ঢাকা সোমবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৫

বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদের ৮৫ শতাংশ উচ্চশিক্ষিত

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০২৫, ০২:১৬ পিএম
বিএনপির লোগো। ছবি- সংগৃহীত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়াতাবাদী দল (বিএনপি) ঘোষিত প্রার্থীদের ৮৫ শতাংশই উচ্চশিক্ষিত। তাদের মধ্যে পিএইচডি ডিগ্রি রয়েছে ৬ জনের। অন্তত দুজন প্রার্থী পড়াশোনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা আইভি লীগের অন্তর্ভুক্ত দুটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। চিকিৎসক ও ইঞ্জিনিয়ার ২০ জন। এ ছাড়া বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন প্রায় ১৪ শতাংশ প্রার্থী। আর অন্তত ৪০ শতাংশ প্রার্থী পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়টির অধিভুক্ত কলেজ থেকে। গত ৩ নভেম্বর প্রকাশিত বিএনপির প্রার্থী তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের শিক্ষাগত যোগ্যতা বিশ্লেষণ করে এমব তথ্য পাওয়া গেছে।

দলটির দাবি, শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদ পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ গড়তে জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা, তার প্রতি সম্মান জানিয়েই এই প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেছে বিএনপি।

৮৫ শতাংশ প্রার্থীই উচ্চশিক্ষিত

উচ্চ মাধ্যমিক বা এইচএসসি পরবর্তী বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সমমানের শিক্ষাকে সাধারণ উচ্চশিক্ষা হিসেবে গণ্য করা হয়। উচ্চশিক্ষাকে সাধারণত তিনটি স্তরে ভাগ করা যায়- স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও ডক্টরেট। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বা সমমানের প্রতিষ্ঠান থেকে প্রদত্ত বিএ, বিবিএ, বিএসএস, বিএসসি ইত্যাদি ডিগ্রিকে ধরা হয় স্নাতক সমমানের ডিগ্রি। এ ছাড়া ইসলামি ধারার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আলিয়া মাদ্রাসাগুলোতে ফাজিলকে স্নাতক সমমানের ডিগ্রির স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

বিএনপির প্রাথমিক প্রার্থী তালিকার ২৩৭ জনের মধ্যে এখন পর্যন্ত প্রার্থিতা বহাল আছে ২৩৬ জনের। তাদের মধ্যে একক প্রার্থী রয়েছেন ২৩৪ জন, যাদের ২২৩ জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা দলটির কার্যালয়ের একটি উচ্চপর্যায়ের সূত্র থেকে নিশ্চিত করা গেছে। এই ২২৩ জনের মধ্যে ৮৭ জন স্নাতক পর্যায় পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন।

স্নাতক সমমানের শিক্ষাগত যোগ্যতা রয়েছে এমন ব্যক্তিদের প্রায় ২০ শতাংশই পড়াশোনা করেছেন আইন বিষয়ে। এছাড়া অন্তত ১৬ শতাংশ পড়াশোনা করেছেন বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে এবং ১৮ শতাংশ পড়াশোনা করেছেন ব্যবসায় শিক্ষায়। শুধু স্নাতক পর্যায় পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন এমন ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত আটজন পড়াশোনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়াতে।

এ ছাড়া আইন বিষয়ে বিদেশে এলএলবি করেছেন এমন প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাজ্যের ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও খ্যাতনামা আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন, যিনি জুলাই আন্দোলনে মার্চ ফর জাস্টিস সংগঠনে ভূমিকা রেখেছিলেন। নেত্রকোনা-১ আসন থেকে মনোনীত ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এলএলবি করেছেন যুক্তরাজ্যের উলভারহ্যাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রাগিব রউফ চৌধুরী, যিনি লড়বেন কুষ্টিয়া-২ আসন থেকে। নাটোর-১ আসনের ফারজানা শারমিন পুতুলও পড়াশোনা করেছেন যুক্তরাজ্যে।

স্নাতকোত্তরের সংখ্যা সর্বোচ্চ

স্নাতক স্তরের পরবর্তী ডিগ্রি নিয়েছেন এমন প্রার্থীর সংখ্যা এখন পর্যন্ত একশো যাদের মধ্যে অন্তত ৯০ জনের মাস্টার্স বা সমমানের ডিগ্রি রয়েছে। এ ছাড়া অন্তত ছয়জনের রয়েছে পিএইচডি সমমানের ডিগ্রি, যাদের অন্তত তিনজন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে একসময় শিক্ষকতাও করেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি পড়াশোনা করছিলেন যুক্তরাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং সেখান থেকেই প্রবাসীদের স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে সংগঠিত করেছিলেন। তিনি তার পিএইচডি সম্পন্ন করে সদ্য স্বাধীন দেশে ফিরে আসেন সত্তরের দশকে এবং রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের আহ্বানে যোগ দেন বিএনপিতে। বর্তমানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য লড়বেন কুমিল্লা-১ আসন থেকে।

