জাতীয় নির্বাচন বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে দ্বিধায় পড়েছে বিএনপি। নির্বাচন ঘিরে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে দলটির হাইকমান্ড। তারা মনে করছেন, সরকারের এই নীরবতা উদ্দেশ্যমূলক এবং দীর্ঘমেয়াদি ক্ষমতায় থাকার কৌশলের অংশ।
বেশ কিছুদিন ধরেই বিএনপি নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি। বরং সরকারঘনিষ্ঠ কয়েকটি মহল বিএনপির এই দাবি নিয়ে নেতিবাচক প্রচার চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ তুলেছে দলটি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্প্রতি এক সভায় বলেন, এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে যেন নির্বাচন চাওয়াটাই অপরাধ। জাতীয় নির্বাচনের সুস্পষ্ট তারিখ ঘোষণা করুন। জনগণের ভোটে, জনগণের কাছে দায়বদ্ধ সরকার প্রতিষ্ঠা করা না গেলে পলাতক স্বৈরাচারকে মোকাবিলা করা কঠিন হবে।
দলটির সূত্র জানায়, নির্বাচনের ইস্যুতে বিএনপি অনেক ধৈর্য ধরেছে। তবে সরকারের অবস্থান দেখে এখন নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় দলের অভ্যন্তরেও আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নির্বাচন যত বিলম্বিত হচ্ছে, দেশকে তত বেশি অস্থিরতার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। সরকার অন্তর্বর্তী হলেও কাজ করছে নির্বাচিত সরকারের মতো। তাদের কাজ হওয়া উচিত ছিল একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।
গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম শরিক ছাত্র সংগঠন এনসিপি এখনই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত নয়। তারা নিজেদের সংগঠন গোছানোর জন্য সময় চায়। অন্যদিকে, জামায়াতের অবস্থান অস্পষ্ট। দলটির পক্ষ থেকে বারবার ভিন্নমুখী বক্তব্য আসছে। সর্বশেষ তারা বলেছে, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি।
এই অবস্থানকে ভিন্ন চোখে দেখছে বিএনপি। দলটির মতে, নির্বাচন নিয়ে যারা বিভ্রান্তি তৈরি করছে, তারা মূলত স্বার্থসংশ্লিষ্ট রাজনীতি করছে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দিয়েছি। চাই না তারা ব্যর্থ হোক। কিন্তু রোডম্যাপ না দিলে জনগণের দিকেই তাকাতে হবে।
নির্বাচন বিলম্বিত হলে দলীয়ভাবে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার কথাও ভাবছে বিএনপি। সমমনা দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের চিন্তা চলছে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, বিএনপি কর্মসূচিতেই আছে। ভিন্ন ইস্যুতে হলেও নিয়মিত সভা-সমাবেশ চলছে।
বিএনপির অভ্যন্তরে আলোচনা চলছে যে, সরকার যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচনের ঘোষণা না দেয়, তবে নতুন করে বড় কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে।
দলের একজন শীর্ষ নেতা বলেন, ভোট নিয়ে ধোঁয়াশা বাড়লে জনগণই হয়তো সরকারকে ঘেরাও করবে। সেই পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে।
বিএনপি এখন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকারের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দাবি করছে। সরকার এই বিষয়ে নীরব থাকলে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার ও সব পক্ষের অংশগ্রহণে সংলাপ ও সমঝোতার উদ্যোগই হতে পারে সর্বোত্তম পথ।