শুক্রবার, ২৩ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


স্বপ্না চক্রবর্তী

প্রকাশিত: মে ২৩, ২০২৫, ০৪:১৭ এএম

গ্যাস সংকটে ধুঁকছে শিল্প খাত

স্বপ্না চক্রবর্তী

প্রকাশিত: মে ২৩, ২০২৫, ০৪:১৭ এএম

গ্যাস সংকটে ধুঁকছে শিল্প খাত

ছবি- সংগৃহীত

দেশীয় কূপগুলো থেকে উৎপাদন কমছে দিন দিন। আমদানি করা গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ, সার, আবাসিকের চাহিদাই মিটছে না ঠিকমতো। ফলে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস পাচ্ছে না শিল্প খাত। খাতটিতে দৈনিক চাহিদা রয়েছে ১৮শ থেকে ২ হাজার এমএমসিএফডি গ্যাসের। বিপরীতে সরবরাহ হচ্ছে মাত্র ১ হাজার ৫০ এমএমসিএফডি থেকে ১১শ এমএমসিএফডি গ্যাস। এতে করে ব্যাহত হচ্ছে শিল্প উৎপাদন।

গ্যাসের অভাবে দিনের পর দিন সময়মতো উৎপাদন করতে না পারার কারণে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী সময়ে পণ্য রপ্তানি করতে পারছেন না শিল্পমালিকরা। যদিও সরকার বলছে শুধু শিল্প খাতের জন্যই আলাদা করে ১ কার্গো এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) এসেছে। যা আজ শুক্রবার বা কাল শনিবার আনলোড শেষে গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহ শুরু হবে। কিন্তু এ দিয়ে চাহিদা কতটুকু পূরণ হবে তা নিয়ে রয়েছে শংকা। তবে ধারাবাহিকভাবে আগামী ৩ মাসে আরও ৩টি কার্গো আসার কথা রয়েছে জানিয়ে জ¦ালানি বিভাগ দাবি করছে সংকট থাকবে না। 

রূপালী বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, আশুলিয়া, ভালুকা, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ সব প্রধান শিল্পাঞ্চলেই কমে গেছে গ্যাস সরবরাহ। উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে টেক্সটাইল, গার্মেন্টস, সিরামিক ও স্টিল খাতসহ বিভিন্ন শিল্পে। শিল্প মালিকরা বলছেন, এক-তৃতীয়াংশ শিল্পকারখানায়ই দিনে গ্যাসের চাপ থাকছে না। রাত ১১টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত গ্যাসের চাপ তুলনামূলকভাবে কিছুটা বেশি থাকলেও সব কারখানা ওই সময়টায়ই উৎপাদন কার্যক্রম বাড়িয়ে দেওয়ায় ফল খুব ভালো হচ্ছে না।

এ ছাড়া গ্যাসের চাপ না থাকার কারণের দিনের অন্য সময়টায় শ্রমিকদের অলস সময় কাটাতে হচ্ছে। অনেক কারখানা শ্রমিক ছাঁটাইও করেছে। দিনভর যন্ত্রপাতি বন্ধ রেখে রাতের শিফটে উৎপাদন চালু রাখার কারণে ব্যয় বেড়ে গেছে দ্বিগুণেরও বেশি। কিছু শিল্প সিএনজি, এলপিজি বা ডিজেল দিয়ে উৎপাদন ধরে রাখার চেষ্টা করলেও সেটিও ব্যয়বহুল। এসব শিল্প চাহিদা অনুযায়ী গ্যাসের সরবরাহ পাচ্ছে না এবং গ্যাসের চাপ খুব কম। সিরামিক ও স্টিল শিল্পের উৎপাদন কমেছে ৫০ শতাংশ।

বিশ্বজুড়ে মহামারি করোনার প্রকোপ কমতেই শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এতে ধেয়ে আসে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট। এ সংকটে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে জ্বালানি ও খাদ্য খাতে। সারাবিশ্বে হু হু করে বাড়তে থাকে খাদ্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের দাম। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। ঊর্ধ্বমূল্যে স্পট মার্কেট থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কিনতে গিয়ে সরকারের তহবিল থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা।

