ঢাকা সোমবার, ০২ জুন, ২০২৫

কালই কি ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীক ফিরে পাচ্ছে জামায়াত?

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ৩১, ২০২৫, ০৯:১৮ পিএম
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর লোগো।

আগামীকাল রোববার (১ জুন) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন ও ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীকের বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতের রায় ঘোষণা হবে। ফলে এদিনই দুটি বিষয়ে সমাধান পাওয়ার আশা করছেন দলটির আইনজীবী ও নেতারা।

শনিবার (৩১ মে) সুপ্রিমকোর্ট আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় দেখা গেছে, রায় ঘোষণার জন্য আবেদনটি ১ নম্বর ক্রমিকে রয়েছে।

এরআগে আপিল আবেদনের শুনানি শেষে গত ১৪ মে রায় ঘোষণার জন্য এই দিন ঠিক করে দেয় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ।

আপিল শুনানি করা জামায়াতের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার এহসান আব্দুল্লাহ সিদ্দিক বলেন, ‘আমরা আপিল বিভাগের রায়ের জন্য অপেক্ষা করছি।’

জামায়াতের পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, ‘প্রত্যাশা করব, রোববারই (১ জুন) জামায়াতে ইসলামী তার নিবন্ধন ফিরে পাবে।’

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারও আশা করছেন, নিবন্ধনের রায় জামায়াতের পক্ষে আশার পাশাপাশি বহাল থাকবে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকটিও।

যেভাবে নিবন্ধন হারায় জামায়াত

২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে নিবন্ধন দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পরে ২০০৯ সালে তরিকত ফেডারেশনের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ কয়েকজন জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট করেন।

 

ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট জামায়াতকে দেওয়া ইসির নিবন্ধন অবৈধ বলে রায় দেয় বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

ওই রায় ঘোষণার পরপরই তা স্থগিত চেয়ে আবেদন করে দলটি। কিন্তু ২০১৩ সালের ৫ আগস্ট খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগের তৎকালীন চেম্বার বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী।

পরে লিভ টু আপিল করে জামায়াত। সেই সঙ্গে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে আপিল আবেদন করে জামায়াত।

‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীকে জটিলতা

এদিকে কোনো রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীকে প্রতীক হিসেবে দাঁড়িপাল্লা বরাদ্দ না দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) একটি চিঠি দেয় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।

 

ওই চিঠির ভাষ্য ছিল, সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিদের উপস্থিতিতে ১২ ডিসেম্বর (২০১৬ সালের) ফুল কোর্ট সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, ‘দাঁড়িপাল্লা’ ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে একমাত্র সুপ্রিম কোর্টের মনোগ্রামে ব্যবহৃত হবে। অন্য কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার না করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানানো হোক।

চিঠির শেষাংশে বলা হয়, ‘এ অবস্থায় সুপ্রিম কোর্টের ফুল কোর্ট সভার ওই সিদ্ধান্ত অনুসারে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতীক হিসেবে বা কোনো নির্বাচনে প্রার্থীর প্রতীক হিসেবে ‘দাঁড়িপাল্লা’ বরাদ্দ প্রদান না করা এবং যদি বরাদ্দ করা হয়ে থাকে তাহলে ওই বরাদ্দ বাতিল করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’

পরে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে দেওয়া নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া উচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে দলটির করা আপিল ও লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর খারিজ করে আদেশ দেয় আপিল বিভাগ। আপিলকারীর পক্ষে সেদিন কোনো আইনজীবী না থাকায় আপিল বিভাগ ওই আদেশ (ডিসমিসড ফর ডিফল্ট) দেয়।

আ.লীগ পতনে আপিল পুনরুজ্জীবিত

এরমধ্যে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০২৪ সালের ১ আগস্ট জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান।

পরে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এরপর জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামি ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে জারি করা আগের প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয়।

 

অন্যদিকে ২৮৬ দিন বিলম্ব মার্জনা করে আপিল এবং ২৯৪ দিন বিলম্ব মার্জনা করে লিভ টু আপিল পুনরুজ্জীবিত চেয়ে জামায়াতের পক্ষ থেকে পৃথক আবেদন করা হয়। পরে গত ২২ অক্টোবর রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন ফিরে পেতে জামায়াতে ইসলামীর আপিল ও লিভ টু আপিল পুনরুজ্জীবিত করে আদেশ দেয় আপিল বিভাগ।

এরপর শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ওঠে। গতবছরের ৩ ডিসেম্বর শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষে গত ১৪ মে রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করে সর্বোচ্চ আদালত

ন্যায়বিচার পাওয়ার আশা জামায়াত নেতাদের

জামায়াতের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, দাঁড়িপাল্লা প্রতীক বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ব্যবহার করছে অনেক আগে থেকে। আর সুপ্রিম কোর্টে দাঁড়িপাল্লা প্রতীক আসছে ১৯৭২ সাল থেকে।

‘বাংলাদেশে যতবার সংসদ নির্বাচন হয়েছে সব নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে অংশগ্রহণ করেছে। নির্বাচিত হয়েছে, মন্ত্রী হয়েছে। দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভায় ২০১৬ সালে একটি সিদ্ধান্ত হয়েছিল। আমরা একটি নির্দেশনা চেয়েছি আদালতের কাছে। আদালত যাতে এই মর্মে পর্যবেক্ষণ দেন, যাতে নির্বাচন কমিশন এই বিষয়ে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত দেন।’

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার অভিযোগ করেন, পতিত আওয়ামী লীগ সরকার অন্যায়ভাবে জুলুম করে দলটির নিবন্ধন বাতিল করেছিল। এখন সুবিচার পাওয়ার আশাও করছেন তারা।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি আবদুল হালিম বলেন, ‘১৯৭৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জামায়াতের ৫৫ জন প্রতিনিধি জাতীয় সংসদে নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে ৫০ জন পুরুষ ও ৫ জন নারী। নিবন্ধন না পাওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। আশা করি, আমরা সাংবিধানিক ও আইনগত পন্থায় ন্যায়বিচার পাব।’