এ ছাড়া নরসিংদী-২ আসন থেকে লড়বেন ড. আব্দুল মঈন খান, যিনি পিএইচডি সম্পন্ন করেছেন যুক্তরাজ্যের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ২০০২ সালে তিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রকাশনায় একজন সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে তার মন্ত্রিত্বের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। তিনি দায়িত্বে থাকাকালীন সময়েই বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলের নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়।

বিশ্বখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্যাক্সেশন বা কর আরোপ সংক্রান্ত বিষয়ে এমএসসি করেছেন ব্যারিস্টার মুহম্মদ নওশাদ জমির। এ ছাড়া তিনি এলএলএম করেন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত আইভি লীগের অন্তর্গত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হার্ভার্ড ল স্কুল থেকে। নওশাদ জমির লড়বেন পঞ্চগড়-১ আসন থেকে।

বিএনপির প্রার্থী তালিকায় আরও রয়েছেন বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. ওসমান ফারুক। তিনি পিএইচডি করেছেন আইভি লীগের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি অর্থনীতির ওপর। তিনি কিছুদিন ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাও করেছেন।

স্নাতকোত্তর ডিগ্রি রয়েছে এমন প্রার্থীদের তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, স্নাতকোত্তরদের প্রায় ৪০ শতাংশ পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়টির অধিভুক্ত কলেজ থেকে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম এবং সালাহউদ্দিন আহমেদ রয়েছেন এই তালিকায়।

এ ছাড়া রয়েছেন দলটির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের এক ঝাঁক নেতা যারা এবার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহসানুল হক মিলন, সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী আমান উল্লাহ আমান, খায়রুল কবির খোকন, খন্দকার আবু আশফাক, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আজিজুল বারী হেলাল, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, শহীদুল ইসলাম বাবুল, রাজিব আহসান ও কাজী রওনকুল হাসান। শেখ হাসিনা সরকারের সময় গুম হওয়া ছাত্রদল নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য এম ইলিয়াস আলীর সহধর্মিণী তাহসিনা রুশদীরও স্নাতকোত্তর করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগ থেকে।

তালিকায় স্থান পেয়েছেন প্রায় এক ডজন ডাক্তার ও প্রকৌশলী

বিএনপির প্রার্থীদের তালিকায় থাকা ১১ জন ডাক্তারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ইউরোলোজিস্ট ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। দেশে এমবিবিএস সম্পন্ন করার পর যুক্তরাজ্যের রয়্যাল কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স এডিনবরা থেকে এফআরসিপি সম্পন্ন করেন তিনি।

তালিকায় আরও আছেন ডা. এম এ মুহিতের মতো সমাদৃত জনস্বাস্থ্যবিদ। এই বিষয়ে তিনি উচ্চতর পড়াশোনা করেছেন লন্ডন স্কুল অব হাইজিন ও ট্রপিক্যাল মেডিসিন থেকে। ডা. মুহিত লড়বেন সিরাজগঞ্জ-৬ আসন থেকে।

২০১৮ সালের নির্বাচনে সর্বকনিষ্ঠ প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাওয়া ডা. সানসিলা জাবরিন এবারও মনোনয়ন পেয়েছেন শেরপুর-১ আসন থেকে। তিনি ছাড়াও ডাক্তারি পেশায় যুক্ত এবং এই বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন এমন প্রার্থীদের মধ্যে আছেন খন্দকার জিয়াউল ইসলাম মোহাম্মাদ আলী, অধ্যাপক সৈয়দ মাইনুল হাসান সাদিক, একরামুল বারী টিপু, মাহবুবুর রহমান লিটন, আনোয়ারুল হক, দেওয়ান মো. সালাহউদ্দিন, অধ্যাপক এস এম রফিকুল ইসলাম এবং আবু মনসুর সাখাওয়াত হোসেন জীবন।

প্রকৌশলীদের মধ্যে রয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-অ্যাবের উপদেষ্টা প্রকৌশলী মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী, বুয়েট থেকে পাস করা সিভিল ইঞ্জিনিয়ার জাকির হোসেন সরকার ও বুয়েট গ্র্যাজুয়েটস ক্লাবের বর্তমান সভাপতি খালেদ হোসেন মাহবুব। এ ছাড়া তালিকায় আছেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে রুয়েট থেকে পাস করা আশরাফ উদ্দিন বকুল। এ ছাড়া দেশের বাইরে প্রকৌশল বিদ্যায় ডিগ্রি নিয়েছেন শামা ওবায়েদ, ইশরাক হোসেন, মাইনুল ইসলাম খান এবং ফাহিম চৌধুরী।