সংগ্রামী কৃষক নেতা ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনের কিংবদন্তি ও নাচোলের রাণীমাখ্যাত বিপ্লবী কমরেড ইলা মিত্রের ৯৯তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯২৫ সালের এই দিনে ভারতীয় উপমহাদেশের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
শৈশব থেকে তাঁর বেড়ে ওঠা ঝিনাইদহের শৈলকূপার বাগুটিয়া রায়পাড়া গ্রামে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ছাত্রজীবনেই ইলা মিত্র কমিউনিস্ট আদর্শের সংস্পর্শে এসেছিলেন। তার বাবা নগেন্দ্রনাথ সেন ছিলেন ব্রিটিশ সরকারের অধীন বাংলার অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেল। চাকরিসূত্রে তিনি সে সময় কলকাতায় অবস্থান করছিলেন।
ইলা মিত্রের জন্ম ও বেড়ে ওঠা কলকাতায় হলেও তার পৈতৃক বাড়ি শৈলকুপা উপজেলার নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নের বাগুটিয়া গ্রামে। তার শৈশব ও কৈশোরের অনেক সময় কেটেছে ঝিনাইদহের বাগুটিয়া গ্রামের রায়পাড়ার বাড়িতে।
জন্মের সময় ইলা মিত্রের নাম ছিল ইলা সেন। ১৯৪৫ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রামচন্দ্রপুরের জমিদার বাড়ির ছোট ছেলে দেশকর্মী কমিউনিস্ট নেতা রমেন্দ্রনাথ মিত্রের সাথে তার বিয়ে হয়। রমেন্দ্রনাথ মিত্র মালদহের রামচন্দ্রপুর হাটের জমিদার মহিমচন্দ্র ও বিশ্মামায়া মিত্রের ছোট ছেলে। বিয়ের পর তার নাম হয় ইলা মিত্র। বিয়ের পর ১৯৪৬ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জে তেভাগা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন তিনি। জমিদার পুত্রবধূ হয়েও বাংলার শোষিত ও বঞ্চিত কৃষকের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি সংগ্রাম করতে গিয়ে হয়ে ওঠেন কৃষক নেতা ও সাঁওতালদের রানী মা। এ সময় তিনি কয়েকবার জেল খাটেন। ভোগ করেন অমানুষিক নির্যাতন। তিনি আজীবন কৃষকের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম করে গেছেন।
১৯৫০ সালের ৭ জানুয়ারি সাঁওতাল বেশ ধারণ করে ভারতে পালাবার সময় ইলা মিত্রকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তান পুলিশ। কারাগারে তার ওপর চলে পাশবিক নির্যাতন। এরপরও আদালতে নির্ভীক চিত্তে ঐতিহাসিক জবানবন্দি দেন এ কিংবদন্তি।
কৃষকদের সঙ্গে সংঘর্ষে ৪ জন পুলিশ নিহত হওয়ায় ইলা মিত্রসহ ২৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকার ইলা মিত্রকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে কলকাতা যাবার অনুমতি দেয়। এরপর আর পূর্ব বাংলায় ফিরে আসতে পারেননি ইলা মিত্র। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের পক্ষে তিনি ভারতে ও বিশ্ব পরিসরে জনমত সংগঠিত করতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৩ অক্টোবর ২০০২ সালে ৭৭ বছর বয়সে ইলা মিত্রের দেহাবসান ঘটে।
ইলা মিত্র স্মরণে রাষ্ট্রীয়ভাবে কর্মসূচি আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন প্রগতিশীল রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো।
আপনার মতামত লিখুন :