বাংলাদেশকে ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ বা ‘রেড লিস্ট’-এ অন্তর্ভুক্ত করার পর থেকে দেশটির নাগরিকদের জন্য ভিসা অনুমোদনের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমিয়ে দিয়েছে কানাডা। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক মাসে ভিসা অনুমোদনের হার ৬১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এ পরিস্থিতি অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষা পরামর্শকদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে।
একসময় কানাডায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের অন্যতম প্রধান উৎস ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এখন ভারতের মতোই কঠোর সীমাবদ্ধতার মুখে পড়েছে দেশটি। কানাডা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বাংলাদেশ, ভারত ও নাইজেরিয়া থেকে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন বেড়েছে, যার অনেকগুলোই সন্দেহজনক। এ ছাড়া ভিসার জন্য জমা দেওয়া জাল নথি এবং প্রক্রিয়াগত ত্রুটির কারণে বাংলাদেশকে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
রেগুলেটেড কানাডিয়ান ইমিগ্রেশন কনসালট্যান্ট (আইআরবি) মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে কানাডার রেড লিস্টে রয়েছে। অযোগ্য বা ঝুঁকিপূর্ণ আবেদনকারীদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাছাই করার জন্য সম্প্রতি নিয়ম পরিবর্তন করা হয়েছে। উদ্দেশ্য হলো প্রকাশ্যে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা না করেও প্রবেশের মানদণ্ড কঠোর করা।’
এই সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়েছে সব ধরনের ভিসা ক্যাটাগরিতে। হাজার হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী কানাডায় পড়াশোনার সুযোগ হারাচ্ছেন—বিশেষ করে সেপ্টেম্বর সেশনে, যা আন্তর্জাতিক ভর্তি মৌসুমের শীর্ষ সময়। পর্যটন ও কর্মসংস্থান ভিসার ক্ষেত্রেও অনুমোদনের হার হঠাৎ করেই কমে গেছে। অনেক আবেদনকারী জানিয়েছেন, সুস্পষ্ট কারণ ছাড়াই তাদের ভিসা বাতিল করা হয়েছে।
শিক্ষা পরামর্শক মাসুমুল কবির বলেন, ‘অনেক শিক্ষার্থী এখন অনিশ্চয়তায় আছেন। তবে কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। আশা করা যায়, শিগগিরই ইতিবাচক অগ্রগতি হবে।’
কানাডার অভিবাসন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশি নাগরিকদের আশ্রয়ের আবেদন বেড়েছে, যার বেশিরভাগই সন্দেহজনক। জাল নথি ও প্রক্রিয়াগত ভুলও আবেদনকারীদের সামগ্রিক বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষুণ্ন করেছে।
তথ্যমতে, ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৫ লাখ পর্যটন ভিসা ইস্যু করা হয়েছে, যা ২০২৩ সালের ১৮ লাখের তুলনায় কম। সবচেয়ে বেশি ভিসা কমেছে সেইসব দেশ থেকে, যেগুলোকে উচ্চ রাজনৈতিক আশ্রয় দাবির উৎস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে ভারত এ বিষয়ে কানাডার সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা শুরু করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশকেও দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে কানাডার সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে, যাতে নাগরিকদের জন্য ভিসা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা যায়।