ঢাকা বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ইতালিতে লোক পাঠানোর নামে প্রতারণা, গ্রেপ্তার ১

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৫, ০৯:৪৬ পিএম
সিআইডি পুলিশের লোগো। ছবি- সংগৃহীত

ভুয়া ভিসায় ইতালিতে পাঠানোর নামে শতাধিক মানুষের কাছ থেকে কোটি টাকার বেশি অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য মিলন মিয়া (৪২) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।  

পল্টন থানায় দায়েরকৃত মামলার এজাহার অনুযায়ী, মিলন মিয়াকে গত রাত ফরিদপুর শহরের চকবাজার এলাকা থেকে আটক করা হয়। তিনি ফরিদপুর জেলার সালথা থানার মৃত কালাম মাতব্বরের ছেলে। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি চক্রের সক্রিয় সদস্য হিসেবে কাজ করছিলেন।

সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্র প্রথমে লোভনীয় বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ভিক্টিমদের সঙ্গে মোটা অঙ্কের আর্থিক চুক্তি করত। চক্রের সদস্যরা একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে চুক্তির অর্থ সংগ্রহ করতেন। পরে ভুয়া ভিসা সরবরাহ করা হতো এবং অনেক ক্ষেত্রে ভিক্টিমদের পাসপোর্ট আটকে রাখা হতো, যা তাদের হয়রানি ও আতঙ্কিত করত।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত মিলন মিয়া স্বীকার করেছেন, তিনি ফরিদপুরের এক ভিক্টিমের সঙ্গে ২২ লাখ টাকার চুক্তি করেছিলেন এবং ৭ লাখ টাকা অগ্রিম নিয়েছিলেন। তিনি আরও জানিয়েছেন, তার একাধিক সহযোগী দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সহজসরল এবং ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় বিদেশ যাওয়ার আগ্রহী ব্যক্তিদের টার্গেট করতেন।

সিআইডির তদন্তে জানা গেছে, এই প্রতারক চক্রের নেটওয়ার্ক ফরিদপুর, নড়াইল, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, চাঁদপুর, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সক্রিয় রয়েছে। চক্রের মূল হোতা হিসেবে জোসনা বেগম ও মাহবুব নামের দুই ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা দেশে থাকা প্রতারক চক্রের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে সমন্বয় করতেন এবং বিদেশ যাত্রার প্রলোভনে মানুষদের টার্গেট করতেন।

সিআইডি বর্তমানে মামলার তদন্ত চালাচ্ছে। গ্রেপ্তারকৃত মিলন মিয়াকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে রিমান্ড আবেদনসহ পরবর্তী আইনগত কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অজ্ঞাত অন্যান্য সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ভিক্টিমদের মধ্যে অনেকেই বিদেশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন এবং এই প্রতারক চক্র তাদেরকে লোভনীয় প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতারণার শিকাররা প্রাথমিকভাবে বিশ্বাস করেছিলেন যে তাদের বৈধভাবে ইতালিতে পাঠানো হবে, কিন্তু চক্রের ভুয়া ভিসার মাধ্যমে কৌশলমূলক প্রক্রিয়ায় তাদের হয়রানি করা হতো।

সিআইডি কর্মকর্তারা মনে করেন, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ছড়িয়ে থাকা এই চক্রের কার্যক্রমকে শেষ করার জন্য দেশের অন্যান্য স্থানেও বিশেষ অভিযান চালানো হবে। তারা বলছেন, গ্রেপ্তারকৃত মিলন মিয়া এবং চক্রের অন্যান্য মূল সদস্যদের তথ্য অনুযায়ী, চক্রটির আরও সদস্যকে শনাক্ত এবং গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।

এই ধরনের প্রতারণার ঘটনা শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতি নয়, বরং সাধারণ জনগণের ভিসা প্রক্রিয়া ও বিদেশ যাত্রার প্রতি আস্থা কমিয়ে দেয়। সিআইডি সতর্ক করেছে, যারা ভুয়া ভিসা দিয়ে বিদেশ পাঠানোর প্রতারণা চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।