ঢাকা রবিবার, ২৫ মে, ২০২৫

চাপ সামলাতে কঠোর বার্তা সরকারের

সেলিম আহমেদ
প্রকাশিত: মে ২৫, ২০২৫, ০২:০৪ এএম
ছবি : সংগৃহীত

নানা ইস্যুতে চরম চাপের মুখে পড়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সেই চাপের মুখে পড়ে পদত্যাগের কথাও ভেবেছিলেন খোদ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তবে পদত্যাগ করলে সংকট আরও বাড়তে পারে, সেই চিন্তা করে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন তিনি। 

গতকাল শনিবার উপদেষ্টা পরিষদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করছেন না। তবে চাপ সামাল দিতে কড়া বার্তা দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। এক বিবৃতিতে পরিষদ জানিয়েছে, সরকারের প্রধান তিনটি দায়িত্ব নির্বাচন, সংস্কার ও বিচার বিষয়ে বাধা সৃষ্টি করা হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

এ ছাড়া বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক পার্টির সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। আজ (রোববার) বিকেলে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সর্বদলীয় বৈঠকও করবেন প্রধান উপদেষ্টা। 

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গত বছরের ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকলেও ৯ মাসের মাথায় নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে সরকারের। 

তারা চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানালেও সরকার নির্বাচন নিয়ে কোনো রোডম্যাপ দেয়নি। এ ছাড়া প্রতিদিন বিভিন্ন মহলের দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন, অফিস-আদালত আর সড়ক অবরোধ সরকারের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। 

সর্বশেষ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনের শপথ ইস্যুতেও মুখোমুখি দাঁড়ায় সরকার। কয়েক উপদেষ্টা নিয়ে আপত্তি তুলে তাদের পদত্যাগ দাবি করে বিএনপি ও এনসিপি। শুধু রাজনৈতিক দল নয়, সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গেও বেড়েছে সরকারের দূরত্ব।

গত বুধবার সেনা কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেক বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাদের ‘অন্ধকারে’ রেখে। সেনাপ্রধান ওই বক্তব্যে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হওয়া উচিত বলে জানান। 

এ ছাড়া করিডর ইস্যু নিয়ে বেশ সমালোচনার মুখে পড়েছে সরকার। এসব সমালোচনার মুখে গত বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। তবে ওই দিন উপদেষ্টা পরিষদ ও সংশ্লিষ্ট অনেকেই প্রধান উপদেষ্টাকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত বিবেচনার অনুরোধ করেন।

এদিকে প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের আলোচনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে তৈরি হয় গুমোট পরিস্থিতি। কী হতে যাচ্ছে এ নিয়ে গত দুই দিন ধরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ছিল গোটা জাতি। এমন রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে গতকাল শনিবার দুপুরে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা। 

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষ হওয়ার পর অনির্ধারিত বৈঠক করা হয়। বৈঠক শেষে পরিকল্পনা উপেদষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা আমাদের সঙ্গে থাকছেন। উনি বলেননি পদত্যাগ করবেন। অন্য উপদেষ্টারাও থাকছেন। আমাদের যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, আমরা সে দায়িত্ব পালন করতে এসেছি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তার ওপর নির্ভর করছে দেশের ভবিষ্যৎ। এই দায়িত্ব ছেড়ে তো আমরা যেতে পারব না। উপদেষ্টার এই বক্তব্যের পর অনেকটা স্বস্তি মেলে সবার মাঝে। রাতে উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠকও স্থগিত করা হয়। 

এর পরিবর্তে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রধান উপদেষ্টা। এ ছাড়া গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আজ বিকেলে বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এসব দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই রিপোর্ট লেখার সময় অধিকাংশ রাজনৈতিক নেতাকে ফোন করে বৈঠকের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছেন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

এদিকে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, যদি পরাজিত শক্তির ইন্ধনে এবং বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সরকারের ওপর আরোপিত দায়িত্ব পালনকে অসম্ভব করে তোলা হয়, তাহলে সরকার সব কারণ জনসমক্ষে উত্থাপন করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। 

সরকারের স্বকীয়তা, সংস্কারের উদ্যোগ, বিচার প্রক্রিয়া, সুষ্ঠু নির্বাচন ও স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কর্মকাণ্ড অর্পিত দায়িত্ব পালন করাকে অসম্ভব করে তুললে সরকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

দায়িত্ব পালনে বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের অযৌক্তিক দাবিদাওয়া, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও এখতিয়ারবহির্ভূত বক্তব্য এবং কর্মসূচি দিয়ে যেভাবে স্বাভাবিক কাজের পরিবেশ বাধাগ্রস্ত করে তোলা হচ্ছে এবং জনমনে সংশয় ও সন্দেহ সৃষ্টি করা হচ্ছে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় বৈঠকে। দেশকে স্থিতিশীল রাখতে, নির্বাচন, বিচার ও সংস্কারকাজ এগিয়ে নিতে এবং চিরতরে এ দেশে স্বৈরাচারের আগমন প্রতিহত করতে বৃহত্তর ঐক্য প্রয়োজন বলে মনে করে উপদেষ্টা পরিষদ।

উপদেষ্টা পরিষদ আরও জানায়, শত বাধার মাঝেও গোষ্ঠীস্বার্থ উপেক্ষা করে অন্তর্বর্তী সরকার তার ওপর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। যদি পরাজিত শক্তির ইন্ধনে এবং বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সরকারের ওপর আরোপিত দায়িত্ব পালনকে অসম্ভব করে তোলা হয়, তবে সরকার সব কারণ জনসমক্ষে উত্থাপন করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।