ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫

স্কুলশিক্ষিকার বিরুদ্ধে কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ

ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৩, ২০২৫, ০১:০৩ পিএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ব্যবসার প্রলোভন দেখিয়ে নারী উদ্যোক্তা নিলুফা জাহান লিপির কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে স্কুলের সিনিয়র শিক্ষিকা ফারজানা আহমেদ সুমনার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় শিক্ষিকা ফারজানা আহমেদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও প্রাপ্য টাকা ফেরত পেতে সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগী।

বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে শহরের কমলপুর হাজী হোটেল অ্যান্ড রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষিকা ফারজানা আহমেদ সুমনার প্রতারণা বিষয়টি জনসম্মুখে প্রকাশ করেন ভুক্তভোগী নিলুফা জাহান লিপি ও তার স্বামী মাসুম সরকার।

তারা বলেন, ওই শিক্ষিকা একজন ভদ্রবেশী প্রতারক। ভৈরবের বহু নারী-পুরুষ তার প্রতারণার শিকার হয়ে লাখ লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মিষ্টভাষী শিক্ষিকা একই ব্যবসায় পার্টনারের কথা বলে এবং সুদের বিনিময়ে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে মানুষকে সর্বশান্ত করেছে।

এদিকে লিখিত বক্তব্যে নারী উদ্যোক্তা নিলুফা জাহান লিপি বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে কাপড়ের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। একই ভবনে বসবাস করার সুবাদে ভৈরব রেলওয়ে স্কুলের সিনিয়র শিক্ষিকা ফারজানা আহমেদ সুমনার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরিচয়ের একপর্যায়ে ওই শিক্ষিকা লিপিকে এক কবিরাজের কাছে নিয়ে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের ঝাড়ফুঁক করান।

পরবর্তীতে তাকে ধর্মমেয়ে বানিয়ে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করেন শিক্ষিকা। তার প্রতি গভীর বিশ্বাসের সুযোগ তৈরি করে প্রথমে ‘উৎসব গ্যালারি’ ব্যবসার কথা বলে আড়াই লাখ টাকার কাপড় নেন। পরবর্তীতে স্বপ্ন আউটলেট নামে একটি নতুন ব্যবসা শুরু করার কথা বলে এবং সেই ব্যবসায় ৩০ শতাংশ পার্টনারশিপের প্রলোভন দেখান।

এই প্রলোভনে তার কথায় বিশ্বাস করে প্রবাসী স্বামীর পাঠানো পোস্ট অফিসের এফডিআর ভেঙে ১০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার বিক্রি করে আরও ২০ লাখ টাকাসহ মোট ৩০ লাখ টাকা ওই শিক্ষিকার হাতে তুলে দেন। ৩০ লাখ টাকার একটি ব্যবসায়িক চুক্তি হয় তাদের মধ্যে।

কিছুদিন পর ওই শিক্ষিকা ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে কয়েক মাসের জন্য আরও ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা লাগবে বলে জানান এবং ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা লোন পেলে সব টাকা ফেরত দেবেন বলে আশ্বস্ত করেন। পরে ওই নারী উদ্যোক্তা বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে সুদের বিনিময়ে আরও ৭০ লাখ টাকা এনে দেন শিক্ষিকা ফারজানাকে।

কিন্তু কিছুদিন পর তিনি জানতে পারেন ফারজানা আহামেদ ও তার স্বামী শামীম আহমেদ ভূঁইয়া ভৈরবের বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে একইভাবে প্রতারণা করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ওই টাকা ফেরত চাইলে তারা উল্টো মিথ্যা মামলা ও হুমকি দিয়ে ভয় দেখা তো বলে অভিযোগ করেন।

ভুক্তভোগী নারী উদ্যোক্তা বলেন, পাওনা টাকা ফেরত চাইলে তারিখ দিয়ে দিব দিচ্ছি বলে গড়িমসি করে সময় পাড় করেন। সর্বশেষ তিন মাসের সময় নিয়ে ২০২৪ সালের ১৮ এপ্রিল শিক্ষিকার নামের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ৭০ লাখ টাকার একটি চেক দেন লিপিকে।

কিন্তু ২১ এপ্রিল ব্যাংকে চেক নিয়ে গেলে জানতে পারেন তার অ্যাকাউন্টে কোনো টাকাই নেই। ফলে চেকটি ডিজঅনার হয়। পরবর্তীতে ১৯ মে ২০২৪ সালে ওই শিক্ষিকাকে উকিল নোটিশ পাঠানো হয় এবং ২০২৫ সালে কিশোরগঞ্জ আদালতে ৭০ লাখ টাকার চেক ডিজঅনারে দায়ের করেন যার মামলা নং-৩৭১/২৫।

ভুক্তভোগী জানান, ফারজানা আহমেদ ও তার স্বামী তাদের পাওনা টাকা ফেরত না দিয়ে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি ও মিথ্যা মামলার হুমকি দেওয়ায় বর্তমানে তিনি পরিবার নিয়ে ভয় ও আতংকের মধ্যে রয়েছেন। তাই তিনি প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করে এবং প্রতারণায় অভিযুক্ত শিক্ষিকা ফারজানা আহমেদ ও তার স্বামী শামীম আহমেদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত করে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

এদিকে স্বপ্ন আউটলেটের দোকান নিয়েও মালিক ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ব্যবসায়িক ঝামেলা সৃষ্টি হলে কিছুদিন আগে ভৈরব বাসস্ট্যান্ড থেকে স্বপ্নের কর্তৃপক্ষ শোরুমের মালামাল সরিয়ে নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করে দেন।

অপরদিকে, অভিযুক্ত বাংলাদেশের রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষিকা ফারজানা আহমেদ সুমনা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন আদালতের মাধ্যমে সবকিছু ফায়সালা হবে।