ঢাকা রবিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৫

পক্ষপাতদুষ্ট বিদেশি পর্যবেক্ষকদের অনুমোদন নয়: সিইসি

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ৮, ২০২৫, ০২:০৩ পিএম
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন। ছবি- সংগৃহীত

পক্ষপাতদুষ্ট বিদেশি পর্যবেক্ষকদের এবার অনুমোদন নয় বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন।

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার  বলেন, ‘গত তিনটি সংসদ নির্বাচন ‘সুন্দর, গ্রহণযোগ্য’ হয়েছে বলে সাফাইকারী বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আর অনুমোদন দেবে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘গত তিনটা নির্বাচনে যারা সার্টিফিকেট দিয়েছে- ‘খুব সুন্দর, ক্রেডিবল নির্বাচন’ হয়েছে, তাদের নেব কেন? যাদের অভিজ্ঞতা আছে, ক্রেডিবিলিটি আছে তাদের নেব।’

আগামী নির্বাচনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যবেক্ষণে আসতে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন সিইসি নাসির উদ্দিন।

তিনি বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) আমরা অলরেডি পর্যবেক্ষণের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তারা বলছিল আসতে চায়।’

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন বিএনপি অংশ নেয়নি। ফলে ১৫৩টি আসনে আওয়ামী লীগ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়।
এতে ভোটার অনুপস্থিতি ও বৈধতার প্রশ্ন ওঠে।

ওই নির্বাচনকে স্বাগত জানিয়েছিল কয়েকটি দেশ। তাদের মধ্যে রয়েছে- ভারত, চীন ও রাশিয়া। 

তৎকালীন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই নির্বাচনকে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখার একটি পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেছিল। 
ভারতের সরকারদলীয় প্রতিনিধিরা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ‘বিতর্কিত’ বিজয়কে স্বাগত জানান।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছিল, ‘নির্বাচন অভ্যন্তরীণ বিষয়, বাইরের হস্তক্ষেপ কাম্য নয়।’ তারা নির্বাচনের বৈধতা স্বীকার করেছিল।

তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য নির্বাচনকে ‘অংশগ্রহণহীন’, ‘গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর’ বলে অভিহিত করে।

২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট অংশ নেয়। তবে ব্যাপক ভোট কারচুপি ও আগের রাতে ব্যালট ভর্তি হওয়ায় তারা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে। আওয়ামী লীগ একতরফাভাবে বিতর্কিত জয় পায়।

ওই নির্বাচনের ‘সাফাই’ও দিয়েছিল ভারত, চীন ও রাশিয়া।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছিল, ‘নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমরা ফলাফলকে স্বাগত জানাই।’

রাশিয়া বলেছিল, ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করাই উচিত। নির্বাচন ছিল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অংশ।’

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শেখ হাসিনাকে ফোন করে অভিনন্দন জানান।

ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের জনগণ গণতান্ত্রিকভাবে তাদের নেতৃত্ব নির্বাচিত করেছে।’

এ ছাড়াও ওআইসি পর্যবেক্ষক দল বলেছিল, ‘নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল হয়েছে।’

২০২৪ সালের নির্বাচন নিয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছিল, ‘বাংলাদেশে নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং জনগণ তাদের সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করেছে। আমরা নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানাই।’

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘বাংলাদেশে নির্বাচন হয়েছে সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যেই। আমরা যেকোনো বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরোধী।’ রাশিয়া দাবি করে, পশ্চিমা দেশেরা ‘হাইব্রিড যুদ্ধের’ অংশ হিসেবে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শেখ হাসিনাকে টেলিফোন করে অভিনন্দন জানান এবং বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশে শান্তি ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা কামনা করে।’

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা ঢাকায় এসে বলেন, ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় ভারত হস্তক্ষেপ করে না।’

নির্বাচনের পর পাঠানো এক বিবৃতিতে ওআইসি বলে, ‘নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে এবং বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ধারা বজায় রয়েছে।’