ঢাকা শনিবার, ০৭ জুন, ২০২৫

নিষিদ্ধ সংগঠনে জড়িত থাকার অভিযোগ নিয়ে মুখ খুললেন এজাজ

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ৬, ২০২৫, ০৬:৫০ পিএম
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। ছবি-সংগৃহীত

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ উগ্রবাদী সংগঠন হিযবুত তাহরিরের ‘শীর্ষ নেতা’ ছিলেন বলে অভিযোগ করেছিলেন আল-জাজিরার সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের।

গত ১৬ মে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তিনি লেখেন, ‘মোহাম্মদ এজাজ নিষিদ্ধ ঘোষিত উগ্রপন্থি সংগঠন হিযবুত তাহরিরের অন্যতম শীর্ষ নেতা ছিলেন। ছাত্রজীবনে তিনি ইসলামী ছাত্র শিবিরের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং ২০০২ সাল থেকে হিযবুত তাহরিরের হয়ে কাজ শুরু করেন।’

পোস্টে সায়ের কিছু ‘ডকুমেন্টস’ও যুক্ত করেন। তার পোস্ট ও ‘ডকুমেন্টস’ নিয়ে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। পরে ১৮ মে বিষয়টির প্রতিবাদ জানায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। মোহাম্মদ এজাজকে নিষিদ্ধ  উগ্রপন্থি সংগঠন হিযবুত তাহরিরের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন, বিভ্রান্তিকর ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে প্রতিবাদ জানায় ডিএনসিসি। 

এবার বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। শুক্রবার (৬ জুন) একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এজাজ বলেন, ‘২০০২ সালে আমাকে গ্রেপ্তারের কথা মিথ্যা। ২০১৪ সালে ফারাক্কা ইস্যুতে সরকারের অবস্থানের বিরোধিতা করায় আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেনস্তা করা হয়। আমার ভাড়াটিয়াদের নামে মামলা দিয়ে আমাকে জড়ানো হয়। পরে সেই ঘটনাকে ব্যবহার করে কাগজে-কলমে আমাকে একটি নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্য দেখানো হয়—যেটি ছিল সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ফ্রেমিং।’

নিষিদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি কখনো কোনো ধর্মভিত্তিক গোষ্ঠীর পক্ষে কথা বলিনি, কাজও করিনি। কেউ তার কোনো প্রমাণ দেখাতে পারবে না।’

নিজের নিয়োগের বিষয়ে তিনি দাবি করেন, কোনো রাজনৈতিক সুপারিশ বা ব্যক্তিগত যোগাযোগ নয়, বরং কাজের মূল্যায়ন করেই প্রধান উপদেষ্টার সরাসরি সিদ্ধান্তে তাঁকে এই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘আমার কোনো গোপন কিছু নেই—সবই প্রকাশ্য। হয়তো আমার কাজ দেখেই মনে করেছেন, আমি নগর ইস্যুগুলো নিয়ে কাজ করতে পারব।’

সম্প্রতি স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের একটি সুপারিশপত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এজাজ বলেন, ‘যে সুপারিশপত্রটি ভাইরাল হয়েছে, সেটির ভিত্তিতে আমাকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বরং একটি আলাদা প্রসিডিংয়ের মাধ্যমে আমাকে নিয়োগ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।’

তিনি বলেন, ‘উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সঙ্গে আমার আগে কোনো ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল না। তবে গত দুই দশকে নানা ফোরামে বক্তব্য দেওয়ার কারণে হয়তো তাঁকে অনেকে চিনতাম।’

এদিকে, গত ২০ মে এজাজকে নিষিদ্ধ সংগঠন ‘হিযবুত তাহরিরের নেতা’ আখ্যা দিয়ে তার অপসারণের দাবিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে গণঅধিকার পরিষদ।

সেখানে গণঅধিকার পরিষদের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘নিষিদ্ধ সংগঠনের একজন নেতা যখন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের প্রধানের দায়িত্ব পান, তার মানে আর বুঝতে বাকি থাকে না। এই সরকার জনগণের সরকার নয়; তারা জনগণের আকাঙ্ক্ষা নয়, আওয়ামী লীগের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে বেশি তৎপর।’

তিনি বলেন, ‘এই মোহাম্মদ এজাজের ইতিহাস সবাই জানে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত মোহাম্মদ এজাজ নিষিদ্ধ সংগঠন হিজবুত তাহরিরের সক্রিয় নেতা ছিলেন। শুধু নেতা বললে ভুল হবে, প্রথম সারির নেতা ছিলেন; শীর্ষ এক থেকে পাঁচজনের মধ্যে ছিলেন। এই হিজবুত তাহরির করার কারণে একাধিকবার তাকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছিল।’

ফারুক হাসান অভিযোগ করেন, ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগসাজশে জেল থেকে বেরিয়ে দলটিতে যোগ দেন মোহাম্মদ এজাজ। ২০২৩ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ধান্দাবাজি, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজিতে জড়িত ছিলেন তিনি।’

অবশেষে শুক্রবার (৬ জুন) সেই অভিযোগের বিষয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেন মোহাম্মদ এজাজ। তিনি দাবি করেন, এসব পুরোটাই মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ফ্রেমিংয়ের অংশ।

তিনি বলেন, ‘আমি কোনো নিষিদ্ধ বা ধর্মভিত্তিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। আমার কাজ প্রকাশ্য—আমাকে কাজ দিয়ে বিচার করুন।’