বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী দিবস দেশব্যাপী যথাযথ মর্যাদা, উৎসাহ উদ্দীপনা এবং গৌরবময় আঙ্গিকে উদযাপিত হয়েছে। দিবসটি শুধুমাত্র সশস্ত্র বাহিনীর সম্মান উদযাপন নয়, এটি দেশের কল্যাণ, সশস্ত্র বাহিনীর অগ্রগতি, জনগণের সুরক্ষা এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের দিন হিসেবেও পালিত হয়।
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকালেই দেশের সকল সেনানিবাস, নৌ-ঘাঁটি ও স্থাপনা এবং বিমান ঘাঁটির মসজিদে ফজরের নামাজের পর বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেশের কল্যাণ ও সমৃদ্ধি, সশস্ত্র বাহিনীর অগ্রগতি ও উন্নতি এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করা হয়।
দিবসটির মূল অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় ঢাকার সেনানিবাসে। এখানে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক মোঃ সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শিখা অনির্বাণে উপস্থিত হয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন।
অনুষ্ঠানে তিন বাহিনী প্রধান—সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন—সহ ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পুস্পস্তবক অর্পণের সময় শহীদদের স্মরণে বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়।
পুস্পস্তবক অর্পণ শেষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা শিখা অনির্বাণে রক্ষিত পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন। এর আগে তিন বাহিনী প্রধান এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার তাদের স্বাগত জানান। একই সময় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উক্ত অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধে শাহাদত বরণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে তিন বাহিনীর প্রধানরা সম্মিলিতভাবে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর প্রধান উপদেষ্টা সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে গমন করেন, যেখানে তাকে অভ্যর্থনা জানান প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান এবং মহাপরিচালকবৃন্দ। আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে নির্বাচিত খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠের আত্মীয় এবং ৯৩ জন অন্যান্য খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীসহ সর্বমোট ১০১ জন সংবর্ধনায় অংশ নেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন: মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, বীর প্রতীক, প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়নবিষয়ক বিশেষ সহকারী, জাতীয় ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর প্রধান, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, উচ্চপদস্থ অসামরিক কর্মকর্তাগণ, প্রাক্তন সামরিক কর্মকর্তাগণ, স্বাধীনতা পুরস্কার ও একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত সশস্ত্র বাহিনী সদস্যদের উত্তরাধিকারীগণ।
সশস্ত্র বাহিনী দিবসের কর্মসূচির মধ্যে ছিল দেশব্যাপী সেনা গ্যারিসন, নৌ-ঘাঁটি ও বিমান ঘাঁটিতে প্রদর্শনী, সংবর্ধনা অনুষ্ঠান এবং সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত কার্যক্রম। বরিশাল, কক্সবাজার, বগুড়া, সিলেট, ঘাটাইল, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, যশোর, রংপুর ও খুলনার সেনানিবাস/ঘাঁটিতে বিশেষ সংবর্ধনা অনুষ্ঠান, শিক্ষামূলক প্রদর্শনী এবং জনসাধারণের অংশগ্রহণের জন্য কার্যক্রম আয়োজন করা হয়।
এ ছাড়াও, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়, যেখানে শিক্ষার্থীরা স্বাধীনতা ও সশস্ত্র বাহিনী দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে তাদের প্রতিভা প্রদর্শন করে। ঢাকা, খুলনা, চাঁদপুর, বরিশাল ও চট্টগ্রামে বিশেষভাবে সাজানো নৌবাহিনীর জাহাজগুলো বেলা ২টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য উম্মুক্ত রাখা হয়।
গণমাধ্যমেও দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশ টেলিভিশন ২০ নভেম্বর রাত ৮টায় “বিশেষ অনির্বাণ” অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে এবং বাংলাদেশ বেতার ২১ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭:৩০ মিনিটে “বিশেষ দুর্বার” অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে। বেসরকারি টিভি ও রেডিও চ্যানেলগুলোও পরবর্তীতে এই অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে।
দিবসটি পালনের মূল উদ্দেশ্য হলো শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো, দেশের সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা ও অগ্রগতি তুলে ধরা, এবং জনগণ ও সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে দেশপ্রেম ও কর্তব্যবোধ জাগানো। দিনটিতে দেশের বিভিন্ন দূতাবাস, আন্তর্জাতিক সংস্থা, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ এবং প্রাক্তন সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া সেনাকুঞ্জে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং বিদেশী কূটনৈতিকবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন।
সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপন শুধুমাত্র একটি প্রতীকী অনুষ্ঠান নয়, এটি দেশের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা, নাগরিকদের নিরাপত্তা এবং স্বাধীনতার মূল্যবোধকে স্মরণ করার উপলক্ষ। প্রতিটি অনুষ্ঠান, প্রদর্শনী, সংবর্ধনা এবং মিডিয়া সম্প্রচার দেশের জনগণকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, দেশের শান্তি, নিরাপত্তা এবং কল্যাণ রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনী কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।



সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন