রাজধানীর গুলশানের নগর ভবনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) নিজ কার্যালয়ে অফিস করছেন না করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। জানা যায়, সদ্যঃসমাপ্ত সপ্তাহ অর্থাৎ গত রোববার থেকে বৃহস্পতিবারের এক কার্যদিবসেও নগর ভবনে যাননি তিনি।
সরকারের নির্বাহী আদেশে খোলা থাকা গত শনিবার শেষবারের মতো ডিএনসিসিতে এসেছিলেন প্রশাসক। সূত্র বলছে, তাকে অপসারণের দাবিতে চলমান বিক্ষোভ কর্মসূচি এবং কর্মকর্তাদের সাথে চলমান দ্বন্দ্বের কারণেই তিনি অফিস করছেন না। পাশাপাশি বিঘ্ন ঘটছে ডিএনসিসির দৈনন্দিন কার্যক্রমে। তবে এসব দাবি নাকচ করে প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ জানান, আগামী সপ্তাহ থেকেই তাকে আবার করপোরেশনে দেখা যাবে।
ডিএনসিসির প্রশাসক এবং কর্মকর্তাদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব এখন ‘ওপেন সিক্রেট’। এমন প্রেক্ষাপটে গত সপ্তাহের শনিবার সবশেষে ডিএনসিসি নগর ভবনে অফিস করেন প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। ঈদুল আজহার ছুটির জন্য নির্বাহী আদেশে সাপ্তাহিক ছুটির বদলে সেদিন সরকারি দপ্তর খোলা ছিল।
শনিবারের পর গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আর ডিএনসিসিতে যাননি তিনি। গত বুধবার দুপুর আড়াইটায় ‘নগর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা স্থায়িত্বকরণ’ শীর্ষক এক জাতীয় সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল তার। অনুষ্ঠানে প্রশাসক উপস্থিত থাকবেন উল্লেখ করে গণমাধ্যমকর্মীদের মিডিয়া কাভারেজের অনুরোধ জানিয়ে আমন্ত্রণও জানানো হয়েছিল ডিএনসিসির পক্ষ থেকে। তবে এই অনুষ্ঠানেও প্রশাসক উপস্থিত ছিলেন না।
গত ১৫ মে ‘এজাজের স্বেচ্ছাচারিতায় সংকটে ডিএনসিসি’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রূপালী বাংলাদেশ। এরপরের দিন আলজাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের মোহাম্মদ এজাজের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন হিযবুত তাহরীরের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেন। নিজ অভিযোগের স্বপক্ষে বেশ কিছু নথিও প্রকাশ করেন জুলকারনাইন।
পাশাপাশি গত সপ্তাহের শুরুতে রাজধানীর গাবতলীর স্থায়ীসহ কোরবানির অস্থায়ী পশুর হাট ইজারাসংক্রান্ত বিতর্কেও প্রশাসকের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরই মাঝে গত সোমবার থেকে প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের অপসারণ এবং গ্রেপ্তারের দাবিতে নগর ভবনের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করতে থাকে গণঅধিকার পরিষদ। এরই মাঝে গাবতলীর স্থায়ী পশুর হাট পছন্দের ব্যক্তিকে দিতে প্রশাসক এজাজ এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামানের মধ্যকার কথোপকথনের একটি অডিও ভাইরাল হয়।
এমন প্রেক্ষাপটে সশরীরে নগর ভবনে না এলেও কিছু অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন প্রশাসক এজাজ। কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র নগর ভবনের বাইরে নিজের কাছে আনিয়ে স্বাক্ষর করছেন তিনি। তবে তিনি নিয়মিত সচিবালয়ে এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে যাতায়াত করছেন বলেও জানা যায়।
ডিএনসিসিতে নিয়মিত উপস্থিত না থাকায় করপোরেশনের দৈনন্দিন কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন একাধিক কর্মকর্তা। পরিচয় গোপনের শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, কর্মকর্তাদের পদোন্নতিসংক্রান্ত বাছাই কমিটির এক সভা গত বুধবার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তিনি এটা এক মাস পিছিয়ে জুনের ২৩ তারিখ নিয়েছেন। আরেক কর্মকর্তা জানান, প্রশাসক অনুপস্থিত থাকায় এই মাসের বোর্ড সভার তারিখ এখনো নির্ধারিত হচ্ছে না। এদিকে কোরবানির অস্থায়ী পশুর হাট সংক্রান্ত জটিলতাও এখনো কাটেনি অথচ দুই সপ্তাহ পরই ঈদুল আজহা।
এদিকে প্রশাসক ছুটি নিলে বা কার্যালয়ে না এলে কাকে অবহিত করবেন, সে বিষয়েও রয়েছে আরেক জটিলতা। গত ১২ ফেব্রুয়ারি ডিএনসিসির প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পেলেও, এখনো তার পদমর্যাদা নির্ধারিত হয়নি বলে জানা যায়। সিটি করপোরেশনের মেয়র বা প্রশাসকরা সাধারণত সচিব থেকে সিনিয়র সচিব এবং প্রতিমন্ত্রী ও মন্ত্রী পদমর্যাদা পেয়ে থাকেন। তবে প্রশাসক হিসেবে মোহাম্মদ এজাজের পদমর্যাদা কী হবে, সেটি এখনো নির্ধারিত হয়নি।
জানা যায়, নিজের জন্য প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন মোহাম্মদ এজাজ। তবে সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হলেও, সেখানেও তার পদমর্যাদার বিষয়ে কিছু বলা নেই। পদমর্যাদা নির্ধারিত না হওয়ায় দায়িত্ব পালনের তিন মাস পেরিয়ে গেলেও, এখনো কোনো বেতন পাননি মোহাম্মদ এজাজ। এমন প্রেক্ষাপটে ছুটিতে থাকলে বা অফিসে না এলে প্রশাসক কাকে অবহিত করবেন, সে বিষয়েও রয়েছে জটিলতা।
প্রশাসকের নগর ভবনে না আসার বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ কামরুজ্জামান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘উনি (প্রশাসক) ছুটিতে আছেন বা অফিসে আসবেন না এমন কিছু আমার জানা নেই। এ বিষয়ে উনি বা অন্য কোনো মাধ্যমে কিছুই জানি না। উনিও কোনো ফোন বা মেসেজও করেননি আমাকে।’
তবে ব্যস্ততা এবং অসুস্থতার কারণে অফিস করেননি উল্লেখ করে প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের কাজকর্ম নিয়ে অনেক ব্যস্ত। পাশাপাশি শরীরটাও ভালো না, অনেক চাপ। বিগত ৩ মাস দৈনিক দুই ঘণ্টাও হয়তো আমি ঘুমাইনি। আগামী শনি-রোববার থেকে (নগর ভবনে) আবার দেখবেন। আর বোর্ড সভা এই মাসে একটা হয়েছে।
ডিএনসিসির কোনো কাজই থমকে নেই।’ আন্দোলন এবং বিতর্কের কারণে অফিসে অনুপস্থিত থাকার বিষয়ও প্রত্যাখ্যান করেন তিনি। পাশাপাশি কোরবানির পশুর হাট নিয়ে মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদন পেলে, প্রতিবেদন দেখে নিজের সিদ্ধান্ত দেবেন বলেও রূপালী বাংলাদেশকে জানান ডিএনসিসি প্রশাসক।
আপনার মতামত লিখুন :