যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যা আগামী পহেলা আগস্ট থেকে নতুন শুল্ক কার্যকর হবে। এই নীতির ফলে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা ও সরবরাহ শৃঙ্খলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। এমন প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠেছে—বাংলাদেশ কীভাবে এ ধরনের অতিরিক্ত শুল্কের চাপ থেকে নিজেকে রক্ষা করবে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতি হিসেবে বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই এখনই কার্যকর কৌশল গ্রহণ না করলে, হঠাৎ কোনো শুল্কনীতি পরিবর্তনের ফলে রপ্তানিতে বড় ধাক্কা আসতে পারে।
জেনারালাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্স (জিপিএস) পুনঃপ্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ
২০১৩ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশের জিপিএস সুবিধা বাতিল করে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও তৈরি পোশাক পণ্য এতে অন্তর্ভুক্ত ছিল না, তবুও প্রতীকীভাবে এটা ছিল বাংলাদেশকে একটি বার্তা। বাংলাদেশ যদি শ্রমমান, পরিবেশনীতি ও শ্রমিক অধিকারে বাস্তব অগ্রগতি নিশ্চিত করে, তবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে জিপিএস সুবিধা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য আবেদন করতে পারে, যা আরোপিত উচ্চ শুল্কের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করবে।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির উদ্যোগ
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি মুক্ত বা প্রেফারেন্সিয়াল বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ বা পিটিএ) করার উদ্যোগ গ্রহণ করলে বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত বা হ্রাসকৃত হারে রপ্তানির সুযোগ পেতে পারে। এ ধরনের চুক্তি সময়সাপেক্ষ হলেও দীর্ঘমেয়াদে এটি বাংলাদেশের রপ্তানি খাতকে স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক হতে পারে।
রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্য ও উৎস স্বচ্ছতা
যুক্তরাষ্ট্রে অনেক সময় সন্দেহ দেখা দেয় পণ্যের উৎপত্তি নিয়ে। বিশেষ করে চীন থেকে পণ্য ঘুরপথে অন্য দেশের লেবেল লাগিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা হয়। বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের উৎস এবং উৎপাদন চেইন যথাযথভাবে স্বচ্ছ ও যাচাইযোগ্য হলে এই সন্দেহ দূর হবে এবং শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত স্থগিত হতে পারে।
স্থানীয় মূল্য সংযোজন বাড়ানো
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প এখনো অনেকাংশে আমদানিকৃত কাঁচামালের ওপর নির্ভরশীল। যুক্তরাষ্ট্র বা অন্যান্য দেশের কাছে নিজেদের মূল্য সংযোজনকারী উৎপাদক হিসেবে তুলে ধরলে এবং সেই প্রমাণ দেখাতে পারলে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত স্থগিত হতে পারে।
কূটনৈতিক যোগাযোগ ও লবিং জোরদার
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাস, ট্রেড প্রতিনিধিদল ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস ও ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভের সঙ্গে নিয়মিত সংলাপ জারি রাখা দরকার। বাংলাদেশ যে একটি অংশীদার দেশ এবং শুল্ক আরোপে শুধু রপ্তানিকারক নয়, আমদানিকারকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
উৎপাদন ও শ্রম নীতি উন্নয়ন
যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশের বাজারে প্রবেশ করতে হলে মানবাধিকার, শ্রমিক অধিকার, ইউনিয়ন, নিরাপত্তা ও পরিবেশসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা অপরিহার্য। এর ব্যত্যয় ঘটলে শুধু শুল্ক নয়, নিষেধাজ্ঞাও আসতে পারে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ার পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ, জাপানের পণ্যের ওপর ২৪ শতাংশ, মিয়ানমার ও লাওসের পণ্যের ওপর ৪০ শতাংশ, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার পণ্যের ওপর ৩৬ শতাংশ, সার্বিয়ার পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ৩২ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকার পণ্যের ওপর ৩০ শতাংশ এবং মালয়েশিয়া ও তিউনিসিয়ার পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
আপনার মতামত লিখুন :