বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২৫, ০৬:৩৭ পিএম

শিক্ষা সংস্কারে ৩০ দফা প্রস্তাবনা দিল ছাত্রশিবির

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২৫, ০৬:৩৭ পিএম

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। ছবি- সংগৃহীত

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। ছবি- সংগৃহীত

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে যুগোপযোগী, আধুনিক, কল্যাণমুখী ও নৈতিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে পুনর্গঠনের লক্ষ্যে ৩০ দফা সংস্কার প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। 

বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) বিকেল ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে আয়োজিত ‘শিক্ষা সংস্কার প্রস্তাবনা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে এই প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।

শিক্ষা সংস্কারে জরুরি উদ্যোগের আহ্বান

লিখিত বক্তব্যে জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘অভ্যুত্থানের এক বছর অতিক্রম করে আমরা এখন দ্বিতীয় বর্ষে পদার্পণ করেছি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের লক্ষ্য পূরণে ফ্যাসিবাদী সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা পরিবর্তনের পাশাপাশি শিক্ষাব্যবস্থাকে আধুনিকীকরণ, কল্যাণমুখী এবং সামাজিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে পুনর্গঠন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষা সংস্কারের বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট ঘোষণা বা কর্মসূচি দেখা যাচ্ছে না। সমৃদ্ধ জাতি গঠনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই ক্ষেত্রটিকে বারবার উপেক্ষা করা হচ্ছে, যা গভীরভাবে হতাশাজনক।’

তিনি উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। সংগঠনটি বিশ্বাস করে, একটি আদর্শ জাতি গঠনে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। ছাত্রশিবিরের মৌলিক পাঁচ দফা কর্মসূচির অন্যতম অংশ হলো ইসলামী শিক্ষা আন্দোলন ও ছাত্রসমস্যা সমাধান।’

ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে শিক্ষা সংস্কার

জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে ১৯০ বছরের দীর্ঘ আজাদীর লড়াইয়ের বিজয় এসেছিল ১৯৪৭ সালে। এটি শুধু ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তিই নয়, বরং জমিদারি প্রথার বিলুপ্তি ও নাগরিকত্বের স্বীকৃতির সূচনা ছিল। কিন্তু পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর ভাষা ও সংস্কৃতির অবমূল্যায়ন এবং রাজনৈতিক বৈষম্য পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে, যা ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত ইতিহাসকে নতুন দিকে নিয়ে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পরও ৫৪ বছর পার হয়ে গেলেও এই দেশের মানুষ স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ পায়নি। শিক্ষা, সংস্কৃতি ও রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধে চরম অবক্ষয়, গণতান্ত্রিক কাঠামোর ধ্বংস, এবং প্রাতিষ্ঠানিক ব্যর্থতা রাষ্ট্রকে অকার্যকর করে তুলেছে। একদলীয় শাসন, দমন-পীড়ন, গুম, দুর্নীতি, ভোটাধিকার হরণ এবং অর্থ পাচারের সংস্কৃতি দেশে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। এই শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সংঘটিত ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান নতুন জাতিরাষ্ট্র বিনির্মাণের সম্ভাবনা তৈরি করেছে।’

জুলাই বিপ্লবের চেতনায় শিক্ষাব্যবস্থা

ছাত্রশিবির সভাপতি বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা পূরণে শিক্ষাব্যবস্থা হতে হবে সমতাভিত্তিক, প্রযুক্তিনির্ভর ও সৃজনশীল। যা নৈতিকতা, মানবিক মূল্যবোধ, বিজ্ঞানমনস্কতা এবং কর্মদক্ষতা বিকশিত করবে। শহর-গ্রাম, নারী-পুরুষ, ধনী-গরিব, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল বৈষম্য দূর করে বিনামূল্যে ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করাই হওয়া উচিত মূল লক্ষ্য।’

তিনি জানান, ইউনেস্কোর সুপারিশ অনুযায়ী জিডিপির ন্যূনতম ৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে ব্যয় করা উচিত হলেও বাংলাদেশে এই হার ২ শতাংশেরও কম। উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন—সিঙ্গাপুর জাতীয় বাজেটের প্রায় ১০ শতাংশ, মালয়েশিয়া ১৭-২০ শতাংশ, ভারত ১৩-১৭ শতাংশ (জাতীয় বাজেটে প্রায় ২.৫%) এবং চীন ১০-১৩ শতাংশ শিক্ষাখাতে বরাদ্দ করে। কিন্তু বাংলাদেশে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ মাত্র ১.৮–২ শতাংশ, যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের তুলনায় অনেক পিছিয়ে।

৩০ দফা সংস্কার প্রস্তাবনা

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত ছাত্রশিবিরের ৩০ দফা প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে

  • অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা কমিশন গঠন।
  • জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্তকরণ।
  • ইসলামী মূল্যবোধ ও নৈতিকতা-সমন্বিত আধুনিক শিক্ষাক্রম প্রণয়ন।
  • বহুমাত্রিক মূল্যবোধ বিকাশ, STEM শিক্ষায় অগ্রাধিকার।
  • ভাষা শিক্ষা সংস্কার।
  • সামরিক ও শারীরিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ।
  • শিক্ষা বাজেট অগ্রাধিকার।
  • শিশুদের জন্য আনন্দদায়ক স্কুলিং।
  • উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক শিক্ষা আইন।
  • স্বাধীন নিয়োগ কমিশন প্রণয়ন।
  • নারী শিক্ষার প্রসারে উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতকরণ।
  • শতভাগ আবাসন ও আধুনিক ব্যবস্থাপনা।
  • শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও কাউন্সেলিং।
  • গবেষণামুখী উচ্চশিক্ষা।
  • মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার।
  • কারিগরি শিক্ষার মান বৃদ্ধি।
  • মূল্যায়ন পদ্ধতির সংস্কার।
  • শিক্ষক প্রশিক্ষণ কাঠামোর আধুনিকায়ন।
  • শিক্ষক মূল্যায়নের কার্যকর পদ্ধতি।
  • চাকরিতে সমান সুযোগ ও ন্যায়ভিত্তিক প্রবেশাধিকার।
  • ছাত্ররাজনীতির সুষ্ঠু চর্চা ও নিয়মিত ছাত্রসংসদ নির্বাচন।
  • কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি।
  • উপজাতি ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার উন্নয়ন।
  • অভিভাবক-অংশগ্রহণ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ।

জাহিদুল ইসলাম আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘এই ৩০ দফা প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে শিক্ষাব্যবস্থার মৌলিক ত্রুটি দূর হবে এবং সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরির পথ সুগম হবে, ইনশাআল্লাহ।’

Shera Lather
Link copied!