সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেছেন, দেশের ভাবমূর্তি উন্নয়নে প্রবাসীরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ করণীয় হচ্ছে আত্মশুদ্ধি। নিজেকে নিজে আইনকানুনসহ প্রত্যেকটা বিষয়ে শুধরানো গেলে অনেকাংশে অপরাধ কমে আসবে।
বাংলাদেশ প্রেসক্লাব ইউএই'র উদ্যোগে ও বাংলাদেশ দূতাবাস আবুধাবির সহযোগিতায় আরব আমিরাতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উন্নয়নে প্রবাসীদের করণীয় বিষয়ে গোল টেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি।
শনিবার (৩০ আগস্ট) শারজাহস্থ বাংলাদেশ সমিতির হলরুমে প্রেসক্লাবের সভাপতি মামুনুর রশীদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মোরশেদ আলমের পরিচালনায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রদূত বলেন, তারা যেন তাদের কর্মক্ষেত্রে সুন্দর আচরণ ও সম্মানের সাথে কাজ করে দেশের সম্মানকে অক্ষুণ্ণ রাখেন। তিনি বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ করণীয় হচ্ছে আত্মশুদ্ধি। নিজেকে নিজে আইনকানুনসহ প্রত্যেকটা বিষয়ে শুধরানো গেলে অনেকাংশে অপরাধ কমে আসবে। পাশাপাশি ভিসা জটিলতা, নারী কর্মীদের সেফহোম, সার্টিফিকেট জালিয়াতি, ভিসা প্রতারণা ও অনৈতিক কার্যকলাপ রোধসহ আলোচনায় উত্থাপিত সমস্যার সমাধান ও বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন তিনি।
এ ছাড়াও রাষ্ট্রদূত আমিরাত সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে অনুকূল কিংবা প্রতিকূল সব পরিস্থিতিতে প্রবাসীদের আইন কানুন মেনে চলার অনুরোধ জানান। দেশের কল্যাণে সময়োপযোগী এ আয়োজনের জন্য তিনি প্রেসক্লাবের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং পাশে থাকার আশা পোষণ করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল দুবাই এর কনসাল জেনারেল মুহাম্মদ রাশেদুজ্জামান।
সংগঠনের সহ-সম্পাদক মুহাম্মদ ইসমাঈলের কোরআন তেলোয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া বৈঠকে মূল বিষয়বস্তু নিয়ে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সহ-সভাপতি এস এম মোদাচ্ছের শাহ।
এরপর ২ ঘণ্টাব্যাপি মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন আমিরাতের সাতটি প্রদেশ থেকে আগত সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অঙ্গনের কর্মকর্তারা। আলোচনায় উঠে আসে প্রবাসীদের ভিসা সংক্রান্ত জটিলতা ও সমাধানকল্পে নানা উদ্যোগ, নারী কর্মীদের জন্য সেফহোম প্রতিষ্ঠা, সার্টিফিকেট জালিয়াতি ও ফেইক ডকুমেন্টস বন্ধ করা, অপরাধ কমাতে সচেতনতা মূলক ক্যাম্পেইন ও কর্মশালা, ইভেন্টের নামে নারী কর্মীদের এনে অনৈতিক কাজে জড়িত করা, ভিসা প্রতারণায় যুক্ত দালালদের শাস্তির আওতায় আনা, আমিরাতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং আইন মেনে চলার মাধ্যমে প্রবাসীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার মতো অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
মুক্ত আলোচনা শেষে তার সারমর্ম উপস্থাপন করেন সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাম্মদ ইশতিয়াক আসিফ।
বিশেষ অতিথি কনসাল জেনারেল মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ প্রেসক্লাব ইউএই'র এ উদ্যোগ আমিরাতে দেশের ভাবমূর্তি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, ব্যক্তি কিংবা দল নয়, সবার আগে দেশ। তাই দেশের ইতিবাচক দিক ও অগ্রগতিকে তথা বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে হবে। তিনি প্রবাসীদের প্রতি আমিরাতের স্থানীয় জনগণ ও বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের প্রতি ভালোবাসা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার আহ্বান জানান। পাশাপাশি বাংলাদেশ কমিউনিটির মাধ্যমে দুদেশের নীতিনির্ধারকদের নিয়ে জাতীয় অনুষ্ঠানগুলো বড় পরিসরে আয়োজন করা গেলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও মজবুত হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল শাহীনের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত গোল টেবিল বৈঠকে বিভিন্ন উপপরিষদের দায়িত্ব পালন করেন অর্থ সম্পাদক মুহাম্মদ শাহজাহান, নির্বাহী সদস্য মুহাম্মদ মেহেদী রুবেল, আরিফ সিকদার বাপ্পি, সদস্য শামসুল হক, মোশাররফ হোসেন, মুহাম্মদ আশিক ইসলাম রেজা, মুহাম্মদ আবু শাহাদাত সায়েম, আবদুল্লাহ আল রানা ও আরফাতুল ইসলামসহ আরও অনেকে।
এ ছাড়াও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিমান বাংলাদেশ, জনতা ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
সবশেষে সমাপনী বক্তব্যে প্রেসক্লাবের সভাপতি মামুনুর রশীদ গোল টেবিল বৈঠকে ব্যাপক উপস্থিতির জন্য বাংলাদেশ কমিউনিটির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি প্রত্যাশা করেন, এই আয়োজন যেন শুধু এই কক্ষেই সীমাবদ্ধ না থেকে আমিরাতের অন্যান্য প্রদেশেও সাধারণ প্রবাসীদের নিয়ে অব্যাহত থাকে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্রেসক্লাব ইউএই প্রবাসী বাংলাদেশিদের সুখ-দুঃখের সারথি হয়ে কাজ করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। পাশাপাশি সুন্দর আয়োজনের জন্য আমিরাত সরকার অনুমতি প্রদান করায় কৃতজ্ঞতা জানান এবং সবাইকে আইন মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে বৈঠকের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
