ঢাকা সোমবার, ১৯ মে, ২০২৫

ভারতের নিষেধাজ্ঞা

বেনাপোলে আটকা পণ্যবাহী শতাধিক ট্রাক, দু‘দিনেও সমাধান হয়নি

বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মে ১৯, ২০২৫, ০৭:৩৭ পিএম
বেনাপোল বন্দরে পণ্যবাহী শতাধিক ট্রাক আটকা পড়েছে। ছবি-রূপালী বাংলাদেশ

ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞায় বেনাপোল স্থলবন্দরে আটকা পড়েছে রপ্তানিমুখী গার্মেন্টসসহ কয়েক প্রকার পণ্যের শতাধিক ট্রাক। এর আগে তাদের নিষেধাজ্ঞায় সড়কপথে বন্ধ হয় ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে পোশাক রপ্তানি।

তবে স্থলপথে পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কলকাতা ও নবসেবা সমুদ্রবন্দরের মাধ্যমে পণ্য আমদানির সুযোগ রাখা হয়েছে।

এদিকে, দু‘দিন পার হলেও কোনো সমাধান না হওয়ায় বিপাকে পড়েছে রপ্তানিকারকসহ ট্রাক চালকরা। রপ্তানিকারকদের দাবি, যেসব পণ্য রপ্তানির জন্য আইজিএম করা আছে, সেগুলো ভারতে প্রবেশের ব্যবস্থা করতে হবে। 

এসব পণ্যবাহী ট্রাক যদি ভারতে প্রবেশের অনুমতি না দেওয়া হয়, তবে ঢাকায় ফেরত নিয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। এর ফলে ট্রাকের ভাড়া ও ডেমারেজ বাবদ রপ্তানিকারককে অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হবে।

অন্যদিকে, একের পর এক নিষেধাজ্ঞায় পণ্য পরিবহন ব্যয়বহুল হয়ে পড়ায় বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে রপ্তানি বাণিজ্য। অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন দু‘দেশের ব্যবসায়ীরা। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে বাণিজ্য স্বাভাবিকের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বেনাপোল ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়াড়িং এজেন্ট স্টাফ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, ‘ভারতের পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়াড়িং এজেন্ট স্টাফ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। বাংলাদেশ থেকে বেশ কয়েকটি পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ভারত।’

তিনি বলেন, ‘যেসব পণ্যের এলসি-টিটি এরই মধ্যে হয়ে গেছে, সেসব পণ্য যাতে ভারতে রপ্তানি করা যায়, তার জন্য ভারতীয় কাস্টমসে আলোচনা চলছে। চিঠি পাঠানো হয়েছে দিল্লিতে। আমরাও অপেক্ষায় আছি।’

বাণিজ্যিক সংশিষ্টরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় ৮০ শতাংশ বাণিজ্য হয় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে।

বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাক বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। যার মধ্যে শতাধিক ট্রাকে থাকে গার্মেন্টস শিল্পের তৈরি পোশাক। 

তবে হঠাৎ করে ভারত সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় শনিবার একটি প্রজ্ঞাপনে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্টস শিল্পের তৈরি পোশাক, সুতা, প্লাাস্টিক, কাঠের তৈরি আসবাবপত্র এবং ফল ও ফল জাতীয় পণ্য আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়।

তিনি আরও জানান, এতে বেনাপোল বন্দরে আটকা পড়েছে এসব পণ্য। ভারতের নবসেবা ও কলকাতা বন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানির সুযোগ রাখলেও ওইসব বন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা কঠিন ও ব্যয়বহুল হওয়ায় ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যে আগ্রহ কমেছে।

গত বছর (২০২৩-২৪ অর্থবছর) বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রায় ১৫৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। বছরে ১০ থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয় ভারতে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেশিরভাগ আমদানিকারকেরা বেনাপোল বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী।

এ পথে রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে- প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, পাট, পাটের তৈরি পণ্য, গার্মেন্টস, তৈরি পোশাক, কাঠের আসবাবপত্র, কেমিক্যাল, বসুন্ধরা টিসু, মেলামাইন, মাছ উল্লেখ্যযোগ্য।

বেনাপোল বন্দরে আটকে থাকা রপ্তানি পণ্যবাহী ট্রাক চালকরা বলেন, ‘আগের পণ্য রপ্তানির সুযোগ থাকবে কি না, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। নতুন করে বন্দরে আসা গার্মেন্টস পণ্য নিয়ে ট্রাক আটকা পড়েছি। শেষ পর্যন্ত কী হবে জানি না।’

রপ্তানিকারক ইদ্রিস আলী বলেন, ‘কলকাতা ও নবসেবা সমুদ্রবন্দর দিয়ে রপ্তানি কঠিন ও ব্যয়বহুল। আটকে পড়া রপ্তানি পণ্য নিয়ে বিপাকে পড়েছি।’ হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও সৌহার্দ্য সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। এত ক্ষতির শিকার দুই দেশের ব্যবসায়ীরা।’

বেনাপোল আমদানি-রপ্তানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক বলেন, ‘শনিবার (১৭ মে) ভারত সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে গার্মেন্টস, তুলা, সুতির বর্জ্য, কার্ড ও প্লাস্টিক ও কাঠের তৈরি আসবাবপত্র, ফল জাতীয় পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।’

তিনি বলেন, ‘ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞার পর বেনাপোল বন্দরে শতাধিক রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস পণ্যবাহী ট্রাক আটকা পড়েছে। ভারত সরকারকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে বাণিজ্য সহজ করার দাবি জানাচ্ছি।’ 

বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমস কার্গো শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা আশরাফ আলী বলেন, ‘ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞার পর শনিবার সকাল থেকে কোনো গার্মেন্টস শিল্পের পণ্য ভারতে ঢোকেনি। তবে বেশ কিছু ট্রাক বন্দর ও বন্দর সড়কে দাঁড়িয়ে আছে বলে জানতে পেরেছি।’