ঢাকা শুক্রবার, ১৩ জুন, ২০২৫

‘এক নম্বর লক্ষ্যে’র কথা জানালেন ড. ইউনূস

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ১১, ২০২৫, ১১:১০ পিএম
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি-সংগৃহীত

রাজনৈতিক ‘বাদানুবাদ’ চলছেই। কেউ চাচ্ছেন দ্রুত নির্বাচন, কেউ সংস্কার ও জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার। এ নিয়ে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ক্রমশ ‘বিভক্তি’ বাড়ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

তারা মনে করছেন, রাজনৈতিক ‘কাদা ছোড়াছুড়ি’ বাড়লে পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তি আওয়ামী লীগ সুযোগ নিতে পারে। ফলে আবারও দেশ অস্থিরতার মধ্যে ‘ডুবে’ যেতে পারে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। সংলাপের কেন্দ্রবিন্দু বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন।

সংলাপে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল ডিসেম্বরেই নির্বাচন চেয়ে অবস্থানে অনড় রয়েছে। অপরদিকে, জামায়াত ও এনসিপিসহ আরও কয়েকটি দল সংস্কার ও বিচারের পর নির্বাচনের কথা বলেছে। 

এ পরিস্থিতিতে গত ৬ জুন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় ঘোষণা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। ২০২৬ সালের এপ্রিল মাসের প্রথমার্ধের যেকোনো একটি দিনে নির্বাচন হবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।

ওইদিন তিনি বলেন, ‘এই ঘোষণার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন উপযুক্ত সময়ে আপনাদের কাছে নির্বাচনের বিস্তারিত রোডম্যাপ প্রদান করবে।’

নির্বাচনের সময় ঘোষণার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বিএনপি বলেছে, তারা এপ্রিলে নির্বাচনে রাজি নয়, ডিসেম্বরেই নির্বাচন হতে হবে। 

এ ছাড়া জামায়াত ও এনসিপি জানিয়েছে, বিচার ও সংস্কার শেষ করে এপ্রিলে নির্বাচন হলে তাদের ‘আপত্তি’ নেই। গণঅধিকার পরিষদ বলেছে, জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতে হলে ভালো হয়। অপরদিকে, সিপিবিসহ কয়েকটি বামপন্থি দল বলেছে, তারাও ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চায়। 

এমন ‘বিভাজিত’ পরিস্থিতির মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানালেন তার ‘এক নম্বর লক্ষ্যে’র কথা। 

চারদিনের সরকারি সফরে লন্ডনে অবস্থানরত মুহাম্মদ ইউনূস বুধবার (১১ জুন) গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউজের রয়্যাল ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স আয়োজিত সংলাপে অংশ নিলে তাকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। সেখানে তিনি এ লক্ষ্যের কথা জানান।

ইউনূস বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠাই সরকারের ‘এক নম্বর লক্ষ্য’।

তিনি বলেন, ‘এখন সবকিছুই আমরা সামাল দিতে পারছি। এটা এমন এক সময়, যখন আমরা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ পার হয়ে এসেছি। এখন পরিস্থিতি শান্ত, শৃঙ্খলায় এসেছে এবং আমরা এগুলো মোকাবিলা করছি।’

ঐক্যের প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য আমাদের ‘এক নম্বর লক্ষ্য’। আমরা একসঙ্গে বসছি, আলোচনা করছি, একটি ‘জুলাই চার্টার’ তৈরি করার চেষ্টা করছি। এটা সহজ কাজ নয়—সব দলকে একসঙ্গে বসিয়ে আলোচনা করা। কিন্তু আমরা সেটা করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি এখানে আপনাকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি এবং আশা করি, আমি তা রাখতে পারব—জুলাই মাসেই, সব দলের উপস্থিতিতে সেই চার্টার ঘোষণা করা হবে। এটাই একটি দেশের জন্য সবচেয়ে বড় ঐক্য হতে পারে।’

এদিকে, অধ্যাপক ইউনূসের এ সফরেই তার সঙ্গে প্রথমবারের মতো সাক্ষাৎ হতে যাচ্ছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের। আগামী ১৩ জুন (শুক্রবার) তাদের মধ্যে সাক্ষাৎ হতে পারে। একই সঙ্গে একটি ‘ওয়ান টু ওয়ান’ বৈঠকও হতে পারে। বিএনপির একটি উচ্চ পর্যাযের সূত্রে এমনটাই জানা গেছে।

দলটির একাধিক সূত্র জানায়, ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক হবে লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে বৈঠকটি নির্ধারণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে তারেক রহমানকে আমন্ত্রণও জানানো হয়েছে।

ধারণা করা হচ্ছে, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তাদের এই সাক্ষাৎ বিশেষ গুরুত্ব বহন করবে। বৈঠকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন গুরত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন তারা।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তী সরকারের এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা করবেন তারেক রহমান। তা ছাড়া দেশে ফেরার বিষয় নিয়েও আলোচনা করতে পারেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।