ঢাকা বুধবার, ২১ মে, ২০২৫

‘ছেলের গলাকাটা ছবিটা দেখলে কলিজা আর মানে না’

মুরাদনগর (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মে ২০, ২০২৫, ০৭:২০ পিএম
নিহত ফারুক আহাম্মেদ ও মা ফাতেমা বেগম।

‘আমার ছেলের গলাকাটা ছবিটা দেখলে কলিজা আর মানে না, নিজেকে সামলাতে পারি না, খুনির পরিবারের সবাই তো ভালোই আছে কিন্তু আমি হইলাম ছেলে হারা। ’

এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে আর্তনাদ করেন কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী ফারুক আহাম্মেদ রাজুর মা ফাতেমা বেগম।

তিনি বলেন, ‘এখনো ছেলের খুনিদের ধরতে পারেনি পুলিশ। আমার কলিজার টুকরা ফারুকের খুনিরা কী শাস্তি পাবে না? মরার আগে কি তাদের শাস্তি দেখে যেতে পারব না?

পাওনা টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ব্যবসায়ী ফারুক আহাম্মেদ রাজুকে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে চাচাতো ভাই, ভগ্নিপতি ও বন্ধুরা। হত্যার পর শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে সেফটিক ট্যাংকে ফেলে দেয়। আর দেহ একটি মাঠে বালুচাপা দেয়। 

এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে আশেপাশের মানুষ বালুর মাঠে গিয়ে চাপা দেওয়া অবস্থায় মানুষের হাত দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধারের পর পাশের একটি সেফটিক ট্যাংক থেকে ব্যবসায়ী ফারুকের মাথা উদ্ধার করে। ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর রাতে এ ঘটনা ঘটে।

মুরাদনগর থানায় নিহতের বাবা গোলাম মোস্তফার করা মামলায় তৎকালীন তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আনোয়ার হোসেন তদন্ত শেষে ৪ আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দেন। 

দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে গত বছরের ১১ জুলাই আদালত মুরাদনগর উপজেলার উপজেলা নবীপুর পশ্চিম ইউনিয়নের উত্তর ত্রিশ গ্রামের সুরুজ মিয়ার ছেলে রফিক (২৫), ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মাধবপুর গ্রামের ইউনুছ মিয়ার ছেলে নাজমুল সিকদার(২০), দেবিদ্বার উপজেলার ভিংলাবাড়ী গ্রামের মালু মিয়ার ছেলে মান্নান (২৭), একই উপজেলার দক্ষিন ভিংলাবাড়ী গ্রামের রঞ্জু মিয়ার ছেলে সুমনকে (২৮) ফাঁসির রায় দেন।

নিহত ফারুকের প্রবাসী ভাই মাসুম রানা বলেন, ‘আমি ভাইহারা, ১২ বছর আগে ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এক বছর আগে আদালতের রায়ের পরও এখনো কোনো আসামি ধরতে পারেনি পুলিশ।’ 

তিনি বলেন, ‘আমি বর্তমান সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীর কাছে আকুল আবেদন জানাই। আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে ফাঁসির রায় কার্যকরের ব্যবস্থা করুন।’

অপরদিকে, কাপড় ব্যবসায়ী ফারুক আহাম্মেদ রাজুর হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে ফাঁসির রায় কার্যকরের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে এলাকাবাসী ও নিহতের স্বজনরা। 

মঙ্গলবার (২০ মে) দুপুরে উপজেলার নবীপুর পশ্চিম ইউনিয়নের উত্তর ত্রিশ গ্রামে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে তারা।

এ সময় বক্তব্য দেন নিহত ফারুকের মা ফাতেমা বেগম, বাবা মোস্তফা সরকার, ইয়াসমিন বেগম, আল আমিন, সুমন সরকার, জুলেখা বেগম।

মুরাদনগর থানার ওসি জাহিদুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমি অবগত ছিলাম না। ওয়ারেন্ট অফিসারের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’