তাতেও মিটছে না প্রয়োজনীয় চাহিদা। এতে করে রাজধানীসহ সারা দেশে তৈরি হয়েছে তীব্র গ্যাস সংকট। আবাসিক খাতসহ পেট্রোল পাম্প, শিল্প-কারখানাগুলোতে মিলছে না কাক্সিক্ষত গ্যাসের চাপ। ফলে উৎপাদন থেকে শুরু করে পরিবহন এমনকি বাসা-বাড়িতে রান্নার কাজেও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। 

সম্প্রতি শিল্প-কারখানাগুলোতে গ্যাস সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। গ্যাসের প্রয়োজনীয় চাপ না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন। নিজের কারখানায় গ্যাসের প্রেসার প্রায়দিনই জিরো থাকে জানিয়ে বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর শিল্প খাতে ২৫০ এমএমসিএফডি গ্যাস বাড়ানোর কথা দিয়েছিল।

কিন্তু সেটা তো দূরে থাক আমরা নিয়মিতভাবে যে গ্যাস পেতাম সেটিই পাচ্ছি না। আমার নিজের কারখানারই অনেক শিপমেন্ট বাতিল করতে হয়েছে। অনেকটি আবার দেরিতে উৎপাদন হওয়ায় শিপমেন্টের তারিখ বদলাতে হয়েছে। এতে করে খরচ বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। এ ক্ষতি আমরা কী দিয়ে পোষাব? আমার জানামতে কয়েকটি কারখানা জরুরি কাজ করতে ফার্নিশ ওয়েল কিনেছে। কিন্তু এভাবে কতদিন চলবে? 

গাজীপুরের একটি নিটিং কারখানার পরিচালক জানান, তারা দৈনিক প্রায় ৭০ টন সুতা উৎপাদন করতেন। বর্তমানে করছেন ১২-১৩ টন। ১০ পিএসআই চাপে গ্যাস পাওয়ার কথা। কিন্তু গত দুই বছর ধরে পাচ্ছেন ২ থেকে ৪ পিএসআই। ফলে দুই-তৃতীয়াংশ উৎপাদন কমে গেছে।

সাভার ও আশুলিয়ায় ১ হাজার ২০০-এর বেশি কারখানা রয়েছে। তিতাসের গ্যাস সরবরাহ যথেষ্ট না হওয়ায় কারখানাগুলোতে গ্যাসের চাপ কমে এসেছে ১ থেকে ৩ পিএসআইয়ে। অথচ প্রয়োজন ১৫ পিএসআই। ফলে জেনারেটর চালু করা যাচ্ছে না, বয়লার গরম করা যাচ্ছে না। এমনকি প্রায় সময় ড্রায়ার মেশিন বন্ধ থাকায় সময়মতো তৈরি পোশাক ওয়াশও করা যাচ্ছে না।  

পেট্রোবাংলা এবং শিল্প সংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী, দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৪০০ কোটি ঘনফুট। কিন্তু বর্তমানে সরবরাহ হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৭০ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে ১০৪ কোটি ঘনফুট ব্যবহৃত হয় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে, সাড়ে ১২ কোটি ঘনফুট সার কারখানায়। শিল্প ও আবাসিকে যায় ১৫১ কোটি ঘনফুট গ্যাস। 

জ্বালানি বিভাগ ও পেট্রোবাংলা থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১৮৮ কোটি ঘনফুটের মতো গ্যাস। চার বছর আগেও এই পরিমাণ ছিল ২৪৭ কোটি ঘনফুট। অর্থাৎ দেশীয় উৎপাদন কমেছে প্রায় ৫৯ কোটি ঘনফুট গ্যাস। সরবরাহ মোটামুটি স্থিতিশীল রাখতে হলে আমদানিকৃত এলএনজির ওপর নির্ভরতা বেড়েছে। দেশে দৈনিক ১১০ কোটি ঘনফুট এলএনজি গ্যাস সরবরাহের সক্ষমতা রয়েছে। অর্থাৎ দেশীয় উৎস ও আমদানি মিলিয়ে বর্তমানে দৈনিক গ্যাস সরবরাহ সক্ষমতা কমে হয়েছে ৩০০ কোটি ঘনফুটেরও কম।

