ঢাকা শনিবার, ০৭ জুন, ২০২৫

নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে কী বলছে রাজনৈতিক দলগুলো

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ৭, ২০২৫, ০১:৩৪ পিএম
রাজনৈতিক দলগুলোর লোগো।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিল মাসের প্রথমার্ধের যেকোনো দিন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা  মুহাম্মদ ইউনূস। শুক্রবার (৬ জুন) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা জানান।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনসংক্রান্ত চলমান সংস্কার কার্যক্রম পর্যালোচনা করে আমি আজ দেশবাসীর কাছে ঘোষণা করছি যে আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো একটি দিনে অনুষ্ঠিত হবে। এই ঘোষণার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন উপযুক্ত সময়ে আপনাদের কাছে নির্বাচনের বিস্তারিত রোডম্যাপ প্রদান করবে।’

প্রধান উপদেষ্টার ‘নির্বাচনের সময় ঘোষণা’ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ সন্তোষ প্রকাশ করলেও দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ আরও কিছু দল অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। তারা চলতি বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচনের দাবিতেই অনড়। এ ছাড়া বিএনপি প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যকে ‘রাজনৈতিক ভব্যতার সীমা অতিক্রম’ বলেও মন্তব্য করেছে। 

এপ্রিলে রাজি নয়, ডিসেম্বরেই অনড় বিএনপি

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে  সভাপতিত্ব করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। পরে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে নির্বাচন নিয়ে দলীয় অবস্থানের কথা জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায় দলটি। এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন হলে একদিকে আবহাওয়ার সংকট এবং অন্যদিকে রমজানের মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা ও কার্যক্রম এমন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে, যা নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়ার কারণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান কেন সম্ভব নয়, এর কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে উল্লেখ করা হয়নি। 

ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা শব্দচয়নে রাজনৈতিক ‘ভব্যতার সীমা অতিক্রম’ করেছেন উল্লেখ করে বিএনপি ক্ষোভ প্রকাশ করে।

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন হলে এপ্রিলে আপত্তি নেই এনসিপির

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বলেছে, আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধের মধ্যে যদি জুলাই সনদ, জুলাই ঘোষণাপত্র ও সংস্কার বাস্তবায়নের ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তাহলে ঘোষিত এই সময়ে নির্বাচনের বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি নেই।

নির্বাচনের ঘোষিত সময়সীমার বিষয়ে প্রতিক্রিয়ায় গণমাধ্যমকে এ কথা জানান দলটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম, জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্রের আনুষ্ঠানিকতা শেষে জাতীয় নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের দিক থেকে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য আসবে। তারপরও প্রধান উপদেষ্টা আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচনের যে সময়সীমার কথা বলেছেন, যদি এই সময়কালের মধ্যে জুলাই সনদ, জুলাই ঘোষণাপত্র ও সংস্কার বাস্তবায়নের ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তাহলে ঘোষিত সময়ে নির্বাচনের বিষয়ে আমাদের পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি নেই।’

সন্তোষ প্রকাশ করেছে জামায়াত

নির্বাচনে সময়সীমা ঘোষণায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। শুক্রবার (৬ জুন) দলটির আমির শফিকুর রহমান গণমাধ্যমে এক বিবৃতি পাঠিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

জামায়াত আমির বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মাদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো একটি দিনে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন। তাঁর এই ঘোষণায় জাতি আশ্বস্ত হয়েছে। ঘোষিত সময়ের মধ্যেই তিনি একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে জাতি আশা করছে।’

চলতি বছরেই নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন মনে করে সিপিবি

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণে নির্বাচনের যে সময় বলা হয়েছে, তা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। দলের সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘উনি (প্রধান উপদেষ্টা) কী কারণে এপ্রিল মাসে নিয়ে যেতে চাইলেন, আমাদের কাছে বোধগম্য নয়।’

প্রিন্স বলেন, ‘জনগণ এবং অধিকাংশ রাজনৈতিক দল যা চায়, তার আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি। আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, অবশ্যই ২০২৫-এর মধ্যে নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন। নির্বাচন এ বছরের মধ্যেই অনুষ্ঠিত করাটাই জরুরি মনে করি। ’

জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারির কথা বলছে গণঅধিকার

প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময়সীমার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত রোজা থাকবে। এরপর ঈদ। আবার ঈদের পর এপ্রিল মাসে পাবলিক পরীক্ষা আছে। সব মিলিয়ে মনে হয়, জানুয়ারিতে কিংবা ফেব্রুয়ারির শুরুতে নির্বাচনের ঘোষণা এলে ভালো হতো।’

আস্থা রাখতে চায় এবি পার্টি

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচনের যে ঘোষণা দিয়েছেন, তাতে আস্থা রাখতে চায় আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি। জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর এক বিবৃতিতে দলটির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ এ কথা জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচনের যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা আমাদের পূর্ববর্তী প্রস্তাব ও এ–সংক্রান্ত পর্যালোচনার সঙ্গে না মিললেও আমরা তাঁর ওপর আস্থা রাখতে চাই।’

ইতিবাচক গণসংহতি আন্দোলন

জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের প্রতিফলন ছিল বলে মনে করে গণসংহতি আন্দোলন। বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে দলটি। শুক্রবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানিয়েছে তারা।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গণ-অভ্যুত্থানের জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করার জন্য আমরা শুরু থেকেই বলে এসেছি, বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে সরকারের সুস্পষ্ট পরিকল্পনা ঘোষণা করা দরকার। এই তিনটি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের প্রয়োজনীয়তার কথা সাম্প্রতিক রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে বারবার বলা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে এর প্রতিফলন ছিল, সেটা ইতিবাচক।’

প্রধান উপদেষ্টাকে ইসলামী আন্দোলনের ধন্যবাদ

নির্বাচনের সময় ঘোষণা করায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে একধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল। প্রধান উপদেষ্টা আজকে এপ্রিল, ২৬–এর প্রথমার্ধে নির্বাচনের সময় ঘোষণা করে সেই অস্থিরতা প্রশমিত করায় তাঁকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’

স্বাগত জানাল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস

২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সীমা ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। দলটি মনে করে, শুধু সময়সূচি নির্ধারণ যথেষ্ট নয়। একটি কার্যকর, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে এখনই প্রয়োজন সর্বাত্মক প্রস্তুতি, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও ন্যায্য পরিবেশের বাস্তব নিশ্চয়তা।

‘টেনশন দূর হয়েছে’ বলে মনে করে নাগরিক ঐক্য

নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণার ফলে ‘একটা বড় টেনশন দূর হলো’ বলে মনে করছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, ‍‌‍‍‌‌‌‌‌‌‍‍‍‍‘একটা বড় টেনশন দূর হলো বলে আমি মনে করি। এটা হওয়া উচিত ছিল। কারণ, ডিসেম্বর নিয়ে সবার মধ্যে একটা সংশয় তৈরি হয়েছিল। সেটাকে একটা মাঝামাঝি জায়গায় আনা গেছে।’