শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ১২, ২০২৫, ০৭:৪১ পিএম

যে রাসায়নিক উপাদান মধুকে দীর্ঘদিন তাজা রাখে

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ১২, ২০২৫, ০৭:৪১ পিএম

যে রাসায়নিক  উপাদান মধুকে দীর্ঘদিন তাজা রাখে। ছবি - সংগৃহীত

যে রাসায়নিক উপাদান মধুকে দীর্ঘদিন তাজা রাখে। ছবি - সংগৃহীত

প্রকৃতির এক আশ্চর্য উপহার মধু যা শুধু স্বাদেই মিষ্টি নয়, পুষ্টিগুণ ও ওষুধিগুণেও অতুলনীয়। হাজার হাজার বছর ধরে মানবসভ্যতায় মধুর ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রাচীন মিশরীয়, গ্রীক ও ভারতীয় সংস্কৃতিতে মধুকে শুধু খাবার নয়, ঔষধ, প্রাকৃতিক সংরক্ষক এবং ধর্মীয় উপাচার হিসেবেও গণ্য করা হতো।

তবে একটি বিষয় বরাবরই বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে মধু কখনো পচে না! ঠিকই শুনেছেন। হাজার বছর আগে পিরামিডে রাখা মধুও আজকের দিনে খাওয়ার উপযোগী পাওয়া গেছে। কিন্তু কীভাবে সম্ভব? কেন এই তরল স্বর্ণের মতো উপাদান বছরের পর বছর সংরক্ষিত থাকে পচন ধরা ছাড়াই?

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন। মধুর দীর্ঘস্থায়ী তাজা থাকার রহস্য লুকিয়ে আছে তার অভ্যন্তরীণ রাসায়নিক গঠনে। চলুন দেখে নেওয়া যাক মধুর সেই “রসায়ন রহস্য”।

মধুর রাসায়নিক গঠন

মধুর প্রধান উপাদানগুলো হলো:

ফ্রুক্টোজ (৩৮%)

গ্লুকোজ (৩১%)

জল (১৭-১৮%)

সুক্রোজ, খনিজ লবণ, অ্যামিনো অ্যাসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এবং এনজাইম (বাকি অংশ)

তবে শুধু চিনি ও পানি থাকলেই কি খাবার নষ্ট হয় না? হয় নিশ্চয়ই। তাহলে মধু ব্যতিক্রম কেন?

যে রাসায়নিক উপাদানটি মধুকে দীর্ঘদিন পচনমুক্ত রাখে

Hydrogen Peroxide (H₂O₂) মধুর এক বিস্ময়কর উপাদান হলো হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড। এটি এক ধরনের প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক। মৌমাছির মুখে থাকা গ্লুকোজ অক্সিডেজ নামক একটি এনজাইম গ্লুকোজকে ভেঙে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ও গ্লুকোনিক অ্যাসিডে রূপান্তর করে।

এই হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ব্যাকটেরিয়া, ফাংগাস এবং অন্যান্য ক্ষতিকর অণুজীবকে ধ্বংস করে দেয়।

গবেষণার ফলাফল : BBC-এর ২০২৫ সালের একটি গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়, মধুর জীবাণুনাশক ক্ষমতা এতটাই শক্তিশালী যে Escherichia coli (E. coli) এবং Staphylococcus aureus এর মতো ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াও এতে বেঁচে থাকতে পারে না।

অম্লতা (Acidity): আরেকটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মধুর pH স্তর সাধারণত ৩.২ থেকে ৪.৫-এর মধ্যে থাকে, অর্থাৎ এটি একটি অম্লীয় খাদ্য। এই অম্লতা ব্যাকটেরিয়ার জন্য প্রতিকূল পরিবেশ তৈরি করে, ফলে তাদের বৃদ্ধিও হয় না।

