ঢাকা রবিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২৫

‘ধর্মীয় উদ্দেশ্যে’ বোরকা পরিধান নিষিদ্ধ পর্তুগালে

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৮, ২০২৫, ০৯:১৬ পিএম
বোরকা পরিহিত কয়েকজন নারী। ছবি- সংগৃহীত

‘লিঙ্গ বা ধর্মীয় উদ্দেশ্যে’ পাবলিক প্লেসে বোরকা বা নিকাব পরিধান নিষিদ্ধ করল পর্তুগাল। সংসদে বিতর্কিত বিলটির প্রস্তাব করে দেশটির অতি-ডানপন্থী চেগা পার্টি। পার্লামেন্ট মেম্বাররাও (এমপি) এই বিতর্কিত প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। ফলে এটি এখন আইনে পরিণত হতে যাচ্ছে। আর আইন অমান্য করলে জেল-জরিমানাও করা হবে বলে জানা গেছে।

তবে দেশটির সংখ্যালঘু মুসলিম ধর্মালম্বীদের অভিযোগ, পর্তুগাল সরকার সরাসরি মুসলিম নারীদের লক্ষ্যবস্তু করছে। এমনকি ধর্মীয় ও নাগরিক স্বাধীনতা খর্বের অভিযোগও করছেন তারা। কারণ ইসলাম ধর্মে পর্দা (শালীন পোশাক ও মুখায়ব ঢেকে রাখা) করা প্রত্যেক নারীর জন্য বাধ্যতামূলক।

শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিলটি উত্থাপিত হলে অনুমোদন করে পর্তুগাল পার্লামেন্ট। বিলটি এখন সাংবিধানিক বিষয়, অধিকার ও স্বাধীনতার সঙ্গে সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে আলোচনার জন্য পাঠানো হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট মার্সেলো রেবেলো ডি সুসা বিলটি ভেটো দিতে বা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য সাংবিধানিক আদালতে পাঠাতে পারেন। সেখানে অনুমোদন পেলে আইনে পরিণত হবে বিতর্কিত এই বিলটি। ইতোমধ্যেই ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডসে পুরো বা আংশিক মুখ ঢাকা পোশাক আইনিভাবে নিষিদ্ধ। বিলটি স্বাক্ষরিত হলে এসব দেশের তালিকায় নাম লেখাবে দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপের রাষ্ট্রটি।

সংবাদমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে, এই আইন পালনে কড়াকড়ি অবস্থান নিতে যাচ্ছে পর্তুগাল সরকার। আইন অমান্য করে মুখ ঢেকে (বোরকা বা নিকাব) রাখলে ২ হাজার ৮৪৭ থেকে ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৫২০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা গুনতে হবে। অন্যকে পরিধানে বাধ্য করলে শাস্তি হিসেবে ভোগ করতে হবে তিন বছরের কারাদণ্ড।

তবে এই আইনে কিছু ব্যতিক্রম রাখা হয়েছে। বিমানবন্দর, কূটনৈতিক বা কনস্যুলার এরিয়া এবং উপাসনাস্থল বা অন্যান্য পবিত্র স্থানে মুখ ঢেকে রাখা যাবে। নিরাপত্তা বা জলবায়ু পরিস্থিতি, অথবা অন্যান্য আইনগত বাধ্যবাধকতার কারণে মুখ ঢেকে রাখা হলে এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে না। তবে কখন স্বাস্থ্যগত বা নিরাপত্তা পরিস্থিতি হিসেবে গণ্য হবে- এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বর্ণনা পাওয়া যায়নি। ফলে এসব কারণে কেউ বোরকা পরিধান করলে তাকে ‘লিঙ্গ বা ধর্মীয় উদ্দেশ্যে’ পরিধান বলে হয়রানির শিকার হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।

সংসদীয় ভোটে চেগা পার্টির নেতা আন্দ্রে ভেনচুরা বামপন্থী নারী আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে বিতর্কে অংশ নেন। ভোটের আগে তিনি বলেন, ‘আমরা আজ সংসদের নারী সদস্যদের, আপনার-আমার মেয়েদের এই দেশে একদিন বোরকা পরার হাত থেকে রক্ষা করছি।’ পরে এক্সে দেওয়া পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘আজ আমাদের গণতন্ত্রের জন্য এবং আমাদের মূল্যবোধ, পরিচয় ও নারী অধিকার রক্ষার জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন।’

ক্ষমতাসীন সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির আইনপ্রণেতা আন্দ্রেয়া নেটো ভোটের আগে বলেছেন, ‘এটি পুরুষ ও নারীর সমতা নিয়ে বিতর্ক। কোনও নারীকে তার মুখ ঢাকতে বাধ্য করা উচিত নয়।’ সংসদের ১০টি দলের মধ্যে দুটি দল পিপল-অ্যানিম্যালস-নেচার পার্টি ও টুগেদার ফর দ্য পিপল ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে। তাদের মতে, প্রস্তাবটি বৈষম্যকে উসকে দিতে পারে।

উল্লেখ্য, ইউরোপে খুব কম সংখ্যক মুসলিম নারী মুখ ঢাকা পোশাক পরেন। পর্তুগালে এর সংখ্যা প্রায় বিরল। তবে নিকাব ও বোরকা ইউরোপজুড়ে বিতর্কিত বিষয় হয়ে আছে। সমালোচকরা এগুলোকে লিঙ্গ বৈষম্যের প্রতীক বা নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখেন এবং সেগুলো নিষিদ্ধ করার পক্ষে মত প্রকাশ করেন। যদিও ইসলাম ধর্মে বোরকা ও নিকাব পরিধানে কড়াকড়ি নির্দেশনা বিদ্যমান।

সূত্র: আল-জাজিরা, ইউরোনিউজ, স্কাই নিউজ