ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫

অটোরিকশার দৌড়াত্ম্যে হারিয়ে যাচ্ছে প্যাডেলচালিত রিকশা

বাসস
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৩, ২০২৫, ০৪:০০ পিএম
প্যাডেলচালিত রিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। ছবি- সংগৃহীত

ক্রিং, ক্রিং শব্দে এক সময় শহরের রাস্তাঘাট, অলিগলিতে দাপিয়ে বেড়াত প্যাডেলচালিত রিকশা। শুধু শহরে নয়, গ্রামীণ সড়কের চলত এ ধরনের রিকশা। রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে এ রিকশাচালকরা ঘুরিয়ে যেতেন জীবনের চাকা। এই রিকশাই ছিল নিম্ন আয়ের পরিবারের জীবিকার প্রধান উৎস। কিন্তু আধুনিকতায় ছোঁয়ায় প্যাডেলচালিত রিকশা এখন হারিয়ে যাচ্ছে। এর স্থান দখল করে নিচ্ছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা।

জানা গেছে, প্যাডেলচালিত রিকশায় পরিশ্রম বেশি হলেও আয় তুলনামূলক কম। বিপরীতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় কম শ্রমে বেশি আয়ের সুযোগ রয়েছে। এ কারণে চালকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে অটোরিকশা। নিম্ন আয়ের মানুষেরা পেশা পরিবর্তন করে অটোরিকশা চালানোর দিকে ঝুঁকছেন। এ ছাড়া বেকার তরুণ ও যুবকরাও অটোরিকশা কিনে রাস্তায় নেমে পড়ছেন। অটোরিকশা দ্রুত চলাচল ও আরামদায়ক সিটেরও কারণে যান হিসেবে এটিকে বেছে নিচ্ছেন যাত্রীরা।

জয়পুরহাট শহর ও উপজেলাগুলোয় আগে শুধু প্যাডেলচালিত রিকশা চললেও এখন শতকরা ৯৫ ভাগই অটোরিকশা বা অটোবাইক চলাচল করে। দু-একটি প্যাডেলচালিত রিকশা চোখে পড়লেও যাত্রী সংখ্যা কম। যাত্রীরা এখন তাড়াতাড়ি গন্তব্যে পৌঁছাতে চান তাই এ অবস্থা বলে জানান অনেক রিকশাচালক।

এ ব্যাপারে শহরের মাছবাজার এলাকার প্যাডেলচালিত রিকশাচালক জহুরুল ইসলাম বলেন, গত ২০ বছর ধরে প্যাডেলচালিত রিকশা চালাই। আমার ৪ জনের সংসার এই রিকশার উপার্জনেই চলে। আগে প্রতিদিন ৪শ থেকে ৫শ টাকা আয় হলেও এখন আর আয় তেমন হয় না। যুগ বদলেছে। তাই আমাদের চাহিদা কমে গেছে। এখন দিনে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা আয় করা কষ্ট হয়ে পড়েছে। সংসারের অবস্থা ভালো না। তাই বাধ্য হয়েই এ কাজ করছি। টাকা-পয়সা বেশি থাকলে আমিও অটোরিকশা কিনতাম।

শহরের শান্তিনগর মহল্লার প্যাডেলচালিত রিকশার চালক মো. হাসেম জানান, আগে বাড়ির সামনে যাত্রীরা হেঁটে গিয়ে প্যাডেলরিকশায় উঠত কিন্তু এখন যাত্রীরা আর হাঁটতে চায় না। তারা বাসা-বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকে অটোরিকশার জন্য। আগামীতে এই পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় যেতে হবে, নইলে সংসার চালাতে পারব না।

এ ব্যাপারে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক নতুনহাট এলাকার মো. মেহেদী বলেন, প্যাডেলচালিত রিকশায় কষ্ট বেশি, আয় কম। শহরে অটোরিকশা চালাই। দিনে ৫শ থেকে ৬শ টাকা আয় করি। এই টাকায় সংসার মোটামুটি ভালোভাবেই চলে।

অটোরিকশাচালক আরমান খান বলেন, আগে ভবঘুরে হয়ে ঘুরতাম। এখন লোন নিয়ে বাসা থেকে অটোরিকশা কিনে দিয়েছে। প্রতিদিন রিকশা চালিয়ে যা আয় করি সেখান থেকে কিস্তির টাকা দেই। এতে আমার পরিবার মোটামোটি ভালোই চলে। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেলায় আগে শতাধিক স্থানে প্যাডেলচালিত রিকশা তৈরি করা হতো। এখন সেসব কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। যেসব টিকে আছে তারা অটোরিকশা তৈরি করছে। 

এ ছাড়া বর্তমানে জেলার অন্তত ২৫টি কারখানায় প্রতি মাসে ৮০ থেকে ১০০টি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা তৈরি করা হয়। এসব কারখানার সরকারি অনুমোদন না থাকলেও তারা দেদার অটোরিকশা তৈরি করে তা নগদে ও কিস্তিতে চালকদের কাছে বিক্রি করছে।

শহরের অটোরিকশা কারখানার মালিক আল-আমিন জানান, একটি অটোরিকশা তৈরি করতে খরচ পড়ে ৮০-৮৫ হাজার টাকা। ব্যাটারি ও মোটরসহ খরচ হয় ১ লাখ ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা। অনেকে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে আটোরিকশা কেনেন। আমরা চালকদের কাছে এসব গাড়ি দেড় লাখ টাকার মতো বিক্রি করি। কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। তাই অটোরিকশার দামও বৃদ্ধি করতে হচ্ছে।