অল্প পরিমাণ পানি: Microbial life-এর জন্য শত্রু বেশিরভাগ খাবারে যদি জলীয় অংশ বেশি থাকে, তবে তা সহজেই পচে যায়। কিন্তু মধুতে পানির পরিমাণ এতটাই কম (১৭%-এর নিচে) যে মাইক্রোঅর্গানিজমদের বেঁচে থাকার মতো পরিবেশই তৈরি হয় না।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফ্ল্যাভোনয়েডস : মধুর মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যেমন ফ্ল্যাভোনয়েডস এবং ফেনলিক অ্যাসিড পচন প্রক্রিয়া ও রাসায়নিক বিপাক প্রতিরোধ করে। এসব উপাদান শুধু সংরক্ষণেই নয়, রোগ প্রতিরোধেও কার্যকর।

মৌমাছির ভূমিকা : মধু শুধু ফুল থেকে সংগ্রহ করা রস নয়। মৌমাছির দেহে থাকা এনজাইম, তাদের মুখ নিঃসরণ, ও মৌচাকে রাখা প্রক্রিয়াই মধুকে করে তোলে এই অতুলনীয় ও দীর্ঘস্থায়ী উপাদান।

সংক্ষেপে মধু দীর্ঘস্থায়ী থাকার কারণ:

  • হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে
  • অল্প পানি ব্যাকটেরিয়া ও ফাংগাসের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়
  • অম্লীয় pH ক্ষতিকর অণুজীবের বিকাশ থেমে যায়
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রাসায়নিক পরিবর্তন প্রতিরোধ করে
  • মৌমাছির এনজাইম খাদ্য প্রস্তুতির সময় জীবাণু ধ্বংস করে

প্রাচীন ইতিহাসে মধুর সংরক্ষণ

  • মিশরের পিরামিডে পাওয়া মধু ৩,০০০ বছর পুরনো হয়েও খাওয়ার উপযোগী ছিল।
  • প্রাচীন গ্রিসে মধু ব্যবহৃত হতো মমি সংরক্ষণে।
  • চীনের হান রাজবংশে মধু ছিল রাজপরিবারের গুরুত্বপূর্ণ সংরক্ষিত খাদ্য।

কিন্তু সব মধু কি চিরকাল টিকে?

  • মধুতে পানি ঢুকে গেলে বা তা খোলা পরিবেশে বেশিদিন থাকলে কিছু ক্ষতিকর পরিবর্তন হতে পারে। যেমন:
  • ক্রিস্টালাইজেশন: স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, তবে গুণ নষ্ট হয় না।
  • ফারমেন্টেশন: অতিরিক্ত পানি ঢুকলে গাঁজন হতে পারে।
  • কালার চেঞ্জ: আলো ও তাপমাত্রা পরিবর্তনে কালচে হয়ে যেতে পারে।

কীভাবে মধু সংরক্ষণ করবেন?

  • শুকনো ও ঠান্ডা স্থানে রাখুন
  • ঢাকা কাঁচের বোতলে সংরক্ষণ করুন
  • সূর্যালোক ও তাপ থেকে দূরে রাখুন
  • প্লাস্টিক নয়, গ্লাস বা সিরামিক পাত্র ব্যবহার করুন

বিশেষ পরামর্শ

বাজারে অনেক সময় “প্রক্রিয়াজাত” মধু পাওয়া যায় যাতে অতিরিক্ত চিনি, পানি বা রাসায়নিক মেশানো থাকে। এই মধু সহজেই পচে যেতে পারে। সবসময় খাঁটি ও প্রাকৃতিক মধু কিনুন। সম্ভব হলে লোকাল মৌচাষিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করুন।

প্রযুক্তির যতই উন্নতি হোক না কেন, প্রকৃতি তার নিজস্ব নিয়মেই অদ্বিতীয়। মধু তার অন্যতম প্রমাণ। হাজার বছর ধরে এটি শুধু খাদ্য নয়, স্বাস্থ্য ও সংরক্ষণের অনন্য উৎস। মধুর মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, অম্লতা, ও কম পানির পরিমাণই এটিকে বানিয়ে তুলেছে এক অনন্য খাদ্য।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!