা আরও গভীর করার প্রস্তাব দেন।

যার মধ্যে রয়েছেÑ সমন্বিত নদী ব্যবস্থাপনা, কর প্রশাসনের আধুনিকায়ন ও ভবিষ্যতের জন্য উপযোগী শিক্ষা ও দক্ষতায় বিনিয়োগ। এ ছাড়া জ্বালানি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জলবায়ু সহনশীলতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় এডিবির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে এডিবির মোট পোর্টফোলিও বর্তমানে ৩ হাজার ২৫০ কোটি ডলার। এর মধ্যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ২৯৪ কোটি ডলারও আছে, যা উভয় পক্ষের দৃঢ় সহযোগিতার প্রতিফলন।

Link copied!