দুইটি শর্তে জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এ স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির দাবি, (১) জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের মাধ্যমে সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে হবে এবং (২) এই গণভোট অবশ্যই নভেম্বর মাসের মধ্যেই সম্পন্ন করতে হবে। জামায়াত জানিয়েছে, এ শর্তগুলো মৌখিকভাবে উপস্থাপন করেই তারা সনদে স্বাক্ষর করেছে।
এর আগে জামায়াত জানিয়ে এসেছিল, বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিশ্চিত না হলে তারা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে না। তবে শেষ পর্যন্ত গতকাল শুক্রবার বিকেলে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় আয়োজিত স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেয় দলটি এবং আনুষ্ঠানিকভাবে সনদে স্বাক্ষর করে। জামায়াতের পক্ষে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ এবং অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।
এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, ‘আমাদের দাবি হলো, জুলাই জাতীয় সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে হবে গণভোটের মাধ্যমে। এই শর্তে আমরা সনদে স্বাক্ষর করেছি। আমরা স্পষ্ট করে বলেছি- নভেম্বরের মধ্যেই গণভোট আয়োজন করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন এটা কেবল একটি দলিল মাত্র। গণভোট ছাড়া এর কোনো আইনি ভিত্তি হবে না, এবং নভেম্বরের মধ্যে তা নিশ্চিত করতেই হবে।’
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান ভিন্ন। বিএনপিসহ কয়েকটি দল চায়, জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে একই দিনেই গণভোট হোক। অন্যদিকে জামায়াতসহ সাতটি দল চাইছে, নির্বাচনের আগে, অর্থাৎ নভেম্বরে আলাদা করে গণভোট আয়োজন করতে হবে। এই দাবিতে গত ১৫ ও ১৬ অক্টোবর দেশব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে জামায়াতসহ সাতটি দল।
মানববন্ধনে অংশ নেয়- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, নেজামে ইসলামী পার্টি এবং রাশেদ প্রধানের নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)। তবে এই সাত দলের মধ্যে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন এবং জাগপা-কে সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এমনকি ঐকমত্য কমিশনের আলোচনাতেও তাদের ডাকা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
জামায়াত জানিয়েছে, তারা যুগপৎ আন্দোলনের শরিক অন্য ছয়টি দলের সঙ্গে আলোচনা করেই সনদে সইয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। দলের নেতাদের মতে, সরকার যদি এই শর্ত না মানে, তাহলে তারা দাবি আদায় করেই নির্বাচনে অংশ নেবে।
সনদ স্বাক্ষরের পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘জুলাই সনদ স্বাক্ষর হলেও তাতে সংকট থেকে গেছে। এটি বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, আইনি ভিত্তি দিতে হবে। না হলে এই বিপ্লবের স্পিরিট, ঐকমত্যে পৌঁছানোর যে সংস্কার, তা ব্যাহত হবে এবং অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। তাই একটি আদেশ জারি করে গণভোটের মাধ্যমে এই সনদকে টেকসই করতে হবে।’
এদিকে, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেয়নি। দলটি জানিয়েছে, আইনি ভিত্তির নিশ্চয়তা না থাকায় তারা সনদে স্বাক্ষর করেনি।
এনসিপির মতে, এই সনদ কার্যকর করতে হলে প্রধান উপদেষ্টাকে একটি বিশেষ সংবিধান আদেশ জারি করতে হবে। সেই আদেশের ভিত্তিতে গণভোট হবে এবং পরবর্তী সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা দেওয়া সম্ভব হবে।
আজ শনিবার জামায়াত নেতা এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, ‘জুলাই সনদ এখন কেবল একটি দলিল। এটি কার্যকর করতে হলে গণভোট ছাড়া উপায় নেই। আমরা নভেম্বরের মধ্যেই গণভোট আয়োজনের শর্তে সই করেছি।’
তিনি আরও জানান, ‘জুলাই সনদ নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের কাজ শেষ। এখন বিষয়গুলো অন্তর্বর্তী সরকারের কোর্টে।’