তবে শিল্প খাতের গ্যাস সংকট কাটানোর জন্য ইতোমধ্যে এক বাড়তি কার্গো এলএনজি দেশের টার্মিনালে এসে পৌঁছেছে জানিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, এই কার্গো থেকে এলএনজি আনলোড কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আশা করছি, এক-দুইদিনের মধ্যে শিল্পের সংকট কেটে যাবে। তবে এখানেই শেষ নয়। সংকট সমাধানে আমরা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হিসেবে আরও ৩টি বাড়তি কার্গো আনছি। যা আগামী তিন মাসে ধারাবাহিকভাবে আসবে। 

জানা যায়, বর্তমানে কাতার থেকে মাসে ৫টি করে এলএনজি কার্গো আসছে। যার ইউনিট প্রতি গ্যাসের দাম পড়ছে ১৫ মার্কিন ডলার। যুদ্ধের আগে এই দাম ছিল ১০ ডলারের কম। কিন্তু খোলাবাজারে এই দাম ৬০ ডলারের বেশি। কিন্তু ফার্নেস অয়েল এবং ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে বা সার কারখানায় গ্যাসের যে ব্যবহার হতো তাও কমানো যাচ্ছে না।

বিশ্ববাজারে সারের দাম চড়া, আমদানিতে বাড়তি খরচ লাগছে। তাই দেশীয় সার কারখানা চালু রাখতে হচ্ছে। শিল্প কারখানার মালিকরা বলছেন, ২০২২ সালে প্রতি গজ কাপড় উৎপাদনের জ্বালানি খরচ ছিল ১৮ টাকা, ২০২৩ সালে নতুন মূল্যে খরচ পড়ছে ২৬ টাকা। আবার নিট ইন্ডাস্ট্রির সুতা উৎপাদনে খরচ পড়ে ২.৪৫ ডলার প্রতি কেজি আর সেখানে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে নিট কাপড় আমদানি করতে খরচ পড়ে ২.১৮ ডলার প্রতি কেজি।

ফলে ২০২৪ সালে নিট সেক্টরে কাপড় আমদানি ৩৯ শতাংশ বেড়েছিল। এসব কারণে শিল্প বাঁচানোই এখন চ্যালেঞ্জিং মনে করছেন তারা। ফলে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিল্পের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ৩.৫৭ শতাংশে। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি গত বছরের ডিসেম্বরে নেমেছে ৭.২৮ শতাংশে। সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ ছয় মাসে ৭১ শতাংশ কমেছে।

তবে আমদানির বিকল্প খুঁজতে সরকার দেশীয় কূপগুলোর খননকাজে জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। জ্বালানি বিভাগ বলছে, আগামী ৩ বছরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৬৯টি কূপের অনুসন্ধান ও উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। একই সঙ্গে ৩১টি কূপের ওয়ার্কওভার সম্পন্ন হবে।

এর মধ্যে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) ১০টি, সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল) ২টি ও বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিমিটেড ৩টি প্রকল্প বাস্তবায়িত করবে। এর বাইরেও বাপেক্সের নিজস্ব রিগ দিয়ে ২৮টি, বিজিএফসিএলের রিগ দিয়ে ২টি, এসজিএফএলের রিগ দিয়ে ৩টি মোট ৩৩টি কূপ খনন হবে।

আর বাপেক্সের মাধ্যমে রিগ ভাড়া করে ১০টি কূপে চলবে খনন কাজ। আর আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে বাপেক্স ১৪টি, বিজিএফসিএল ৭টি, এসজিএফএল ৫টি কূপ খনন করবে। সব মিলিয়ে ৬৯টি কূপের খনন হবে। কূপগুলো ওয়ার্কওভার কার্যক্রমে বাপেক্সের রিগ দিয়ে হবে ১৬টি, বিজিএফসিএলের রিগ দিয়ে ১২টি, এসজিএফএল দিয়ে ৩টিসহ মোট ৩১টি কূপের ওয়ার্কওভার হবে। 
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!