বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


জুবায়ের দুখু

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৫, ০৭:২২ এএম

বিশ্বদরবারে বাড়ছে জামায়াতের কূটনৈতিক নড়াচড়া

জুবায়ের দুখু

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৫, ০৭:২২ এএম

ইইউ অন্তর্ভূক্ত ৮টি দেশের প্রতিনিধিদের  সঙ্গে  জামায়াত আমির-এর সৌজন্য সাক্ষাত। ছবি- সংগৃহীত

ইইউ অন্তর্ভূক্ত ৮টি দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে জামায়াত আমির-এর সৌজন্য সাক্ষাত। ছবি- সংগৃহীত

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে কোণঠাসা থাকলেও, সাম্প্রতিক সময়ে কূটনৈতিক অঙ্গনে তাদের তৎপরতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সংগঠনটি দেশে-বিদেশে নতুন করে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করতে সক্রিয় হয়েছে। দলের কূটনৈতিক উইং এখন বিশ্বদরবারে জামায়াতের ‘পজিটিভ ইমেজ’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নানা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। গতবছর ৫ আগস্ট পর থেকে অন্তত ৩০টি দেশের সঙ্গে দলটি রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। শুধু ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দুই সপ্তাহেই জামায়াত ১৫টি দেশের সঙ্গে বৈঠক করেছে।

বৈঠক ও সফর, কূটনৈতিক যোগাযোগ

জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃত্ব ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন। দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরসহ শীর্ষ নেতারা এ সব বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন। চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক, ইরান, সৌদি আরব, পাকিস্তান, জাপান, মালয়েশিয়া, ব্রাজিলসহ প্রায় ৩০টিরও বেশি দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তারা মতবিনিময় করেছেন। এসব বৈঠকে জামায়াত নেতারা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা, নির্বাচনের স্বচ্ছতা, মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং তাদের সংগঠনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য তুলে ধরছেন।

৫ আগস্ট মূলে

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরই মূলত জামায়াতের ওপর আন্তর্জাতিক মহলের নজর বাড়তে শুরু করে। অভ্যুত্থানে জামায়াত ও তাদের ছাত্রসংগঠন ছাত্রশিবিরের ভূমিকা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংসদগুলোতে বিজয় অর্জন তাদের আন্তর্জাতিক গুরুত্বকে বাড়িয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে অনেক রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিক জামায়াত নেতাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও মতবিনিময়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

জামায়াত আমিরের কার্যালয়ে চীনের রাষ্ট্রদূত। ছবি- সংগৃহীত

ঢাকার বড় মগবাজারে অবস্থিত জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এখন নিয়মিতভাবে বিদেশি কূটনীতিকদের আগমনে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। এমনকি প্রতি সপ্তাহেই কোনো না কোনো দেশের প্রতিনিধি এই কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। শুধু বৈঠক নয়, অনেক সময় রাষ্ট্রদূতরা দলটির আমীরের বাসভবনেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন। বিশেষ করে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার খোজিন, ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলারের সঙ্গে একাধিকবার মতবিনিময় হয়েছে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়ন

দেশের অভ্যন্তরে কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি জামায়াতের নেতারা বিভিন্ন দেশের সফরেও অংশ নিচ্ছেন। এরই মধ্যে জামায়াতের আমিরর যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, কুয়েত এবং চীন সফর সম্পন্ন করেছেন। অন্যদিকে, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার জাপান ও তুরস্ক সফর করেছেন।

চলতি বছরের ৮ মার্চ ঢাকার গুলশানে একটি হোটেলে জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে আয়োজিত ইফতার মাহফিল ছিল এক বিশেষ কূটনৈতিক কৌশল। এখানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়া, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক, পাকিস্তান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরানসহ প্রায় ৩০টির অধিক দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিক অংশগ্রহণ করেন। জামায়াতের আমির সেখানে বক্তব্য দিয়ে আওয়ামী সরকারের সময় সংগঠনের ওপর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন এবং কূটনীতিকদের কাছে একটি ‘গঠনমূলক, শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক’ জামায়াতের বার্তা পৌঁছান।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা কী বলছে?

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আধুনিক বিশ্বে রাজনৈতিক দলগুলোর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমানের মতে, ‘জামায়াত যেহেতু রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সক্রিয় হয়েছে, তাই আন্তর্জাতিকভাবে নিজেদের পরিচিতি বাড়ানো তাদের রাজনৈতিক কৌশলের অংশ।’

জামায়াতে আমির কূটনীতিকদের সম্মানে দলটির আয়োজিত ইফতার মাহফিলে বক্তব্য দেন। ঢাকা, ৮ মার্চ ২০২৫। ছবি- সংগৃহীত

সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সাহাবুল হক বলেন, ‘দেশে দীর্ঘদিন জামায়াত নিষ্ক্রিয় থাকলেও তারা একটি সুসংগঠিত রাজনৈতিক শক্তি, যার একটি বিশাল জনভিত্তি ও প্রশিক্ষিত কর্মীবাহিনী রয়েছে।’

দমন-পীড়ন থেকে পুনরুত্থান

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই জামায়াতের বিরুদ্ধে ব্যাপক দমন-পীড়ন শুরু হয়। কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ জেলা-উপজেলার অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়, নেতাদের কারাবরণ ও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। গত বছর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে এই পরিস্থিতির অবসান ঘটে। ৫ আগস্ট কেন্দ্রীয় কার্যালয় পুনরায় খোলার মাধ্যমে তারা সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরে আসে। এ সময় আজানের ধ্বনির মাধ্যমে মগবাজারে কার্যালয় চালু করা হয়, যা ছিল এক প্রতীকী বিজয়।

আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের প্রয়াস

জামায়াতের কূটনৈতিক উইং বর্তমানে আগের চেয়ে অনেক বেশি সংগঠিত এবং লক্ষ্যভিত্তিক কাজ করছে। বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ, তথ্য প্রদান, ইভেন্ট আয়োজনের মাধ্যমে তারা বিশ্বমঞ্চে নিজেদের পক্ষে সমর্থন আদায়ের কৌশল গ্রহণ করেছে। এরই অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও থিংকট্যাঙ্কগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। সংগঠনের নেতারা বলছেন, তারা প্রমাণ করতে চান যে, আওয়ামী লীগের আমলে জামায়াত সম্পর্কে যে নেতিবাচক বার্তা দেওয়া হয়েছে, তা ছিল বিভ্রান্তিমূলক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

Link copied!