ঢাকা রবিবার, ২৫ মে, ২০২৫

কিয়েভে রুশ বাহিনীর ভয়াবহ হামলা, দ্বিতীয় ধাপে মুক্ত ৬০০

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ২৪, ২০২৫, ১১:৪৮ পিএম
২৩ মে বিনিময়ের পর ইউক্রেনীয় বন্দিরা পতাকা উড়িয়ে উদযাপন করছেন। ছবি- সংগৃহীত

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে রাশিয়া, যেখানে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে শহরজুড়ে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। দেশজুড়ে চালানো হামলায় অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ইউক্রেনের সরকারি কর্তৃপক্ষ।

রাশিয়ার এই হামলার সময় ইউক্রেন ও রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সবচেয়ে বড় বন্দি বিনিময়ের দ্বিতীয় ধাপ সম্পন্ন করেছে।

ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানায়, রাশিয়া ১৪টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ২৫০টি আক্রমণাত্মক ড্রোন ছুঁড়েছে। এর মধ্যে কিয়েভ ছিল মূল লক্ষ্য। বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ২৪৫টি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে। তবুও রাজধানী কিয়েভসহ দিনিপ্রো, ওডেসা, খারকিভ, দোনেৎস্ক ও জাপোরিঝিয়া অঞ্চলে আঘাত হানে এসব অস্ত্র।

প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘পুরো ইউক্রেনের জন্য এটি ছিল একটি কঠিন রাত’। তিনি নিহত ও আহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিচকো জানান, হামলায় শহরজুড়ে আগুন লাগে ও ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে পড়ে। একাধিক আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রাতভর বিস্ফোরণ ও সাইরেনের শব্দে আতঙ্কিত শহরবাসী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেন।

ইউক্রেনের সংসদ সদস্য কিরা রুডিক সিএনএনকে জানান, তিনি সিঁড়ির নিচে লুকিয়ে রাত কাটিয়েছেন। বলেন, ‘এটা ছিল ভয়ংকর। মনে হচ্ছিল যেন আর্মাগেডন নেমে এসেছে। চারদিকে শুধু বিস্ফোরণ।’

বন্দি বিনিময়ের দ্বিতীয় ধাপে মুক্ত ৬০০ জন

এই ভয়াবহ রাতের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হয় ইউক্রেন-রাশিয়ার বন্দি বিনিময়ের দ্বিতীয় ধাপ, যেখানে উভয় পক্ষ থেকে ৬০০ জনের বেশি সেনা মুক্তি পান। ইউক্রেনের যুদ্ধবন্দি চিকিৎসা সমন্বয় কেন্দ্রের প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, নেড়ে করা মাথায় ইউক্রেনীয় পতাকা জড়িয়ে থাকা মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরছেন এবং প্রিয়জনদের সঙ্গে ফোনে কথা বলছেন।

শুক্রবার (২৩ মে) প্রথম ধাপে প্রায় ৮০০ বন্দি মুক্তি পেয়েছিলেন। সর্বমোট এক হাজার বন্দি বিনিময়ের এই চুক্তি ছিল, গত সপ্তাহে ইস্তানবুলে কিয়েভ ও মস্কোর প্রতিনিধিদের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকের একমাত্র বড় অর্জন। এটি ছিল ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরুর পর দুই দেশের মধ্যে প্রথম সরাসরি আলোচনা।

এক হৃদয়বিদারক মুহূর্তে ওলেনা নামের এক ইউক্রেনীয় নারী ছয় মাস পর তার স্বামী ইউরির সঙ্গে পুনর্মিলিত হন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভিডিওতে দেখা যায়, ওলেনা স্বামীকে খুঁজে পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে জড়িয়ে ধরছেন। তিনি বলেন, ‘এটা আমার জীবনের সেরা দিন’।

অপর পাশে রাশিয়ার পাল্টা দাবি

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, ইউক্রেন ৯৪টি ড্রোন রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠায়, যার বেশিরভাগই বেলগোরোদ ও ব্রিয়ানস্ক অঞ্চলের ওপরে ধ্বংস করা হয়। কুরস্ক, লিপেটস্ক, ভোরোনেজ ও তুলা অঞ্চলেও কিছু ড্রোন গুলো করে নামানো হয়েছে। তুলা অঞ্চলের গভর্নর দিমিত্রি মিলিয়ায়েভ জানিয়েছেন, সেখানে তিনজন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুইজন হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

‘শান্তি’ না, বরং নতুন হামলা

ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রিই সিবিহা বলেন, “ইস্তানবুল বৈঠকের এক সপ্তাহ কেটেছে, কিন্তু রাশিয়া এখনও তাদের ‘শান্তি স্মারকলিপি’ পাঠায়নি। বরং, তারা প্রাণঘাতী ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র পাঠাচ্ছে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর।”

এই বৈঠক মূলত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রস্তাবে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যা ইউরোপীয় দেশগুলোর পক্ষ থেকে মস্কোর প্রতি দেয়া যুদ্ধবিরতির আহ্বানের পর আসে। অনেক বিশ্লেষকের মতে, এটি ছিল ক্রেমলিনের কৌশলগত সময়ক্ষেপণ ও বিভ্রান্তি তৈরির প্রচেষ্টা।

ইউক্রেন ও তার মিত্ররা রাশিয়ার কাছ থেকে অবিলম্বে ও শর্তহীন যুদ্ধবিরতির দাবি জানালেও বৈঠকে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি।