জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের কাছে আওয়ামী লীগের দুই পলাতক নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মির্জা আজম ই-মেইলে জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন কমিশনের সভাপতি ও বিডিআরের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান।
বুধবার (২৫ জুন) রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে অবস্থিত বিআরআইসিএম ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
কমিশনের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত বিডিআর হত্যাকাণ্ড ছিল একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। এতে রাজনৈতিক নেতাদের বিভিন্ন মাত্রায় সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিশন।
লিখিত বক্তব্যে ফজলুর রহমান বলেন, ‘বিদ্রোহের সময় আইনশৃঙ্খলা ও সামরিক বাহিনী নিষ্ক্রিয় ছিল। সহায়তা চেয়েও পিলখানায় আটকে পড়া অফিসাররা কোনো সহায়তা পাননি। রাজনৈতিক সমাধানের নামে সময়ক্ষেপণই হত্যাকাণ্ডের পথ প্রশস্ত করেছে।’
এ ছাড়াও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর চরম ব্যর্থতা, আলামত নষ্ট, দিক পরিবর্তনের চেষ্টাসহ কয়েকটি বিষয়ে তদন্তে অভিযোগ উঠে এসেছে বলে জানান তিনি।
কিছু প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীর জবানবন্দিতে বিদেশি ভূমিকার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে বলেও জানানো হয়। একই সঙ্গে অভিযোগ ওঠে, কিছু গণমাধ্যম পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ প্রচার করে বিদ্রোহ উসকে দিয়েছিল এবং সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে ভূমিকা রেখেছিল।
সাক্ষীদের ভাষ্যে উঠে এসেছে, কর্মকর্তাদের খুঁজে খুঁজে হত্যা, নারী ও শিশুদের ওপর অমানবিক নির্যাতন, বাসা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, পানি-খাবার ছাড়া আটকে রাখা, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস।
এখন পর্যন্ত ১৫৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি রয়েছে আরও ৫০ জনের সাক্ষ্য।
সাক্ষ্য দিয়েছেন, ৫৫ জন সামরিক কর্মকর্তা (প্রাক্তন সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী প্রধানসহ), ২০ জন অসামরিক কর্মকর্তা (সাংবাদিক, আমলা, তৎকালীন আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনার), ৯ জন বেসরকারি নাগরিক, ২৫ জন দণ্ডপ্রাপ্ত বিডিআর সদস্য, ২৯ জন কারামুক্ত সদস্য, ১৫ জন শহীদ পরিবারের সদস্য ও জীবিত কর্মকর্তা, ৮ জন রাজনৈতিক নেতা (৩ কারাবন্দি, ৩ সরাসরি সাক্ষ্যদানকারী, ২ জন পলাতক যারা ই-মেইলে জবানবন্দি দিয়েছেন)।
কমিশন জানিয়েছে, ৬টি দেশের দূতাবাস ও জাতিসংঘ অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। এখনো কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীর খোঁজ পাওয়া যায়নি এবং দেশি-বিদেশি তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ অসম্পূর্ণ। তাই তদন্তের সময়সীমা আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর অনুরোধ করা হয়েছে।
তদন্তের স্বার্থে ৩৩ জন ব্যক্তির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পলাতকদের জবানবন্দি সংগ্রহে এরই মধ্যে তিনটি বিশেষ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে কমিশন।
কমিশন আরও জানিয়েছে, এটি কেবল বিদ্রোহ নয়, এটি ছিল একটি ভয়াবহ, পরিকল্পিত গণহত্যা- যার পেছনে রয়েছে গাফিলতি, ব্যর্থতা এবং গভীর রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা।