২০২৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক পণ্যের ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের কারণে ই-বর্জ্যরে এক বিশাল চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। দ্রুত বর্ধনশীল ই-কমার্স এবং প্রযুক্তির প্রসারে এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব আরও বেড়েছে।
ই-বর্জ্য বলতে ইলেকট্রনিক ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম (যেমন- মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটর, এসি, ব্যাটারি ইত্যাদি) বোঝায়, যা ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে বা যার অর্থনৈতিক জীবন শেষ হয়েছে।
বাংলাদেশে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সামগ্রিক চিত্র:
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতিবছর আনুমানিক ৩ মিলিয়ন টন ই-বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এর মধ্যে জাহাজ ভাঙা শিল্প থেকে আসে প্রায় ২.৫ মিলিয়ন টন, এবং বাকি অংশ (০.৬ মিলিয়ন টন) আসে নিজস্ব ইলেকট্রনিক্স ব্যবহারের ফলে। ২০৩৫ সাল নাগাদ এই পরিমাণ ৪.৬২ মিলিয়ন টনে পৌঁছানোর আশঙ্কা করা হচ্ছে, যা বার্ষিক প্রায় ২০-৩০% হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি বছর মাথাপিছু ই-বর্জ্য উৎপাদন ১.২ কেজি।
ব্যবস্থাপনা ব্যবধান: বাংলাদেশে উৎপাদিত ই-বর্জ্যরে মাত্র প্রায় ৩-৫% আনুষ্ঠানিকভাবে বা সঠিকভাবে পুনর্ব্যবহার করা হয়। প্রায় ৯৭% ই-বর্জ্য অনানুষ্ঠানিক খাত দ্বারা পরিচালিত হয়, যেখানে সুরক্ষা ও পরিবেশগত মানদণ্ডের অভাব রয়েছে। এই অনানুষ্ঠানিক খাত, যেমন ভাঙারির দোকান, ই-বর্জ্যরে প্রায় ৯০% সংগ্রহ, মেরামত বা পুনরায় ব্যবহারের মাধ্যমে সেকেন্ড লাইফে ফিরিয়ে আনে, কিন্তু তাদের প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি প্রায়শই বিপজ্জনক।
আইন ও বিধিমালা: বাংলাদেশ সরকার ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ‘ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য (ই-বর্জ্য) ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০২১’ প্রণয়ন করেছে। এর মাধ্যমে ই-বর্জ্য উৎপাদনকারী, আমদানিকারক, মেরামতকারী, সংগ্রহকারী এবং পুনর্ব্যবহারকারীদের নিবন্ধনের অধীনে আনা হয়েছে এবং তাদের দায়িত্ব নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে, এই বিধিমালাগুলিতে Extended Producer Responsibility (EPR) বা উৎপাদকের বর্ধিত দায়িত্বের বাধ্যতামূলক বিধানের অভাব রয়েছে, যা কার্যকর প্রয়োগকে বাধাগ্রস্ত করছে।
অবকাঠামো: গাজীপুরে দেশের প্রথম ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্লান্ট নির্মাণ হচ্ছে, যা ই-বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।
স্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর ই-বর্জ্যরে ঝুঁকি:
ই-বর্জ্যে সিসা, পারদ, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম, বেরিলিয়াম, ব্রোমিনেটেড ফায়ার রেটারডেন্টস, টিন, আর্সেনিক এবং অন্যান্য বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ থাকে। অনিয়ন্ত্রিত প্রক্রিয়াকরণ যেমন- খোলা স্থানে পোড়ানো বা অ্যাসিড দিয়ে দ্রবীভূত করার ফলে এই বিষাক্ত পদার্থগুলো মাটি, পানি ও বায়ুতে মিশে মারাত্মক দূষণ ঘটায়।
স্বাস্থ্যঝুঁকি: ই-বর্জ্যরে বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শে আসার কারণে মানবদেহে বিভিন্ন মারাত্মক রোগ দেখা দিতে পারে, যেমন- ক্যানসার, হাঁপানি, স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি, কিডনি ও লিভারের ক্ষতি, প্রজনন সমস্যা, জন্মগত ত্রুটি, ত্বকের রোগ এবং শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা। ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত শ্রমিক, বিশেষ করে শিশুরা চরম স্বাস্থ্যকিতে থাকে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ই-বর্জ্য পুনর্ব্যবহার কেন্দ্রের কাছাকাছি বসবাসকারী ৩৬.৩% মহিলা শিশু মৃত্যুর শিকার হন। এ ছাড়াও, ১৫% শিশুশ্রমিক ই-বর্জ্যরে কারণে মারা যায় এবং ৮৩% শিশুশ্রমিক দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগে।
পরিবেশগত ঝুঁকি: মাটি, পানি ও বায়ুদূষণ ছাড়াও ই-বর্জ্য ভূগর্ভস্থ পানিকেও দূষিত করে, যা কৃষি উৎপাদন এবং জীববৈচিত্র্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
নন-চ্যানেল বা অবৈধ আমদানিতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের উপায়:
বাংলাদেশ বহু বছর ধরে স্ক্র্যাপ জাহাজ এবং ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক পণ্য অবৈধভাবে আমদানি করে আসছে, যেখানে পরিবেশগত ও স্বাস্থ্যগত নিয়মকানুন খুবই দুর্বল। কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারলে এটা বন্ধ করা সম্ভব। এরমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য (ই-বর্জ্য) ব্যবস্থাপনা বিধিমালা’ এর মতো বিদ্যমান আইনগুলোর কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা।
ই-বর্জ্য প্রবাহ নিরীক্ষণের জন্য কার্যকর ট্র্যাকিং সিস্টেম চালু করা। অবৈধ ই-বর্জ্য আমদানি রোধে কাস্টমস পরিদর্শন ও নজরদারি বাড়ানো এবং কঠোর শুল্ক ও জরিমানা আরোপ করা। ইলেকট্রনিক পণ্য প্রস্তুতকারকদের তাদের পণ্যের জীবনচক্রের শেষে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য আইনত দায়ী করা উল্ল্যেখযোগ্য।
ই-বর্জ্যরে কার্বন ঝুঁকিতে বাংলাদেশ এবং উত্তরণের উপায়:
ই-বর্জ্যরে অদক্ষ ব্যবস্থাপনা এবং অনিয়ন্ত্রিত পুনর্ব্যবহার পদ্ধতি কার্বন নিঃসরণে অবদান রাখে। খোলা স্থানে পোড়ানো এবং অপরিকল্পিত ডাম্পিং ক্ষতিকারক গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত করে।
কারণ, অপরিকল্পিত ডাম্পিং, অনানুষ্ঠানিক খাতের অদক্ষ ও অনিরাপদ পুনর্ব্যবহার পদ্ধতি, এবং আধুনিক প্রযুক্তির অভাব কার্বন নিঃসরণের প্রধান কারণ।
উত্তরণের উপায়:
সঠিক পুনর্ব্যবহার: ই-বর্জ্যরে সঠিক ও পরিবেশবান্ধব পুনর্ব্যবহার পদ্ধতি গ্রহণ করা, যা কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করে।
CO2 খনিজকরণ ((Mineralization): ই-বর্জ্য থেকে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) কে খনিজকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় করা, যা CO2 ধারণ করে এবং দূষণ হ্রাস করে।
কার্বন ক্রেডিট বাজার: CO2 খনিজকরণ এবং অন্যান্য কার্বন হ্রাসকরণ উদ্যোগের জন্য কার্বন ক্রেডিট বাজারে অংশ নিয়ে অর্থনৈতিক সুবিধা অর্জন করা। বাংলাদেশ ২০০৬ সাল থেকে ১৬.২৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ২.৫৩ মিলিয়ন কার্বন ক্রেডিট বিক্রি করেছে, যা এই খাতে আরও বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করে।
প্রযুক্তিগত বিনিয়োগ: ই-বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের জন্য আধুনিক, জ্বালানি-সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করা।
ই-বর্জ্য রিসাইক্লিং এর মাধ্যমে সম্পদে পরিণত করা:
ই-বর্জ্য কেবল বর্জ্য নয়, এটি মূল্যবান সম্পদের ভান্ডার। ই-বর্জ্যে সোনা, রুপা, তামা, টিন, নিকেল, অ্যালুমিনিয়াম, প্লাটিনাম, প্যালাডিয়াম এবং দুর্লভ মৃত্তিকা ধাতু এর মতো মূল্যবান উপাদান থাকে। সঠিক পুনর্ব্যবহার পদ্ধতির মাধ্যমে এই ধাতুগুলো পুনরুদ্ধার করে নতুন পণ্য তৈরিতে ব্যবহার করা সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, মোবাইল ও কম্পিউটার প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড থেকে ধাতু পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে ২০৩০ সাল নাগাদ বছরে $১ বিলিয়ন আয় করার সম্ভাবনা রয়েছে।
কর্মসংস্থান সৃষ্টি: একটি সংগঠিত এবং আধুনিক ই-বর্জ্য পুনর্ব্যবহার শিল্প নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে, যা অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে।
বৃত্তাকার অর্থনীতি: ই-বর্জ্যকে পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে কাঁচামালের চাহিদা হ্রাস করে এবং একটি বৃত্তাকার অর্থনীতি (Circular Economy) মডেল তৈরি করে টেকসই উন্নয়নে অবদান রাখা যায়।
প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার: ই-বর্জ্যে থাকা প্লাস্টিক উপাদানগুলোও পুনর্ব্যবহার করা সম্ভব, যা প্লাস্টিক দূষণ কমাতেও সহায়ক।
২০২৫ সালে এসে বাংলাদেশের জন্য ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি বহুমুখী চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারি আইন ও বিধিমালা, কার্যকর প্রয়োগ, আধুনিক প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ, অবৈধ আমদানি রোধ, এবং ব্যাপক জনসচেতনতা অত্যন্ত জরুরি।
ই-বর্জ্যকে একটি সমস্যার পরিবর্তে মূল্যবান সম্পদ হিসেবে দেখে এর সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য, পরিবেশ এবং অর্থনীতি- এই তিন ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করতে পারে।
ই-কমার্সের দ্রুত প্রসার যেমন- একদিকে মানুষের জীবনকে সহজ করেছে, তেমনি এর ক্রমবর্ধমান পণ্যের ব্যবহার ই-বর্জ্যরে পরিমাণও বাড়িয়ে দিচ্ছে। তবে, ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই ই-বর্জ্যকে বর্জ্য থেকে সম্পদে পরিণত করতে এবং পরিবেশগত স্থায়িত্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
ই-কমার্সের মাধ্যমে ই-বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করার প্রক্রিয়া ও ই-কমার্সের ভূমিকা:
ই-বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করার প্রক্রিয়া মূলত ‘বৃত্তাকার অর্থনীতি’ (Circular Economy) ধারণার সঙ্গে জড়িত, যেখানে পণ্যের জীবনচক্রের প্রতিটি ধাপে সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়।
ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো এই বৃত্তাকার অর্থনীতির বাস্তবায়নে নিম্নলিখিত ভূমিকা পালন করতে পারে:
১. সহজ সংগ্রহ ও রিভার্স লজিস্টিকস (Reverse Logistics):
ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো তাদের নিজস্ব ডেলিভারি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে গ্রাহকদের কাছ থেকে ব্যবহৃত বা পুরোনো ইলেকট্রনিক পণ্য (ই-বর্জ্য) সংগ্রহ করার ব্যবস্থা করতে পারে।
পিক-আপ সার্ভিস: যখন গ্রাহক নতুন ইলেকট্রনিক পণ্য কেনেন, তখন পুরোনো পণ্যটি ডেলিভারির সময় বা পরবর্তী সময়ে সংগ্রহ করার বিকল্প দিতে পারে।
ড্রপ-অফ পয়েন্ট: নির্দিষ্ট সংগ্রহ কেন্দ্র বা পার্টনারশিপের মাধ্যমে ড্রপ-অফ পয়েন্ট তৈরি করতে পারে, যেখানে গ্রাহকরা তাদের ই-বর্জ্য জমা দিতে পারবেন।
পুরস্কার বা ছাড়: ই-বর্জ্য জমা দেওয়ার জন্য গ্রাহকদের কুপন, ডিসকাউন্ট বা অন্যান্য প্রণোদনা প্রদান করে উৎসাহিত করতে পারে।
ডেলিভারি নেটওয়ার্কের সদ্ব্যবহার: ফিরতি পণ্য পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত লজিস্টিকস ব্যবস্থাকে ই-বর্জ্য সংগ্রহের কাজে লাগানো যেতে পারে, যা খরচ কমাবে এবং দক্ষতা বাড়াবে।
২. পুনরায় ব্যবহার (Reuse) ও মেরামত (Repair) উৎসাহিত করা:
ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো সেকেন্ড-হ্যান্ড পণ্যের জন্য একটি বাজার তৈরি করতে পারে, যেখানে গ্রাহকরা তাদের পুরোনো কিন্তু কার্যকরী ডিভাইসগুলো বিক্রি বা বিনিময় করতে পারবেন।
‘রিফার্বিশড’ পণ্যের বাজার: ত্রুটিযুক্ত পণ্য মেরামত করে বা নবায়ন করে ‘রিফার্বিশড’ পণ্য হিসেবে বিক্রির সুযোগ তৈরি করতে পারে, যা নতুন পণ্যের চাহিদা কমাবে এবং বর্জ্য উৎপাদন হ্রাস করবে।
মেরামত পরিষেবা সংযোগ: গ্রাহকদের জন্য নির্ভরযোগ্য মেরামত পরিষেবা প্রদানকারী বা প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে সংযুক্ত করে পণ্যের আয়ুষ্কাল বাড়াতে সহায়তা করতে পারে।
৩. পুনর্ব্যবহার (Recycling) ও মূল্যবান সম্পদ পুনরুদ্ধার:
ই-বর্জ্যে সোনা, রুপা, তামা, প্লাটিনাম, প্যালাডিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম, নিকেল এবং বিরল মৃত্তিকা উপাদান (Rare Earth Elements) সহ অনেক মূল্যবান ধাতু থাকে। বাংলাদেশে ই-বর্জ্যরে একটি আনুমানিক বাজার মূল্য ২২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো এই সম্পদ পুনরুদ্ধারে
সহায়ক হতে পারে:
পার্টনারশিপ: নিবন্ধিত এবং পরিবেশবান্ধব ই-বর্জ্য পুনর্ব্যবহারকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্ব স্থাপন করে সংগৃহীত ই-বর্জ্য তাদের কাছে প্রক্রিয়াকরণের জন্য হস্তান্তর করা।
স্বচ্ছতা: পুনর্ব্যবহার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, যাতে গ্রাহকরা জানতে পারেন তাদের বর্জ্য সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে।
৪. ক্রেতা ও বিক্রেতার সচেতনতা বৃদ্ধি:
ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো তাদের ওয়েবসাইটে বা প্রচারণার মাধ্যমে ই-বর্জ্যরে ক্ষতিকর দিক, সঠিক নিষ্পত্তির গুরুত্ব এবং পুনর্ব্যবহারের অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত সুবিধা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে পারে।
শিক্ষামূলক বিষয়বস্তু: পণ্যের বর্ণনায় বা ব্লগ পোস্টে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব তুলে ধরা।
পরিবেশবান্ধব পণ্যের প্রচার: পরিবেশবান্ধব উপকরণ দিয়ে তৈরি বা দীর্ঘস্থায়ী পণ্যগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রচার করা।
৫. নীতিমালা প্রণয়নে সহায়তা (Extended Producer Responsibility-EPR):
ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য শক্তিশালী ঊচজ নীতিমালা প্রণয়নে ভূমিকা রাখতে পারে, যেখানে পণ্য প্রস্তুতকারকদের তাদের পণ্যের জীবনচক্রের শেষে বর্জ্য সংগ্রহের দায়িত্ব নিতে বাধ্য করা হবে।
ই-কমার্সের মাধ্যমে ই-বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করার সুবিধা:
পরিবেশ সুরক্ষা: ই-বর্জ্য থেকে বিষাক্ত পদার্থ পরিবেশে ছড়িয়ে পড়া রোধ করে মাটি, পানি ও বায়ুদূষণ কমায়।
স্বাস্থ্য সুরক্ষা: ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় জড়িত শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমায় এবং জনসাধারণের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।
অর্থনৈতিক লাভ: মূল্যবান ধাতু পুনরুদ্ধার এবং পুনর্ব্যবহার শিল্পের বিকাশের মাধ্যমে নতুন অর্থনৈতিক সুযোগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশে ই-বর্জ্য রিসাইক্লিং-এর সম্ভাব্য বার্ষিক ব্যবসা প্রায় ২২ কোটি ডলার।
সম্পদ সংরক্ষণ: নতুন কাঁচামাল উত্তোলনের প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ করে।
ব্র্যান্ড ইমেজ উন্নতকরণ: পরিবেশগত ও সামাজিক দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে ই-কমার্স ব্র্যান্ডগুলোর সুনাম বৃদ্ধি পায় এবং গ্রাহকদের আস্থা ও আনুগত্য অর্জন করে।
বৃত্তাকার অর্থনীতিতে অবদান: পণ্য ব্যবহারের পর বর্জ্যকে পুনরায় উৎপাদনে ফিরিয়ে এনে একটি টেকসই এবং বৃত্তাকার অর্থনীতি গড়ে তুলতে সহায়তা করে।
চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়:
পর্যাপ্ত সংগ্রহ অবকাঠামোর অভাব: সারা দেশে ই-বর্জ্য সংগ্রহের জন্য পর্যাপ্ত কেন্দ্র ও লজিস্টিকস ব্যবস্থার অভাব রয়েছে। ই-কমার্স কোম্পানিগুলোর জন্য নিজস্ব বা অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সংগ্রহ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা জরুরি।
জনসচেতনতার অভাব: ই-বর্জ্যকে সঠিক উপায়ে ফেলার বিষয়ে এখনো সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা কম। ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো তাদের গ্রাহকদের মধ্যে এই বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে পারে।
নীতিমালার বাস্তবায়ন: ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিদ্যমান বিধিমালাগুলোর কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করা এবং উৎপাদকের বর্ধিত দায়িত্ব (ঊচজ) বাধ্যতামূলক করা।
ই-কমার্স শুধু একটি কেনাবেচার প্ল্যাটফর্ম নয়, এটি একটি পূর্ণাঙ্গ অর্থনৈতিক ইকোসিস্টেম। এই প্ল্যাটফর্মগুলো তাদের বিশাল গ্রাহকভিত্তি এবং শক্তিশালী লজিস্টিকস নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ই-বর্জ্যকে কার্যকরভাবে বর্জ্য থেকে সম্পদে পরিণত করার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে পারে, যা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে।
লেখক : ই-কমার্স উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা-কিনলে ডট কম
ইমেইল[email protected]
আপনার মতামত লিখুন :