ঢাকা রবিবার, ০৮ জুন, ২০২৫

মাস্ক চাইলে রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে প্রস্তুত রাশিয়া

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ৭, ২০২৫, ০৯:০৫ পিএম
ছবি- সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ায় যদি বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ক কখনও আমেরিকা ছেড়ে রাশিয়ায় রাজনৈতিক আশ্রয় চাইতে চান, তবে মস্কো তাকে সেই সুযোগ দিতে প্রস্তুত আছে মস্কো। 

রাশিয়ার এমপি এবং পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ দুমার ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান দিমিত্রি নোভিকভ সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানিয়েছেন।

রুশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ দুমার আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান নোভিকভ বৃহস্পতিবার রুশ বার্তা সংস্থা তাসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমার ধারণা, মাস্ক একটি ভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক কৌশলে এগোচ্ছেন। হয়তো তার আশ্রয়ের প্রয়োজন হবে না। তবে যদি কোনো দিন তিনি এমন কিছু চান, রাশিয়া তাকে আশ্রয় দিতে প্রস্তুত।’

তবে তার এ বক্তব্য নিয়ে পরদিন শুক্রবার প্রেসিডেন্ট পুতিনের দপ্তর ক্রেমলিনে আয়োজিত নিয়মিত ব্রিফিংয়ে প্রশ্ন তোলা হলে প্রেসসচিব দিমিত্রি পেসকভ তা নাকচ করে দেন। পেসকভ বলেন, ‘এটি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এতে হস্তক্ষেপের কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই। আমরা বিশ্বাস করি, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই বিষয়টি সামাল দেবেন।’

সম্প্রতি ট্রাম্প ও মাস্কের মধ্যে চলমান উত্তেজনা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। এই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয় এক সরকারি বিল ঘিরে মতবিরোধ থেকে। ট্রাম্পের সেই বিল নিয়ে মতানৈক্যের জেরে মাস্ক তার উপদেষ্টা পদ থেকে সরে দাঁড়ান।

প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ট্রাম্প ও মাস্কের রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার চলছিল এবং মাস্ককে ট্রাম্পের বিভিন্ন সমাবেশে নিয়মিত দেখা যেত। মার্কিন সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ট্রাম্পের প্রচার তহবিলে মাস্ক অনুদান দেন প্রায় ২৮০ মিলিয়ন ডলার।

ট্রাম্প নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর সরকারি ব্যয় হ্রাস ও দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি’ বা সংক্ষেপে ডজ প্রতিষ্ঠা করেন এবং মাস্ককে সেই দপ্তরের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন।

মাস্ক দায়িত্ব নেওয়ার পর সরকারি ব্যয় রোধের নামে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাঁটাই করা হয়, বন্ধ হয়ে যায় বৈদেশিক সহায়তা এবং অভ্যন্তরীণ গবেষণা ও উন্নয়ন প্রকল্পে ভর্তুকি।

এভাবে ব্যাপক ছাঁটাই ও বাজেট সংকোচনের ফলে ট্রাম্প প্রশাসনের জনপ্রিয়তা হ্রাস পায় এবং একাধিক মামলার মুখে পড়ে।

কংগ্রেসে মাস্কের নিয়োগ নিয়েও বিতর্ক ওঠে; রিপাবলিকান পার্টির একাংশও এতে অসন্তুষ্ট ছিল। কংগ্রেস এখনও ডজ-কে সরকারি বিভাগ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি।

এসব ঘটনায় মাস্ক ও ট্রাম্পের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে। সাম্প্রতিক এক সরকারি বিল ঘিরে দ্বন্দ্ব চূড়ান্ত রূপ নেয় এবং মাস্ক পদত্যাগ করেন। ট্রাম্প এই পদত্যাগকে স্বাগত জানান।

তবে মাস্ক সরকারি বিলটি রুখতে এখন আরও সক্রিয় হয়েছেন। বৃহস্পতিবার এক্স-এ দেওয়া বার্তায় তিনি জনগণকে রাস্তায় নামার আহ্বান জানান।

এদিকে ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘মাস্ক এই বিলের বিরোধিতা করছেন মূলত ব্যক্তিগত স্বার্থে। কারণ, এটি তার মালিকানাধীন টেসলার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে।’ বিল-সংক্রান্ত বিতর্ক শুরুর পর থেকে মাস্কের প্রতিষ্ঠান টেসলার শেয়ারের দাম ইতোমধ্যে ১৪ শতাংশ পড়ে গেছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম।